দরিদ্রের বাঁচার রসদ যোগাচ্ছেন চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম! একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন বিস্তারিত।

#Exclusive সাক্ষাৎকারে ডা: ফুয়াদ হালিম!

ভালো থাকার বাড়ি‘তেই আজ তাঁর বাস। নিঃস্বার্থ সেবাতেই চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম আজ অনন্য! কিন্তু কেন? কী বলছেন তিনি? সবটা জানব, তবে তাঁর আগে কী এই ‘ভালো থাকার বাড়ি’?


৫০ টাকার ডাক্তার, তিনি গরিবের ডাক্তার, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। এত ‘ছোট টাকা’র অঙ্কের আড়ালে নেওয়া তাঁর উদ্যোগের কিন্তু একটাই পরিচয়, একটাই উদ্দেশ্য, ‘মানবিকতা’,  চমকে উঠলেন!  হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। নিজের নাম বা নিজের কাজ কোনটাই প্রচার করার দৌড়ে তিনি নামেননি আর পাঁচটা ডাক্তারের মতন। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে সাধারণ ও মূলত গরিব মানুষদের ডায়ালিসিস করার ব্যবস্থা করেছেন নিজস্ব ডায়ালিসিস সেন্টারে। পারিপার্শ্বিক অন্য সব পরিচয় পাশে রেখে ধ্যান-জ্ঞান  এখন ডাক্তারি ও মানুষের সেবা করা। অবশ্য অন্য একটি পরিচয় আছে তাঁর, তিনি বাম নেতা। গত লোকসভা নির্বাচনে হেভিওয়েট ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান গরিবের ডাক্তার। অবশ্য তাতে ইতি টানতে পারেনি তাঁর মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও সেবা করা। তাঁর আদর্শই হয়তো টেনে নিয়ে গেছে তাঁকে মানুষের সেবা করার দিকে। কোনো রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। আজ এই মানুষের মুখে মুখেই তাঁর প্রচার। তথাকথিত প্রচার তিনি কোনদিনও চাননি।


খবরওয়ালা টিভি – করোনার কারণে তো বিভিন্ন হাসপাতালে ওপিডি বন্ধ, হাসপাতালে ডায়ালিসিস হচ্ছেই না প্রায়, আপনার পদক্ষেপ সম্বন্ধে সবাই অবগত আপনি বা আপনার টিম এই উদ্যোগ কবে থেকে নিয়েছেন?  

ডা: হালিম- আমাদের সংস্থা কাজ শুরু করেছে ২০০৯ সালের ৮ আগস্ট থেকে।

খবরওয়ালা টিভি- কেন মনে হয়েছে যে এই উদ্যোগ নেওয়া দরকার? 

ডা: হালিম – আমাদের এই সংস্থার মূল লক্ষ্য ছিল গরীব-দুঃস্থ মানুষদের ডায়ালিসিস কম খরচে করা। আমরা শুরু করেছিলাম ডায়ালিসিস ৫০০ টাকা দিয়ে সেখান থেকে আমরা কমিয়ে সেটাকে ৪৫০ টাকা করলাম, তারপর ৪০০ তারপর ৩৫০ টাকায় ডায়ালিসিস করছিলাম যখন মার্চ মাসে প্রথম লকডাউনের ঘোষণা হয়।

খবরওয়ালা টিভি – লকডাউন এর মধ্যে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এই পরিস্থিতিতে কেন মনে হল মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে ডায়ালিসিস করবেন? 

ডা: হালিম – প্রথম লকডাউন ঘোষণার পরের দিন অর্থাৎ ২৫ শে মার্চ আমাদের পেশেন্টরা একটা সমস্যার কথা আমাদেরকে জানান। লকডাউনের ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং গরীব মানুষরা যারা বাস-ট্রেন বা মেট্রো ব্যবহার করেন এগুলি সবটাই বন্ধ হয়ে যায় ফলে তাদেরকে গাড়ি করে আসতে হয় সেটা তাদের ওপর সাংঘাতিকভাবে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে এর ফলে আমরা ২৫ তারিখে সিদ্ধান্ত নিই এবং দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ থেকে আমরা ৫০ টাকা করে দিই ডায়ালিসিস বাবদ খরচ হিসাবে।

খবরওয়ালা টিভি- এত দফার লকডাউন এই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে এই পরিস্থিতিতে আর কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই নিয়ে? 

ডা: হালিম- প্রত্যেকটা লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর মানে প্রথম লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর ৫০ টাকা করি ডায়ালাইসিস তারপর দ্বিতীয় লকডাউন ঘোষণা হয়েছে এরপর আবার আমরা সিদ্ধান্ত নিই ৫০ টাকা আমরা বহাল রাখব তারপর তৃতীয় ও চতুর্থ লকডাউনেও তাই। কেন্দ্রীয় সরকার দুদিন আগেই পঞ্চম লকডাউন ঘোষণা করেন, ৩০ শে জুন অবধি  থাকবে এই লকডাউন কিন্তু পরিবর্তিত কিছুতে ছাড় থাকবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৩০ জুন অবধি ডায়ালিসিস ৫০ টাকাই বহাল থাকবে।

খবরওয়ালা টিভি – এই পদক্ষেপ আপনার কত দিনের?

