হোয়াইট হাউসের সুসজ্জিত সেনেট হল। চলছে সাংবাদিক বৈঠক। ট্রাম্পের দিকে ধেয়ে এল একটি প্রশ্ন ” কতগুলি মৃত্যু আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য?” হতচকিত ট্রাম্প এক মুহূর্ত থমকালেন। তারপর খানিক আমতা আমতা করে উত্তর দিলেন “একটিও নয়, একটিও মৃত্যু গ্রহণযোগ্য নয়”।
এই সাংবাদিক বৈঠকের ঘটনাটি যখন, তখন আমেরিকায় মৃতের সংখ্যাটা মোটে কয়েকহাজার। এই প্রতিবেদন লেখার মুহূর্তে সংখ্যাটা ৫০হাজারেরও বেশি।
সদ্য প্রকাশিত ট্রাম্পের একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করে বসেন, ‘সূর্যের আলো, অতি বেগুনি রশ্মি এবং আর্দ্রতা করোনা ভাইরাসের জন্যে প্রতিকূল। এমনকি তিনি এও দাবি করেন জীবাণুনাশক দিয়ে চিকিৎসা করলে মিলতে পারে করোনা থেকে রেহাই’। এহেন আজগুবি দাবিতে স্তম্ভিত গোটা বিশ্বের চিকিৎসক মহল। হাভার্ডের বিখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ আশীষ ঝাঁ এর বক্তব্য এক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষণীয়। তিনি শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন আমেরিকাতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই, হচ্ছেনা যথেষ্ট সংখ্যায় টেস্ট। নেই কোনো সঠিক দিশা। সম্পূর্ন দ্বিধাগ্রস্থ দিশাহীন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার সে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ।
এমনকি লকডাউনের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বলতে থাকার পরও কর্ণপাত করেননি ট্রাম্প। অর্থনীতির ক্ষতির দোহাই দিয়েছেন। বলেছেন লোকডাউনে ঘরে বসে থাকলেও তো মরবে মানুষ। নিউ ইয়র্কে যখন হাজার হাজার মানুষ ভেন্টিলেশনে, ফ্লোরিডায় তখনও সমুদ্রের ধারে চলছে উদ্দাম পার্টি। সেদেশের মানুষের ভবলেশহীন মনোভাব, টাকার জোরে করোনাকে জয় করে ফেলা যাবে এহেন ভ্রান্ত ধারণাই আজ লাশের দেশ বানিয়েছে আমেরিকাকে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আশঙ্কা মৃতের সংখ্যাটা প্রায় ২ লাখ হোলেও আশ্চর্য হওয়ায় কিছু নেই। এমনকি মৃতের সংখ্যা যদি ১লাখের মধ্যেও আটকে রাখা যায় সেটাকেই সাফল্য বলে ধরা হবে। এহেন পরিস্থিতিতেও লকডাউন তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী ট্রাম্প সরকার। তাঁর বক্তব্য যথেষ্ট টেস্ট হচ্ছে, আছে যথেষ্ট পরিকাঠামো। লকডাউন চলতে থাকলে ভেঙে পড়বে অর্থনীতি। প্রশ্ন উঠছে মানুষের জীবন আগে নাকি অর্থনীতি।
বর্তমানে সেই দেশের মানুষ দ্বিধাবিভক্ত। রাস্তায় রাস্তায় লকডাউন ভেঙে প্রতিবাদে সরব মানুষ। দাবি অবিলম্বে শিথিল করতে হবে লকডাউন। চাঙ্গা করতে হবে অর্থনীতি। ট্রাম্প সরকারেরও তেমনই অভিপ্রায়।
কিন্তু বাস্তব হল আমেরিকার হসপিটালে ঠাঁই নাই অবস্থা। প্রতিদিন নতুন নতুন আক্রান্ত আসছে। জায়গা নেই, পিপিই নেই, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ কিংবা মাস্ক। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি ভিয়েতনামের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে কখনও ওষুধ, কখনও টেস্টিং কিট বা কখনও পিপিইর জন্যে।
তারপরেও হুঁশ নেই ট্রাম্প প্রশাসনের।
কথিত আছে রোম যখন ধ্বংস হচ্ছিল সম্রাট নিরো তখন ভায়োলিন বাজাচ্ছিলেন। আজ এই কাহিনী ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।
এরপরও কি হুঁশ ফিরবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশের প্রেসিডেন্টের? কমবে মৃত্যু মিছিল? অদূর ভবিষ্যতে উত্তরটা সময় বলবে।
২৫/০৪/২০২০
রিপোর্ট – স্বাতী সেনাপতি
চিত্র সূত্র – ট্যুইটর