পাল্লা দিয়ে করোনা বাড়লেও কমছে মানুষের ভয়: কি বলছে মনস্তত্ব?

এইতো মাসকয়েক আগের কথা। ভারতে তখন সবে একজন দুজন করে করোনা রুগী ধরা পড়ছেন। ভয়ে আমরা সবাই ইস্টনাম জপ করছিলাম ঘরের কোণে। ইতালি, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের খবর দেখে ক্ষণে ক্ষণে আঁতকে ওঠা থেকে শুরু করে ভয়ে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা কিছুই বাদ ছিলোনা। বারবার হাত ধোয়া, একটু গলা খুসখুস করলেই ভাবনা আসতো করোনা নয়তো!?

প্রায় আড়াই মাস লকডাউন শেষে আনলক হতে শুরু করেছে দেশ। করোনার সংখ্যা লাফিয়ে বাড়লেও, বাড়ির পাশে করোনা এলেও ভয়টা যেন কমেই গেছে খানিক।কিন্তু এই ক’মাসে কি এমন ঘটল যে বদলে গেল বাঙালি তথা ভারতীয়? গনহিস্টিরিয়া কেটে গিয়ে হঠাৎ কি করোনার ভয়কে জয় করে ফেলল মানুষ নাকি ভয় পেতে পেতে ভয় পাওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে গেল মানুষ? এব্যাপারে কনসালট্যান্ট সাইকোলজিস্ট ডঃ শ্রীমতি বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এই ভয় না পাওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে একটি পজিটিভ মনস্তত্ত্ব। বারবার মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম এমনকি সরকার প্রচার করে চলেছে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনা হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় সরকারি তথ্যতে দেখা যাচ্ছে ভারতবর্ষে করোনা রোগে সুস্থতার হার প্রায় ৫০%। প্রায় টিভি চ্যানেলগুলিতে ডাক্তারবাবুরা এসে মানুষকে সচেতন করছেন, স্বাস্থ্যবিধির পাঠ দিচ্ছেন।

এছাড়া যারা সুস্থ হচ্ছেন তাঁরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসে তাঁদের সুস্থতার গল্প শোনাচ্ছেন। কারো এলাকায় করোনা রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বাড়ছে আত্মবিশ্বাস। সব মিলিয়ে অবচেতন মনে থাকা ভয় ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। তবে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভয়ের থেকেও বেশি কাজ করছে অসচেতনতা এবং গাফিলতি। তাঁদের অবচেতনে কাজ করছে একটা নিয়ম ভাঙার মানসিকতা। ‘এইতো মাস্ক ছাড়া দিব্যি আমি সুস্থ আছি, দিব্যি এতদিন কাটিয়ে দিলাম বাজারে ঘুরে বেড়িয়ে কই কিছু তো হল না। অবচেতনে কাজ করা এই ব্যাপারটাই তাঁদের ভবলেশহীন করে তুলছে।

করোনা বাড়লেও সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা নিয়ে জোকস, মিম, মস্করা অব্যাহত। এর কারণ কি? কোথাও গিয়ে কি আমরা অসংবেদনশীল আচরণ করছি? এর প্রশ্নে তিনি জানান যাঁরা এই ধরণের মিম শেয়ার করেছেন বা বানাচ্ছেন ভালো ভাবে খতিয়ে দেখলে জানা যাবে তিনি কখনোই এই ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে যাননি। কখনও হসপিটালে গিয়ে বা খুব কাছ থেকে দেখেননি এই রোগ বা রুগীকে। তাই তাঁরা এখনও পারছেন হাসি মস্করা করতে। তবে সব মিলিয়ে ভয় কমছে মানুষের। করোনাকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে এটা যেমন জানিয়েছেন ‘হু’ প্রধান তেমনি জানিয়েছেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তাই ধীরে ধীরে বদল হচ্ছে মানসিকতার। করোনাকে নিয়ে বাঁচতে হবে, আরও সচেতন হতে হবে- মানসিক প্রস্তুতি চলছে সবার মধ্যেই।

Swati Senapati, Kolkata