নার্স মায়ের দুগ্ধেই কান্না থামল সদ্যজাতের! এক অন্য নজির গড়লেন উমা!

মায়ের আবার ভেদ হয়! পৃথিবীর সব মা এক! হ্যাঁ, করোনা আবহে যখন একের পর এক মা ফের আক্রান্ত! যখন সন্তানহারা মায়ের হাহাকারে দিন কাটছে কোটি কোটি মানুষের! ঠিক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়েই এক অন্য মায়ের নজির স্থাপন করলেন এক করোনা যোদ্ধা! করোনা শত্রু নিধনের জন্য একেবারে সামনের সারিতে যাঁদের বাস, সেই স্বাস্থ্যকর্মী এক অন্য মায়ের পরশেই ক্ষুধা নিবারণ হল একরত্তির! সদ্যজাত শিশুর কান্না থামাতে আদরের স্পর্শ প্রদান করলেন তিনিই!

উমা অধিকারী।

এই বাংলারই আরজি.কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগে নার্স হিসেবে কর্মরত উমা অধিকারী। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা উমা। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই হাসপাতালে পরিসেবা দিয়ে আসছেন। রবিবার অর্থাৎ এদিনও কর্তব্য পালন করছিলেন। কিন্তু কাজের সময়েই হঠাৎ একটি সদ্যজাত শিশুর কান্না ওলট-পালট করে দেয় সবটা! চারিদিকে অনেক মা রয়েছেন। কিন্তু শিশুর ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য এগোতে মানা! করোনা ভাইরাসের ভয়ে, সামাজিক দূরত্ব পালনে এখন বদ্ধপরিকর সকলেই! কারণ, ইতিমধ্যেই অনেক প্রসূতিই আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। তাহলে উপায়? কেউ এগিয়ে না আসার পরে, উপায় বের করেন উমা নিজেই। সদ্য মা হয়েছেন তিনিও। পুত্র সন্তান শ্রীআংশুর মা, তাই আর দেরি করেননি, ওই কান্নারত শিশুকে পান করান মাতৃদুগ্ধ! এক অন্য মায়ের স্পর্শেই কান্না থামে ওই শিশুর!

প্রসঙ্গত, এই ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে, মূলত স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ সহ একটি ফেসবুক পোস্ট করেন তাঁর স্বামী, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু মাইতি। মুহূর্তের মধ্যেই সেই পোস্ট ভাইরাল হয়। কুর্ণিশ জানান হাজার হাজার নেটদুনিয়ার নিবাসীরা। চিকিৎসা সংক্রান্ত পেশায় যুক্ত মানুষ সহ, কয়েকহাজার শেয়ার হয় এই পোস্ট। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে, উমার উদ্যোগকে বাহবা দেন সকলেই। কিন্তু উমা নিজে এরপর কী বলছেন? সৌমিক রায় নামের এক ফেসবুক প্রোফাইলে এই পোস্ট শেয়ার করার পর, সেখানে উমা অধিকারী নামে ফেসবুক প্রোফাইল থেকে আক্ষেপের সুরে কমেন্ট করে জানান, ”আর বলবেন না ডাক্তার, আমার স্বামী এই পোস্টটা করেছেন শুধুমাত্র আমরা কীভাবে tormented হচ্ছি সেই জন্য, যদিও আমার জানা ছিল না। আজ সকালে আমার অথরিটি আমাকে জাস্ট ইনসাল্ট করল যে, আমি নাকি চালাকি করে ভাইরাল হব বলে ইচ্ছা করে, আনএথিকাল এটা পোস্ট করেছি.. বিশ্বাস করুন আর হয়তো এরকম মানবিকতা হবে না আমার।” এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যদিও প্রায় সকলেই তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কাজ যে সঠিক তা মনে করিয়েছেন কেউ কেউ। তাঁদের অনেকেই বলছেন, একজন এতটা লড়াই করার পরেও এত সুন্দর একটা মানবিক দৃষ্টান্ত রাখলেন, যাঁকে কুর্ণিশ না জানিয়ে এমন মন্তব্য লজ্জার!


০১.০৬.২০২০

কলকাতা

ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক (ER Shantanu Maity)