৫০ সংস্থার ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায়ের ‘আশা ছাড়ল’ আরবিআই, সাধারণ মানুষের ইএমআই মুকুব নয় কেন?

একটি আরটিআই এবং তার প্রেক্ষিতে ঝড় বইয়ে দেওয়ার মত উত্তর। যা এক লহমায় বিতর্ক সৃষ্টি করল দেশজুড়ে। করোনা আবহেই আবার দেশ উত্তপ্ত হল, এক অভিনব পরিস্থিতি নিয়ে।

রিজার্ভ ব্যাংকের এর কাছে সমাজকর্মী সাকেত গোখলে তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা মেটাননি বা না মিটিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে এমন ঋণখেলাপি সংস্থার সূলুকসন্ধান। তাতেই সামনে আসে বিস্ফোরক তথ্য! সেই উত্তরে জানা যায়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে

ঋণ মেটায়নি এমন সংস্থার সংখ্যা ৫০ টি এবং মোট ৬৮,৬০৭ কোটি টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ‘রাইট অফ্’ করে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে মেহুল চোকসি, বিজম মালিয়ার মতো ব্যক্তির, সংস্থার নাম। প্রসঙ্গত, রাইট অফ্ বা write off এর অর্থ ঋণ মকুব নয়, ওই টাকা আদায়ের সম্ভাবনা কম।

ওই তথ্য সামনে আসতেই সুর চড়ায় বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘সরকার এতদিন সত্যি গোপন করার চেষ্টা করেছে। তিনি বারবার ঋণখেলাপিদের নামের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান সংসদে কিন্তু অর্থমন্ত্রী কোনও উত্তর দেননি।’

এই তথ্য যখন সামনে আসে তখন করোনা পরিস্থিতিতে ধুঁকছে গোটা দেশ। ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক কাঠামো। লক্ষলক্ষ মানুষ কর্মহীন। এরকম সময়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উঠে আসছে একটি প্রশ্ন। যদি ঋণখেলাপিদের অনাদায়ী ঋণ প্রায় মকুব করা যেতে পারে, সেই সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা শুরু হতে থাকে, তবে সাধারণ মানুষকে ঋণ, ইএমআই থেকে কেন কেন মুক্তি দেওয়া হবেনা? বিশেষত যখন কাজ হারিয়ে গৃহবন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষ। এবং কার্যত তারা অসহায়। এইরকম প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

পূর্বে অর্থমন্ত্রক লকডাউনের বাজারে সাধারণ মানুষকে সুরাহা করে দিতে ব্যাংকগুলিকে আর্জি জানিয়েছিল যাতে, এই অর্থবর্ষে ৩ মাসের জন্য ঋণ পরিশোধ বা গাড়ি বাড়ি কিংবা ব্যক্তিগত ইএমআই গুলি স্থগিত রাখা যায়। প্রাথমিক ভাবে এটিতে সাধারণ মানুষের সুরাহা হবে মনে করলেও পরে ব্যাংকগুলি যে তথ্য দেয় তাতে বোঝা যায় আদতে বেশ অসুবিধার মুখে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে। চক্রবৃদ্ধি সুদের নিয়মে গুনতে হবে বেশি সংখ্যায় ইএমআই। দিতে হবে বাড়তি টাকা। কাজেই অর্থমন্ত্রকের এই প্রস্তাব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

এরপরেই কংগ্রেস সরাসরি আঙুল তোলে মোদী সরকারের দিকে। তাঁদের প্রশ্ন, মোদী সরকার সাধারণ মানুষকে কি সুরাহা দিচ্ছে নাকি তাঁদের উপর বাড়তি বোঝা চাপাচ্ছে? একদিকে বারবার স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানো হচ্ছে, অন্যদিকে ইএমআই স্থগিত রাখার নামে বাড়তি সুদ আদায় করা হচ্ছে। কেন সুদ মকুব করা হচ্ছেনা।

গাড়ি বাড়ির ঋণ বাদ দিলেও একদম প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ, যাঁরা সাধারণত ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ নেন। একেই লকডাউনের জেরে তাঁদের কর্মহীনতা, অপরদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ। এই জোড়া ফলায় কার্যত অসহায় মানুষগুলি। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে যদি তথাকথিত ধনকুবেরদের ঋণ আদায়ের ব্যাপারে সরকার উদাসীন হতে পারে, তবে গরীব মানুষদের জন্য কেন ঋণ মকুব নয়?

________________________________

২৯.০৪.২০২০

স্পেশাল রিপোর্ট: স্বাতী সেনাপতি

(Edited by Editorial Desk)

২৯.০৪.২০২০