‘সোনাগাছি’। এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী।
প্রায় ১১০০০ যৌনকর্মী কাজ করেন এখানে।
কিন্তু এখন চলছে লকডাউন। এই লকডাউনের বাজারে কেমন আছেন তাঁরা। কিভাবে কাটছে দিন এই করোনা পরিস্থিতিতে। এইসব নিয়েই আজকে আমাদের পঞ্চম এবং অন্তিম পর্ব।__________________________________________
উত্তর কলকাতার একটি জায়গা। সরু গলি, ২ পাশে সারি দিয়ে মুখোমুখি একচালা ঘরগুলো। সেখানেই কোনরকমে মাথা গুঁজে দিন গুজরান করেন তাঁরা। ধর্মের বিভেদ নেই। দিনমানে এনাদের নাম নেওয়া বারণ, কিন্তু জৈবিক তাড়না মেটানোর উপায় তাঁরাই। এদের ভোটার কার্ডের নাম বললে অবশ্য কেউ চিনবেনা, সবাই ডাকে পোশাকি নামেই। এতক্ষন যে জায়গাটার কথা বললাম সেটির চলতি নাম সোনাগাছি। কেমন আছেন তাঁরা? খোঁজ নিয়েছিলাম আমরা।
এই ব্যাপারে খবরওয়ালা টিভি.কমে’র পক্ষ থেকে তাঁদের যোগাযোগ করা হলে একজন যৌনকর্মী জানান, আগে নানান ধরণের মানুষের আনাগোনা লেগে থাকত ওই মহল্লায়। এমনকি ভিন রাজ্যের বহু মানুষ কলকাতা এলেও আসতেন তাঁদের কাছে। কিন্তু লকডাউনের জন্যে সব বন্ধ। পুরো মহল্লা খাঁ খাঁ করছে। দৈবাৎ কেউ যদি এসে খোঁজখবর করছেন, তাঁদেরকেও পত্রপাঠ বিদায় দিতে হচ্ছে। কারণটা করোনা। তাঁদের প্রত্যেকেরই প্রানের ভয় আছে। নাম, পরিচয়হীন এহেন লোকদের থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও খুব বেশি। আর একবার সংক্রমণ শুরু হলে ঘিঞ্জি এলাকায় তা আগুনের মত ছড়িয়ে পড়বে। উপায় নেই বাইরে গিয়ে পয়সা উপার্জনেরও। কারণ লকডাউনে প্রায় সব যানবাহন বন্ধ। কাজেই পেটে টান, হাত ও প্রায় খালি। সারাদিনের পরিশ্রমের পর সমস্ত খরচ বাঁচিয়ে যা জমাতেন সেই জমানো টাকাতেও হাত পড়ছে।
সরকারের তরফ থেকে কোনও সাহায্য মিলেছে কিনা? জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, রেশন মিলেছে বার কয়েক। কিন্তু এখনও অবধি মেলেনি কোনও আর্থিক সাহায্য। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় ক্লাব, পার্টি থেকে মিলেছে চাল, ডাল সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু জীবনযাপনের জন্যে শুধু এটুকুই যথেষ্ট নয়। দিতে পারছেন না বাড়ি ভাড়া। ছোট ছোট সন্তানদের পড়াশুনাও বন্ধ। চাই অর্থ। কিন্তু উপার্জনের সব রাস্তাই বন্ধ।
প্রতিবছর তাঁরা একটি দুর্গাপূজা করেন। নিজেদের মত করে দেবী বন্দনায় ব্রতী হন তাঁরা। অভাব, অনটন, দুঃখ কষ্ট ভুলে ৪ দিন মেতে থাকেন তাঁরা। এবার দুর্গাপূজা হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে একরাশ হতাশা ফুটে ওঠে তাঁর কণ্ঠে। তিনি জানান সম্ভবত এবারে পুজো হবেনা। এছাড়াও লকডাউনের জন্যে বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবছর ধরে চলে আসা ‘সবলা মেলা’।
প্রসঙ্গত, বৃদ্ধা এবং বয়স্ক মহিলাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কারণ তাঁদের চাহিদা কম, তাই উপার্জনও কম। কবে ঠিক হবে পরিস্থিতি কোনো দিশা নেই। তবে লকডাউন মিটলেও আরও বহুদিন যে মানুষের আনাগোনা হবে না তা বলাই বাহুল্য। কারণ বিভিন্ন যৌনরোগ সংক্রমণের আঁতুর-ঘর হিসেবে পরিচিত মহল্লায় পা রাখতে দ্বিধাবোধ থাকবেই। তাই, সব মিলিয়ে স্বস্তিতে নেই ‘নিশিপদ্ম’রা।
_____________________________
রিপোর্ট: স্বাতী সেনাপতি
ছবি সৌজন্যে: ইন্টারনেট