Exclusive: ভোটের দেওয়াল ‘দখল’ করেছেন চা-কাকু, এবার সচেতনতার লিখনেও ‘হিরো’ মৃদুল দেব।

বারাসাত: সম্প্রতি ভাইরাল চা কাকু অর্থাৎ মৃদুল দেব সংবাদমাধ্যমে আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ‘এভাবে চাইনি। শুধু আমার ছেলের একটা কাজ চাই, তাহলেই আমার শান্তি!’ স্থানীয় সাংসদকে ভিডিও কলেও একই কথা বলেছেন তিনি। চোখ ছলছল অবস্থায় তাঁর স্ত্রী জানিয়েছিলেন, অনেক কথা শুনতে হচ্ছে, অনেকেই বলছেন রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেলাম!’

নাহ্! তাঁরা রাতারাতি বড়লোক হননি। অথবা একরাতেই অট্টালিকা তৈরি করে ফেলতে পারেননি। শুধুই সবকিছুর মধ্যেও বলেছেন, ‘সকলে ঘরে থাকুন, বাড়িতে বসেই চা খান!’ এই চা কাকুই এখন পথ দেখাচ্ছেন জনতাকে! ভোটের সময় যে দেওয়াল লিখন হত, সেই দেওয়াল দখল করেছেন, এই চা কাকু! ভোটের স্লোগান যেখানে লেখা থাকত সেখানেই এখন, চা কাকুর কথা লেখা। এমনই অভিনব উদ্যোগ নিতে দেখা গেল বারাসাতের একাধিক যুবক যুবতীদের। তাঁকে ঘিরেই চলল মানুষকে সাহায্যের কাজও।

প্রসঙ্গত, অদৃষ্টের দানে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা। উপচে পড়ছে খাবার। সহানুভূতি, সাহায্য পাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু একবার ভেবে দেখবেন কী? কিছুই তাঁর ইচ্ছায় কিনা! সবটাই আচমকা ঘটেছে, এখনও কটূক্তি সহ্য করেও মৃদুল দেব বলে চলেছেন, সকলেই ঘরে থাকুন। কারণ, তিনি ঘরে বসেই চা খাবেন। সংবাদমাধ্যম, একজন ইউটিউবার.. বিতর্ক থামেনি তাঁকে নিয়ে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঝড় আরও বৃদ্ধি হয়েছে উত্তরোত্তর। এই নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে দেওয়া দেওয়াল লিখনেই আজ সবার আগে চা কাকু। সেখানেই জ্বলজ্বল করছে চা কাকুর নাম! তাঁর ছবি! বারাসাতের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ তিনি হিরো!

তাঁর মাধ্যমেই চলছে করোনা শত্রু নিধনের প্রচার। যাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল ভাইরাল মায়াজাল! তাঁকেই দেওয়াল চিত্রে ব্যবহার করছেন, ওই একদল যুবক যুবতী। তৈরি হয়েছে কমপক্ষে ২৫০ জনের গ্রুপ। যাঁদের সঙ্গে রয়েছেন, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া জগতের অনেকেই। তাঁদের উদ্যোগেই, সচেতনতা প্রচারের উপজীব্য করে তোলা হয়েছে চা কাকুকে। সুন্দর কিছুকথার মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে সচেতনতা। চা কাকুর মিষ্টি বক্তব্যগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে অসাধারণ ভাবনাতে। একাধিক দেওয়াল লেখন তো বটেই! এই চিত্রের প্রচার চলছে বিভিন্ন মাধ্যমেও। যার দ্বারা আকৃষ্ট হচ্ছেন বহু মানুষ। সবাই-ই বলছেন, সত্যিই খুব ভালো উদ্যোগ।

কিন্তু শুধুই কী এই ভাবনা নিয়ে প্রচার? কী করছে এই ‘ইয়ং জেনারেশন অফ্ বারাসাত’! তাঁরা জানাচ্ছেন, ”প্রথমে আমরা ৫ জন ছিলাম, এখন ২৫০-র বেশি যুবক-যুবতী এই গ্রুপে যোগ দিয়েছেন। আমাদের মূল কাজ, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে বারাসাতের বিস্তীর্ণ এলাকায় সার্ভে করা। তারপর, আসলে যাঁরা অসহায়, যাঁদের যে সাহায্য প্রয়োজন, তাঁদের সেটা পৌঁছনো হয়।” কিন্তু চা-কাকুর দেওয়াল লিখন কেন? তিনি বলছেন, ”দেখুন, চা-কাকু আজ দারুণ পরিচিত মানুষ। তাঁর মুখ সকলেই চেনেন, পজিটিভ ভাবে তাঁকে ব্যবহার করে জনতার মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতা প্রসার ঘটলে, সেটা দারুণ ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে হয়।”

সামগ্রিকভাবে, আজ চা-কাকু সত্যিই ভাইরাল। তিনি আজ পরিচিত। তাঁকে ঘিরেই যেমন কটাক্ষের ভিড় জমেছে, বিপরীতভাবেই তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভালকিছুও। বারাসাতের এই গ্রুপটিও জনসেবার পাশাপাশি, চা-কাকুকে ঢাল করে এগিয়ে চলেছে,

যে উদ্যোগের প্রশংসায় সাধারণ জনতাও। অনেকেই বলছেন, ”নির্বাচনের প্রচারে নেতাদের জয়দেহনি দিই, এখন বলব সবাই সচেতন হোক, আর চা-কাকুর জয় হোক!”

১২.০৪.২০২০

বারাসাত

উত্তর ২৪ পরগনা

(শুধুমাত্র কভার ছবিটি সংগৃহীত। বাকি সমস্ত ছবি নিজস্ব।)