বিশ্বের দরবারে বাঙালি খাদ্যের ভৌগোলিক স্বীকৃতি

ভৌগোলিক স্বীকৃতি বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশান(জি. আই) বলতে বোঝায় কোনো পণ্যকে সেই জায়গার নামের সঙ্গে জুড়ে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। অর্থাৎ কোনও পণ্য যদি সেই জায়গায় সৃষ্টি হয় এবং তার গুণগত মান অন্যান্য জায়গার থেকে উৎকৃষ্ট হয়, তবে তার জি. আই পাবে সেই বিশেষ জায়গা।

এই জি.আই এর ধারণাটা সবার প্রথম সামনে আসে যখন বাংলার চিরন্তন মিষ্টি রসগোল্লার স্বীকৃতি চেয়ে বসে বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশা। তবে শুধু রসগোল্লাই নয় আরও বহু খাদ্য পণ্যের জি.আই রয়েছে বাংলার ঝুলিতে।

এক্ষেত্রে সবার প্রথম যে জিনিসটির জন্য বাংলা জি.আই পেয়েছিল তা হল ভুবনমোহিনী সুগন্ধী দার্জিলিং চা। দার্জিলিং চায়ের স্বাদে গন্ধে রূপে মজেনি এমন চা প্রেমী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর সারা বিশ্বে। এখনও সেরা চায়ের নাম উঠলেই সবার প্রথমে মাথায় আসে দার্জিলিংয়ের চা।

দার্জিলিং চায়ের কৌলিন্য ঠিক কতটা তা বোঝা যায় যখন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বর্তমান অধিকারী রানী এলিজাবেথকে দার্জিলিং চা উপহার দেন!! এবং রানীর সান্ধ্য চা পানের তালিকায় পছন্দের তালিকায় থাকে দার্জিলিং চা।

এতো গেল চা চরিত। বাঙালির গ্রীস্মবকাশের প্রধান বিলাসিতা হল আম। বাংলার আম যে তাই জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করবে তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে বাংলার ২টি আম পেয়েছে স্বীকৃতি। ফজলি এবং হিমসাগরে কেবল বাংলার রসনা তৃপ্তিই হয়নি, জুটেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

ভেতো বাঙালি বলে বাঙালির বদনাম বা সুনাম ২ই আছে। তাই বাংলার ঐতিহ্য মেনে বাংলার ২টি চাল পেয়েছে জি.আই তকমা।

ঈশ্বরের ভোগ নিবেদনে প্রসিদ্ধ গোবিন্দভোগ ভোগ চাল। যা বাংলার গৌরব। অপরটি মূলত দিনাজপুরে উৎপন্ন হওয়া তুলাইপঞ্জি চাল। যা স্বাদে গন্ধে অন্যান্য চালকে কয়েক গোল দেবে। প্রসঙ্গত ২০১২ সালে এই চাল বাংলা থেকে পাড়ি দিয়েছিল সুদূর লন্ডনে !! লন্ডন অলিম্পিকে খাদ্য উৎসবে যোগদান করতে !

এবার আসা যাক মিষ্টির প্রসঙ্গে। বাংলা মানেই মিষ্টি। মিষ্টি মানেই বাংলা। এহেন বাংলার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কিছু মিষ্টির স্বীকৃতি। মিষ্টি বললেই যা প্রথম মাথায় আসে তা হল রসগোল্লা। এহেন রসগোল্লার স্বীকৃতি চেয়ে বসে ওড়িশা। যদিও দড়ি টানাটানির খেলায় শেষ হাসি হাসে বাংলা। রসগোল্লার উপর একছত্র অধিকার হয় বাংলার।

এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে বর্ধমানের সিতাভোগ এবং মিহিদানা এবং জয়নগরের মোয়া। শীতকালের অন্যতম ডেলিকেসি। সুগন্ধী নলেন গুড় সঙ্গে কনকচূড় ধানের খই এবং ক্ষীরের মিশ্রনে তৈরি এই মোয়ার স্বাদ বিশ্ব বন্দিত।

এছাড়া আরও বহু খাদ্য পণ্য রয়েছে জি আই পাওয়ার দৌড়ে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জনাইয়ের ২০০ বছরের পুরনো বিখ্যাত মিষ্টি মনোহরা, নদিয়ার সরপুরিয়া সরভাজা, ল্যাংচা।