অর্পিতা বসু,কলকাতা
১৪.০১.২০২০
ভারতীয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম সেরা লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী।মহাশ্বেতা দেবীকে শুধুমাত্র একজন কথাসাহিত্যিক বললে কমই বলা হবে,তিনি যেমন তাঁর কলমের মাধ্যমে সমাজের বর্বরতাকে তুলে আনতেন অপরদিকে তিনি একজন মনেপ্রাণে কমিউনিস্ট ও সাংবাদিক ছিলেন।
মহাশ্বেতা দেবী তাঁর সাহিত্যজীবনে ১০০টির ও বেশী উপন্যাস ও ২০টির বেশী ছোট গল্প রচনা করেছিলেন।তাঁর কলমে কথাসাহিত্যে বর্বর শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী জমিদার,উচ্চপদস্থ কর্মচারী,করদাতাদের দ্বারা শোষিত উপজাতি ও নীচুজাতি অস্পৃশ্যদের সমাজের জীবনযাত্রার ছবি চিত্রায়িত করতেন।
ঝাঁসির রানীর জীবনী অবলম্বনে ঝাঁসির রানী নামে তাঁর প্রথম উপন্যাস ১৯৫6 সালে প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসটির জন্য স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য ও লোক সংগীত রেকর্ড করতে তিনি ঝাঁসি অঞ্চল সফর করেছিলেন। মহাশ্বেতা দেবী অন্যান্য লেখক লেখিকার থেকে ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি আদিবাসী,দলিত,ও প্রান্তিক মানুষদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন,তাদের জন্য তথাকথিত শিক্ষিত শাসকদের সাথে লড়াই করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। বাংলা ছাড়াও বিহার,মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়ের বহু আদিবাসী গ্রামে বহুবছর থেকেছেন এই সাহিত্যিক তার পাশাপাশি তাদের কাছে নানাবিধ শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর সাহিত্যের চরিত্রে ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে। নিজের লেখা গল্পগুলিকে তিনি তাঁর দেশের মানুষের গল্প বলে আখ্যা দিয়েছেন।তাঁর লেখা সাহিত্যগুলির মধ্যে ‘ছোটি মুন্ডি এবং তার তীর’ অন্যতম।১৯৮৪ সালে তিনি বিজয়গড় বিশ্ব বিদ্যালয়ে শ্রমিক শ্রেণীর মহিলাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। মহাশ্বেতা দেবী সাঁওতাল,উপজাতিদের পাশে থেকে তাদের ওদের হয়ে বিদ্রোহ চালিয়েছেন।এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ববর্তী কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সরকারের শিল্প নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশেষত, তিনি সরকার কর্তৃক উর্বর কৃষি জমি বৃহত্তর অংশের কৃষকদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন যা পরে তা নিক্ষেপ মূল্যে শিল্প ঘরগুলিতে দিয়ে যায়। তাঁর নীতিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের বাণিজ্যিকীকরণের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন, যেখানে তিনি তাঁর গঠনমূলক বছরগুলি কাটিয়েছিলেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বের ফলে বেশ কয়েকটি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, লেখক এবং নাট্যকর্মীরা বিতর্কিত নীতি এবং বিশেষত সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে এর বাস্তবায়নের প্রতিবাদে একত্র হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় প্রথমবারের জন্য অতিথি হিসেবে মহাশ্বেতা দেবী বক্তব্য প্রকাশ করেছিলেন।তখন তিনি একটি অনুভূতিপূর্ণ উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বিখ্যাত চলচ্চিত্রের গান “মেরা জুতা হ্যায় জাপানি” থেকে নেওয়া তার লাইনগুলিতে শ্রোতাদের অশ্রুসঞ্জনের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। বাং লার এই মাতৃসুলভ দৃঢ়চেতা নারীশক্তিকে তাঁর জন্মদিনে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা।
16 views