ড. হালিম: দীর্ঘ ১২ বছরের এই পথ…..

খবরওয়ালা টিভি – আপনি বা আপনাদের টিম কোন কোন এলাকায় রোগী দেখেন? 

ডা: হালিম–  আমাদের পেশেন্টরা দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসে,  নির্দিষ্ট কোন এলাকার ব্যাপার নেই উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,  মুর্শিদাবাদ,  হাওড়া,  হুগলি, মেদিনীপুর,  বর্ধমান থেকে নিয়মিত লোক আসে আমাদের কাছে।

খবরওয়ালা টিভি- আপনাদের কি কোন নির্দিষ্ট ডায়ালিসিস সেন্টার আছে? 

ডা: হালিম – ডায়ালিসিস সেন্টার আমাদের নিজস্ব, এখানেই সব রোগীরা আসেন ।

খবরওয়ালা টিভি – ডায়ালাইসিস করতে  তো অনেক টাকা খরচ,  সে দিক থেকে দাঁড়িয়ে আপনি মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে ডায়ালিসিস করাচ্ছেন এটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? এটা কি এতটাই সহজাত? 

ডা: হালিম–  আমাদের এই নিয়ে দুটো দৃষ্টিভঙ্গি আছে। এক, ডায়ালাইসিস সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো আমরা রাখি না যেমন আমাদের সেন্টারে এসি নেই আমাদের সংস্থায় কোন লিফট  নেই বাড়তি যেগুলোর সাথে ডায়ালিসিসের কোন যোগাযোগ নেই আমাদের সেই খরচগুলো রাখি না। ডায়ালিসিস করার আনুষঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় খরচ সবটাই আমরা ছেটে বাদ দিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয়তঃ আমাদের যেটা সাপ্লাই লাইন সেটা খুবই ভালো তাই আমাদের মার্কেটিং যে কষ্ট দিতে হয় সেটা খুবই রিজেনেবল।

খবরওয়ালা টিভি: আপনাদের সংস্থা আপনারা  কিভাবে চালান?

ডা: হালিম: আমাদের সংস্থায় কোন বাড়তি বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কস্ট আমরা রাখি না।

খবরওয়ালা টিভি: পশ্চিমবঙ্গে অনেক হাসপাতাল আছে যেখানে আপনার এই পন্থা বাস্তবায়িত করা হলে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি? 

ডা: হালিম – আমরা যে মডেল নিয়ে কাজ করি সেই মডেল আমাদের কাছে কেউ শিখে যদি তাঁদের নিজেদের জেলায় সেটাকে কার্যকরী করতে চায় আমরা সেই প্রশিক্ষণটা দিতে রাজি আছি।

খবরওয়ালা টিভি – এইরকম প্রশিক্ষণ কি কাউকে দিয়েছেন এখনও পর্যন্ত? 

ডা: হালিম – হ্যাঁ আমাদের এখানে একাধিকজন,  ভিনরাজ্য রাজস্থান থেকে লোক এসেছিল তাঁদেরকে আমরা আমাদের মডেল সম্বন্ধে বুঝিয়েছি ঝাড়খন্ড থেকে একটি সংস্থা এসে আমাদের কাছে স্টাডি করে গেছে এবং কলকাতার মধ্যে একাধিক সংগঠন আমাদের মডেলটা দেখে তাঁদের মতন করে কাজ চালু করেছে। এই বারো বছরে অনেক সংস্থা আমাদের কাছে এসেছে আমাদের অভিজ্ঞতাটা আমরা শেয়ার করতে পেরেছি, আমরা বলব না আমরা শিখিয়েছি আমাদের কাছে অনেক লোকজন এসেছেন আমাদের মডেল তাঁদেরকে দেখিয়েছি এই দেখে তাঁরা তাঁদের মতন করে পথ চলা শুরু করেছেন।

খবরওয়ালা টিভি: প্রাইভেট যে হাসপাতালগুলো যেখানে অনেক টাকা খরচ ডায়ালিসিস করতে হয়, সেখান থেকে কখনও কি কোন হাসপাতাল চেয়েছে আপনাদের এই মডেলটাকে নিয়ে কাজ করতে? 

ডা: হালিম– আমরা তো খুব লো-প্রোফাইল  মেইনটেইন করি এই চার পাঁচ  দিনে সবাই জানতে পেরেছে আমাদের সংস্থার ব্যাপারে,  আমাদের কাছে যারা ডায়ালিসিস করাতে আসেন তাদের মুখে মুখেই  আমাদের সংস্থার প্রচার হয়েছে। এইভাবে কিছু সংবাদ মাধ্যম জানতে পেরেছে আপনারাও জানতে পেরেছেন। এককথায় মানুষটির বর্ণনা দিতে গেলে বলতেই হয় যে ‘ডাক্তার’শব্দের যথার্থতা বুঝি এনার থেকেই শেখা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই অনন্য নজির সত্যি প্রাসঙ্গিক।


০২.০৬.২০২০

কলকাতা

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: রুমকি সরকার, প্রতিনিধি, খবরওয়ালাটিভি.কম।