পুণ্যভূমি জয়রামবাটি। বাঁকুড়ার এই গ্রামটিতে প্রায় ১৬৭ বছর আগে ১৮৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন মা সারদা। যিনি ছিলেন সবার মা, জগতের মা। তিনি শুধু শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সহধর্মিণী হিসেবেই নয়, তিনি আপন আলোকে ছিলেন উজ্জ্বল।
এই জয়রামবাটিতেই তাঁর জন্ম তথা বিবাহপূর্বের জীবন কেটেছে। তাই এটি কেবল ভ্রমনকেন্দ্র নয়, এটি একটি তীর্থস্থান। এ জায়গা বাঁকুড়ার লাল ধূলি মেখে পবিত্র হওয়ার জায়গা।
দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাতৃমন্দির, শ্রী শ্রী মায়ের পুরাতন বাটী, পূর্ণপুকুর, সুন্দরনারায়ন ধর্মঠাকুরের মন্দির ইত্যাদি। সারাদা দেবীর বাসভবনটি বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের অধীনস্থ। বাসভবনটি একটি মঠে রূপান্তরিত করা হয়েছে যার নাম “মাতৃমন্দির মঠ, জয়রামবাটি”। যার ভিতরে রয়েছে দর্শনীয় জায়গাগুলি।
মাতৃমন্দির হল মঠের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মায়ের মন্দির। যে স্থানে সারদা দেবীর জন্ম সেই স্থানটির উপর এই মন্দির নির্মিত হয়। স্বামী সারদানন্দ ১৯২৩ সালে মাতৃমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে পূজিত হন শ্বেতপাথরের মায়ের মূর্তি। তার তলায় দেবীর দেহাবশেষ রক্ষিত আছে। মাতৃমন্দিরের চূড়ায় বাংলায় “মা” শব্দটি লেখা একটি পতাকা সবসময় ওড়ে।
এরপর আকর্ষণ হল মায়ের পুরাতন বাটী। এটি সারদা দেবীর পুরোনো বাড়ি। বহুবছর এখানে বাস করেন তিনি।

মাতৃমন্দির মঠে অবস্থিত সারদা মায়ের নতুন বাড়ি। এখানেই তিনি জীবদ্দশায় জগৎধাত্রী দেবী রূপে পূজিত হতেন।
- একধাক্কায় আক্রান্ত সংখ্যা ছাড়াল পৌনে দু’লক্ষ, মৃত্যু ৭,৭৪৫ জনের।
- ব্রিজের উপরেই বিয়ে! এবার নতুন রেকর্ড গড়লেন দক্ষিণী দম্পত্তি!
মাতৃমন্দিরের উল্টোদিকে রয়েছে পূর্ণপুকুর। এই পুকুরের জল মা ব্যবহার করতেন। তাই এই পুকুরটি একটি পবিত্র পুকুর।পূর্ণপুকুরের পাশে একটি ছোট ঘরে সারদা দেবীর গৃহদেবতা সুন্দরনারায়ন ধর্মঠাকুর পূজিত হন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল সিংহবাহিনী মন্দির, যাত্রাসিদ্ধিরায় মন্দির, মায়ের ঘাট এবং দামোদর নদ।
জয়রামবাটিতে মূল উপজীব্য হল, এখানে সন্ধ্যা আরতি। গ্রাম্য লাল মাটির পরিবেশে সন্ধ্যেতে যখন সমবেত কণ্ঠে “খণ্ডন ভব্ বন্ধন জগ্” গাওয়া হয় গমগম করে চারিপাশ। একটি মঙ্গলবার্তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। যা আমাদের অন্তরাত্মার মধ্যে অন্যরকম অনুরণন তুলতে বাধ্য। নিয়ে যায় অন্য এক স্বর্গীয় জগতে। না জয়রামবাটিতে নেই ধ্যান গম্ভীর পাহাড়, সুউচ্চ হিমালয় কিংবা সমুদ্রের উচ্ছাস। নিতান্ত সাদামাটা গ্রাম্য পরিবেশ। ততোধিক সাদামাটা সুন্দর মানুষজন।
কিন্তু এখানে আছে অপার শান্তি। যা বর্তমানে নেটযুগে বিরল হয়ে যাচ্ছে। নিজের রাগ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা, মোহ সব মায়ের পায়ে সমর্পণ করে দিয়ে তাঁর আশ্রয়ে শান্তি পাওয়া যায়। তাই আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হলে আসতেই হবে জয়রামবাটি।
স্বাতী সেনাপতি
২৬.০৫.২০২০