হাসি দুঃখ হুল্লোড়ে তুমিই থাক পাশে…

“জানিস তো আজ মন টা বড্ড খারাপ কিছুই যেনো ভালো লাগছে না, তো কি একটা গান হোক অরিজিৎ সিং এর, আবার, কিছু ভালো লাগছে না কি হিন্দি গান শুনিস সারা দিন , ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত কি গায় না নাকি আরে দাড়াও না, আরে তোর তো জন্মদিন একটু পার্টির মত গান চালা “- এই এত কিছু চাহিদা যে তার কলতানে মুখরিত করে বারংবার প্রমাণ করে ছোট থেকেই উচ্চতার শিখরে পৌঁছতে গেলে শুধু পরিশ্রম ই যথেষ্ট তাঁর জন্মদিন।

মুর্শিদাবাদ এর জিয়াগঞ্জের র সেই ছোট্ট ছেলেটি যাকে কেউ চিনতো না একদিন আজ তাঁর গানেই মঃমঃ করে সমস্ত ভারতীয়ের হৃদয়ের কণা। ২০০৭ থেকেই তাঁর জার্নি শুরু হয় সঙ্গীতের পথে। তার সঙ্গীত সাধনার বাতি সেদিন ই জ্বলে উঠেছিল গুরুকুল এ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে ১৮ বছর বয়সে। পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালি কখনো কয়লার মধ্যে থেকে হীরে র সন্ধান পেতে ভুল করেন না তার প্রমাণ আজও অর্ধেক মানুষের মিউজিক গ্যালারি।

“ক্যাহাতে খুদা নে ইস যাহা ম্যা সভি কে লিয়ে, কিসি না কো বানাহা হেই কিসী কে লিয়ে”- শুরু এখান থেকে তখনই পরিস্থিতি বুঝিয়েছে যে ওই জায়গা টা কার হতে পারে! তার পর ২০১৩ সালে ” চাহু ম্যা আনা” ও “তুমি হি হো”- এই দিয়েই জায়গা করে নিয়েছে যুবসমাজের প্রতি। ২০১৩ তেই সিং জী “মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস”- এ “ফির লে আয়া দিল” এবং “দুয়া” উপস্থাপনার জন্য পুরষ্কারের আসন্ন পুরুষ কণ্ঠশিল্পীর হয়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

শিং শঙ্কর-এহসান-লয়, বিশাল-শেখর, মিথুন, মন্টি শর্মা এবং প্রীতমের মতো সংগীত পরিচালক যেমন সংগীত প্রোগ্রামার এবং সংগীত প্রযোজক হিসাবে তাঁর প্রাথমিক সংগীত জীবনের একটি অংশ ব্যয় করেছিলেন। অন্যান্য সুরকারদের সাথে কাজ করার সময় তিনি কণ্ঠগুলি এবং কোরাস বিভাগগুলি তদারকি করেছিলেন, তবে প্রীতমের সাথে কাজ করার সময় তিনি নিজেই সংগীত প্রযোজনা এবং প্রোগ্রামিং শুরু করেছিলেন।

২০২০ তে জানুয়ারী মাসে নিজেই তাঁর 10 টি গান প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গান চার্টবাস্টার “শায়াদ” এবং “হান মাইন গালাত”, যা প্রেম আজ কাল চলচ্চিত্রের প্রীতমের সংগীতায়োজন; গুলজার রচিত শঙ্কর-এহসান-লয় রচিত “খুলনে দো” এবং “সব ঝুলস গেয়া” সহ ছাপকের শিরোনাম ট্র্যাক; স্ট্রিট ডান্সার থ্রিডি চলচ্চিত্রের “দুয়া কারো” বোহেমিয়ার পাশাপাশি গাওয়া হয়েছে; “চল ঘর চলন” মিঠুনের সুরক্ষিত মালং চলচ্চিত্রের একটি গান; তিনি আমাজন অরিজিনালস ভুলে যাওয়া সেনাবাহিনীর “আজাদী কে লিয়ে” এবং “মেরে ওয়াতান” গান গেয়েছেন।
তাঁর সম্মানের ঝুলিতে অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মান এ পরিপূর্ণ তবে এখনও শ্রোতা দের তৃপ্ত তা কত দিন যাচ্ছে যেনো আরো বাড়ছে। হয়তো গায়ক এর ভোকাল কর্ড এর ই কামাল এটা। কখনো এসএসই লাইভ অ্যাওয়ার্ডস ২০১৬ এর ওয়েম্বলির দ্য এসএসই এরেনায়, বিশ্বব্যাপী শীর্ষ দশ শিল্পীদের মধ্যে একজন , আবার, চারটি মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, ছয় ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস, একটি স্টারডস্ট অ্যাওয়ার্ড, তিনটি আইএফএ অ্যাওয়ার্ড, দুটি জি সিনেমা অ্যাওয়ার্ড এবং দুটি স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড, এছাড়া, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার সবই তাঁর ঘরে সাজানো। এছাড়া, ২০১৩ তে তুম হি হো র জন্য ১০ টা মনোনয়ন ৯ টা পুরষ্কার,”মুসকুরানে” গানের জন্য আইবিএন লাইভের পাঠকগণ তাঁকে অনলাইনে সেরা পুরুষ গায়ক হিসাবে ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ৬৬ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে, তিনি পদ্মাবত থেকে “বিনতে দিল” এর জন্য সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়কের সাথে ভূষিত হয়েছিলেন।কলঙ্ক” গানের জন্য সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়কের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার পেয়েছেন অরিজিৎ সিংহকে কালঙ্ক চলচ্চিত্র থেকে তিনি একটানা পাঁচবার এবং সামগ্রিকভাবে ছয়বার রেকর্ডের জন্য পুরষ্কার জিতেছিলেন।
কখনো তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন সমাজের কল্যাণে “The light” এর মাধ্যমে। যে এনজিও কাজ করেদারিদ্র্য সীমার (বিপিএল) সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে। তাঁর এনজিও রক্তের ব্যাঙ্ক ক্যাম্পের মতো কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত (যথাযথভাবে সমস্ত রক্তের রেকর্ড এবং রেকর্ড এবং ফটোগ্রাফ), বস্ত্র বিতরণ, বই, স্টেশনারি, একটি বিশাল স্কেল এবং মৌসুমি মানুষের গ্রাউন্ড কার্যক্রমের উপর। সত্যিই এ এক শুধু শিল্পীর কথা নয়, বরং অসংখ্য মানুষের হার্টথ্রব এর কথা, যিনি সুখে ,দুঃখ, আনন্দ হুল্লোড় কি একা থাকার সঙ্গী। কখনো ‘ এ বাতান’, কখনো আমার পরান যাহা চায়’, আবার এ দিল হাই মুশকিল এসব অসাধারণ গানে ভরিয়ে রাখে সমস্ত মানুষের মন। কখনো গজল, কখনো ক্ল্যাসিকাল, কখনো পপ, হারমোনিয়াম, তবলা র কাছে গলা র স্বর স্তব্দ করে সব। সেদিন গুড়ুকুল এর ১৮ স্থানে হেরে যাওয়া ছেলেটা আজ প্রমাণ করে,” শতবার ভাঙনে গিটারের টুংটাং, শতবার আঘাতে কণ্ঠের বাঁধন হিন কলতান”!
শিল্পা চ্যাটার্জী
২৫/০৪/২০২০