দেশজুড়ে লকডাউন, করোনার থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ! কিন্তু এবার সেই করোনার কোপ পড়ল জামাইয়ের ষষ্ঠীতে, থুড়ি জামাইষ্ঠীতেও। জামাইবাবু আদরে খেলেন পাকা আম, হরেকরকম ফল, মাছ-মাংস-মিষ্টি। কিন্তু শাশুড়ির রান্না করা খাবার, এভাবে ১৪ দিন ধরে পেটপুরে ভোজন করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি মেয়ে-জামাই।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে মালদহের চাঁচল ১ নং ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে করোনার হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। এই খবর চাউর হতেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয় গোটা চাঁচল এলাকায়।
কারণ, এই ব্লক এলাকায় এই আক্রান্তের ঘটনা প্রথম। আর এই ঘটনার ফাঁদে পড়ে শ্বশুর বাড়ীতেই আটকে গেলেন জামাই! পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢিল ছোড়া দুরত্বে অবস্থিত গ্রাম, কলিগ্রাম জিপির এক গ্রামে এই বাড়ির মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ফাঁকা মাঠ পেরিয়েই মেয়ে-জামাই বৃহস্পতিবার জামাইষ্ঠীতে সংক্রমনকারীর বাড়িতে আসেন। সংক্রমিত ব্যক্তির বাড়িতেই পালিত হয় জামাইষষ্ঠী! তবে শনিবার গ্রামের বাড়ী ফিরে যাওয়ার কথা ছিল জামাইয়ের। আর যাওয়া হলো না।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারে সংক্রমন কারীর বোন-জামাই-ভাগ্না,ভাগ্নি, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও মা-বাবা সহ আক্রান্ত বাদে ০৮ জন সদস্য আছে। পুরো বাড়িটি কনটেন্টমেন জোন করা হয়েছে এবং ১৪ দিন কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চাঁচল থানার আই.সি সুকুমার ঘোষ। সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ শনিবার কনটেন্টমেনজনে থাকা ওই পরিবারের সকলেরই সোয়াব টেস্ট বা লালারস পরীক্ষা করা হবে।
এদিন আক্রান্ত হরিশ্চন্দ্রপুর আইসোলেশনে পাঠানোও হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
আক্রান্ত ব্যক্তি ফোন মারফত আমাদের জানান, ২০ মে হায়দ্রাবাদ থেকে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে লড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরেছিলেন এবং মালদহেই লালারস পরীক্ষা হয়।
: আক্রান্ত ওই ব্যক্তি
দাবি, ওইদিনই রাতে গ্রামে এসে স্থানীয় স্কুলের কোয়ারেনন্টিন সেন্টারে নিজেকে বন্দী করেন তিনি। টানা সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর ২৭ মে বুধবার নিজগৃহের ফিরে যান। আর বাড়ি গিয়েই একমাত্র বোন-জামাইকে প্রতিবারের মতো জামাইষ্ঠীতে আমন্ত্রণও করেন। এই পালনের পরেই বিপদ আসে। তারপরেই, বোন, তাঁর স্বামী অর্থাৎ ভগ্নিপতি সহ পরিবারের বাকিথাকা সবাইকে কনটেন্টমেনজোনে ফেললেন আক্রান্ত ওই ব্যক্তি!
এই ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পপি দাস। তিনি জানান, “ওই পরিবারের আটজন সদস্য এখন তাঁদের বাড়িতে কনটেন্টমেন্টজোনে। তাঁদের নিজেদের খাবারের কোনো খামতি যাতে না থাকে তাও আমরা দেখছি।”
৩০.০৫.২০২০
হরিশ্চন্দ্রপুর, হরিশ্চন্দ্রপুর
মোঃ নাজিম আক্তার
প্রতীকী চিত্র