সুগন্ধ ফরাসি হলেও, তার আতঙ্কিত ঘ্রাণেই ভরছে চারিদিক! –ফ্রান্সের গ্রেনোবেল থেকে লিখছেন পৌষালি দত্ত।

সোনালী রোদে মোড়া এক একটা ফরাসি দিনযাপন, কাটছে যেন দুঃস্বপ্নের মতো! পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। অদৃশ্যমান অসীম শক্তি সম্পন্ন একটি জীবাণুর সঙ্গে, গৃহবন্দি জীবনযুদ্ধে জয়লাভের আশা ছাড়া, আর সমস্ত কিছুই বন্দি নিয়েছে জীবনেরই

কাছে। গত ১৬ মার্চ থেকে গৃহবন্দি আমরা। ১৭ মার্চ দুপুর ১২টা থেকে কার্ফু জারি, ‘সুপার মার্কেট’ আর ‘ফার্মেসি’ ছাড়া সবই প্রায় বন্ধ। ”Attastation de Déplacement Dérogatoire”- নামক ফর্মটি প্রিন্টআউট বা হাতে লিখে ঘর থেকে বেরোনো যাচ্ছে, দিনে একবার এবং এক কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত যাতায়াত সীমাবন্ধ রাখতে হচ্ছে। মাঝে মাঝেই নির্জনতা ভাঙছে হেলিকপ্টার, রোগী পরিবহন চলছে।

এদেশে, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আমার

স্বামী একজন বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে, গবেষণা চলছে ঘরে বসেই। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতিতে। এখানেও মাস্ক, স্যানিটাইজারের আকাল। প্রথমদিকে, স্থানীয় সুপার মার্কেটগুলিতে খাদ্যসংকট দেখা দিলেও, সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এই মার্কেটগুলোতে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওই মার্কেট ‘স্যানিটাইজ’ করা হচ্ছে। আসলে, রাস্তাঘাট প্রায় জনমানবহীন! মাঝে মাঝে কিছু মালবাহী ট্রেন এবং অল্প যাত্রীবাহী ট্রেনের আওয়াজ যেন হঠাৎ হঠাৎ নিস্তব্ধতায় প্রাণ সঞ্চার করছে। ট্রাম, বাস চলাচল খুবই সীমিত। আর যদি, আবহাওয়ার প্রসঙ্গে বলি, তাহলে বলা যায়, এখানে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। আমার আবাসস্থল অর্থাৎ আমার অ্যাপার্টমেন্টের শিশুরা, প্রথমদিকে খেলাধুলার জন্য বেছে নিয়েছিল এখানেরই

ওপেন পার্কিং স্ট্রাকচার। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ সংকটজনক হওয়ায় সেসবও এখন বন্ধ।

গত ১৯ মার্চ থেকে রাত আটটা বাজলেই, একটি ঘটনা আমার প্রতিদিনের গৃহবন্দি জীবনের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নিস্তব্ধ উপত্যকায় আলোর জোয়ার, পাহাড়ের গা বেয়ে হাততালি, নানানরকম আওয়াজ। ড্রাম জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের শব্দ, যা সেইসব মানুষকে অভিবাদন জানানোর জন্য, যাঁরা আমাদের মতো গৃহবন্দি থাকার বিলাসিতাও করতে পারছেন না। যুদ্ধ করছেন জীবন বাঁচানোর। ৫ মিনিটের সেই ম্যাচ জেতার অনুভূতিকে, আবার গ্রাস করছে নির্জনতা আর এক ভয়াবহ আতঙ্ক। Iséve নদীর দুই উপকূলের গাছগুলো যারা শীতে মৃতপ্রায় হয়েও বেঁচে ছিল, নিজেদের কঙ্কাল নিয়ে, তারাও সেজে উঠেছে কিশলয়ে। নতুন জীবনের আশায়।

শুনতে পাচ্ছি, ভারতবর্ষেও করোনা সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান। সেইজন্য বলার, যাঁরা এখনও এই পরিস্থিতিকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখছেন, তাঁরা দয়া করে এখনও সাবধান হোন। আমরা ভুক্তভোগী, আমাদের দিন কাটছে, অজানা এক মৃত্যুভয়ে!

_____________________________________________

পৌষালি দত্ত

গ্রেনোবেল, ফ্রান্স

©️ Written by: Poushalee Dutta (France) & Edited by Ramen Das, behalf of

www.khoborwalatv.com