ঝড়ে বিধ্বস্ত বইপাড়াকে আবার সাজিয়ে তুলছে শহর কলকাতা?

কিছুই কোথাও যদি নেই / তবুও কজন আছি বাকি  /
আয় আরো হাতে হাত রেখে / আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ।।

শঙ্খ ঘোষের কবিতার এই লাইনগুলি আম্ফান বিধ্বস্ত বইপাড়ার লড়াইয়ে আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমাদের নতুনভাবে প্রত্যাশা জোগায়, মনে করিয়ে দেয়,লড়াই এত সহজে থামেনা। এখনো অনেকটা পথ চলা বাকী।

২০ তারিখ কলকাতা ও উপকূলবর্তী দুই চব্বিশ পরগণার উপর ধেয়ে আসা সুপারসাইক্লোনিক ঝড়ে কলেজস্ট্রীটের প্রায় ৯৫% দোকান বিপর্যস্ত হয়। দীর্ঘ লকডাউনের জের ও আমফানের প্রভাবে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের এই অসংগঠিত ব্যবসাক্ষেত্র- বই-ব্যবসা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে।ছোট দোকানদার, ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণই সর্বাধিক।

এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মোকাবিলা করতে মিত্র অ্যান্ড ঘোষ পাবলিশিং হাউসের অন্যতম কর্ণধার ইন্দ্রাণী মিত্র একটি ক্রাউড ফাইন্ডিং এর উদ্যোগ নেন। সাড়াও মেলে সহনাগরিকদের কাছ থেকে। এখনো পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ক্রাউড ফাইন্ডিং এর মাধ্যমে জোগাড় করা গেছে। প্রয়োজন আরো কয়েক লক্ষ। ইন্দ্রাণী মিত্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “২৫ লক্ষ অর্থ সংগ্রহের একটি লক্ষ্যমাত্রা রেখে উদ্যোগ টা শুরু করা হয়, প্রায় অর্ধেকের বেশী টাকা উঠে এসেছে। এখনো ১৩ দিন বাকী রয়েছে ক্রাউড ফাইন্ডিং এর”।

ইন্দ্রাণী মিত্র

সংগ্রহ করা এই অর্থের মধ্যে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পৌঁছে গেছে ৬৪ জনের কাছে, আরো ৩ লক্ষ টাকা স্যাংশান হয়ে গেছে , ৩ দিনে ১০ জন করে ৩০ জনের কাছে এই অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে। মূলত ছোট প্রকাশক, ছোট বই বিক্রেতাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে, এই সংগৃহীত অর্থ। তাদের তরফ থেকেও জানানো হচ্ছে, এই অর্থ তারা ক্ষতিগ্রস্থ দোকান সারাতে কিংবা নতুন বইয়ের স্টক তুলতে কাজে লাগাতে পারবে। এমনিই সব তথ্য উঠে এলো ইন্দ্রাণী মিত্রের সাথে কথা বলে।

বইপাড়ার পাশে দাঁড়ানোর এই অভিনব উদ্যোগে সামিল হতে এগিয়ে এসেছেন লক্ষ লক্ষ সহনাগরিক, এই উদ্যোগ কে সমর্থন জানিয়ে ইতিমধ্যে শশী থারুর টুইট করেছেন, লেখা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, তাতে সাড়াও মিলেছে ভালো।রাষ্ট্র মুখ ঘুরিয়ে থাকলেও, দেশের অর্থনীতি ছোট পুঁজির ব্যবসাকে মাথা তুলে না দাঁড়াতে দিলেও, ঝড়ের যাবতীয় বিপর্যয় সামলেও সব ক্ষত ও সব ক্ষতি ভুলে গিয়ে বইপাড়া আবার চেনা ছন্দে ফিরবে। ফিরবেই। তার জন্য এখনো প্রয়োজন বিপুল অর্থ সাহায্য।

________________________________________

রূপসা দাস, কলকাতা