২১ এ মসনদ কার? ঠিক করবে করোনা।

কিন্তু আদেও কি সেসব কাজে আসবে শেষ অবধি? ওয়াকিবহাল মহলের মতে কিন্তু ২০২১ সালে বাংলার মসনদে বসবে কে তা ঠিক করবে করোনায়। প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার, করোনা পরিস্থিতিতে রেশন দুর্নীতি, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে উদাসীনতা এইসব নিয়ে কার্যত খানিকটা চাপে তৃণমূল, বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। নানান সময়ে মুখ খুলেছেন বিরোধীরা। ধৈর্য্য হারাচ্ছে জনতা, এমনটা দাবি করছেন বিরোধী নেতারা।

যদিও, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা। ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লকডাউনের জন্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের দেরিতে হলেও ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজ্যগুলি। মিলেছে কেন্দ্রের অনুমতিও। এমনকি রেল মৌখিকভাবে, পরিবহনের ৮৫ শতাংশ টাকা দিতে রাজি হয়েছে রেলমন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বারবার বিজেপির তরফে, এমনকি কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীও অভিযোগ করেছেন কেন্দ্র চাইলেও শ্রমিক ফেরাতে নারাজ মমতা। বারবার বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। অমিত শাহের চিঠি। বিতর্ক। উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও, রাজ্যের তরফে, ইতিমধ্যেই কিছু ট্রেনের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এই ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাম সংগঠন সিটু, টিকিটের খরচ দিতে চেয়েছে কংগ্রেস।

অভিযোগ উঠেছে, কখনও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে, কখনও চরম উদাসীনতা দিয়ে এড়িয়ে গেছে রাজ্য। সরব হয়েছেন বিরোধী সহ একাংশের শ্রমিকদের পরিবার পরিজন। প্রসঙ্গত, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ৪ নম্বরে।

স্বাভাবিকভাবেই, এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ভোট ব্যাংক বেশ কয়েক লক্ষ। আসন্ন নির্বাচনে, এই ভোট ব্যাংক কর দিকে যাবে? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, যা হাতছাড়া হতে পারে বর্তমান সরকারের। যদিও একটা অংশের তরফে এই দাবি করা হলেও, আরেকটি অংশ বলছেন অন্য কথা।

এরপরেই তালিকায় রয়েছে গ্রাম বাংলার রেশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ। করোনা পরিস্থিতিতে গরিবের মুখের গ্রাস হচ্ছে চুরি, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাঁদের তরফে, বারবার আঙুল উঠছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদেরদের দিকে।

একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, একটি সমীক্ষায় করোনা মোকাবিলায় যেখানে অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দা তাদের মুখ্যমন্ত্রীকে বিপুল ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ভরসা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন !! যা কার্যত অশনি সংকেত বয়ে আনছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু বিপরীত মতও রয়েছে।

এই করোনা পরিস্থিতিতে পুরভোট স্থগিত হওয়ায় কলকাতা পৌরসভার প্রশাসক হয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। এইরকম মহামারী পরিস্থিতিতেও ক্ষমতা বজায় রাখার বিষয়ে জনমানসে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছেন বিরোধীরা।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল করোনা মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসকের ভূমিকা। অভিযোগ, প্রথমদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ছিল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করা থেকে শুরু করে রাস্তায় নেমে মানুষকে সামাজিক দূরত্ব শেখানো সব কিছুই ছিল বেশ ইতিবাচক। সর্বদল বৈঠকে সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের প্রশংসা করে জানিয়ে দিয়েছিল তারা করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশে আছে এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করবে তাদের মত করে। এমনকি রাজ্য বিজেপি কার্যত কুর্নিশ জানিয়েছিল তাঁর উদ্যোগকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল তাঁকে।

কিন্তু ক্রমে করোনা রুগীর সংখ্যা যত বেড়েছে সামনে এসেছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, সবচেয়ে কম টেস্ট এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার এই রাজ্যে। ‘নাইসেড’ এর প্রধান একটা সময় জানিয়েছেন, তাঁরা টেস্ট করতে চাইলেও রাজ্য সরকারের তরফে সঠিক পদক্ষেপ আসছে না। এসেছে মৃতের সংখ্যা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ। বিভিন্ন জায়গায় অশনাক্ত লাশ ফেলে আসার ভিডিও, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে অব্যবস্থার ভিডিও সামনে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে। একটা সময় করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত চরমে পৌঁছায়। এমনকি অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় পরিদর্শক কমিটিকে সাহায্য করেনি তৃণমূল সরকার।

লকডাউনে এমনিই কাজ নেই যুবক যুবতীদের হাতে। অভিযোগ, তার উপর বন্ধ হয়েছে যুবশ্রী প্রকল্পের টাকা। যা নিয়ে, একটা অংশের যুবক যুবতীদের মধ্যে ছড়িয়েছে অসন্তোষ। প্রসঙ্গত এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে, নথিভুক্ত যুবক যুবতীর সংখ্যা কয়েক লাখ। যা ভোট ব্যাংকের নিরিখে মোটেই হেলাফেলার নয়। সব মিলিয়ে রাজ্যের একটা বড় অংশের অসন্তোষের বাতাবরনে পড়তে পারে শাসক দল, যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে, এইরকম বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আবার সেটা বুমেরাং হয়ে ভোট বাড়তে পারে তাঁদের, এমনও বলছেন অনেকেই। আদতে কী হবে? তারজন্য অপেক্ষা ২০২১!

________________________________________

১১.০৫.২০২০
কলকাতা