উত্তর ২৪,পরগনার বারাসাত স্টেশন। এই স্টেশনের আনাচে কানাচে বাস ওদের। ওরা অর্থাৎ যাদের জন্য আদর্শ থাকার জায়গা পথ! সেখানে পেটে ভাত নেই এরকম বাচ্চার সংখ্যা অনেক। এই স্টেশনই হল তাদের একমাত্র বাসস্থান। বৃষ্টি হোক কিংবা কনকনে ঠান্ডা ভরসা এই স্টেশন। কিন্তু এই লকডাউনে না আছে ভিক্ষে, না আছে পেটে ভাত। কী হবে ওদের?
এইরকম অবস্থায় এই দরিদ্র শিশুদের সহায় হয়ে এলেন অর্ণব রায়চৌধুরী। চন্দননগরে কর্মরত হলেও, অর্ণব বারাসাতের বাসিন্দা। তাই ওদের কথা ভেবেই যোগাযোগ করেন, জেলার পুলিশকর্তাদের সঙ্গে। তাঁর অনুরোধে সাড়া দেন, বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব্যানার্জি সহ পুলিশ কর্তারা। সকলের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় থেকে, মাস্ক, খাবার জোগাড় থেকে হাত পরিষ্কারের কৌশল, সবেতেই ভুমিকা নিতে দেখা যায় তাঁকে।
শুধু লকডাউন নয়, এর আগেও অর্ণব রায়চৌধুরী ও তাঁর বন্ধুরা দুর্গাপুজো হোক কিংবা ক্রিসমাস, এই বিশেষ সময়ে চলে যেতেন এদের মুখে হাসি ফোটাতে। বিশেষ দিনে সবার হাতে দিতেন নতুন জামা,খাবার,কেক-মিষ্টি।এতেই থেমে নেই অর্ণব ও তার বন্ধুবান্ধবরা। প্রতিদিনের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে মিশে গেছেন এই শিশুদের সঙ্গে। পুলিশ বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত সে।
এখন অবশ্য এই বাচ্চাদের বন্ধু অর্ণব, এখন সদ্য চাকুরিতে যোগ দেওয়া ‘পুলিশ কাকু’। নিজের নতুন চাকরিতে ঢুকে কিন্তু তিনি তার ছোট সাথীদের কথা ভোলেননি। এই চরম দুর্ভিক্ষের সময় মুখ না ফিরিয়ে তাদের পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভসের পাশাপাশি মুখে শুকনো খাবার দিয়ে কাছে টেনে নিচ্ছেন। দূর থেকে বাচ্চাদের শেখাচ্ছেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কৌশল। ওই স্টেশন চত্বরে সব বাচ্চাদের সঙ্গে এখন, সামাজিক দূরত্ব মেনে তাদের কাছে ভালোবাসার প্রাপ্তি আনছেন প্রতিমুহূর্তে। রাখছেন অনন্য নজির।
যদিও এই পুলিশ কাকুর মন্তব্য, ”বিশ্বাস করুন মহান কিছু করছি না, সামাজিক দায়িত্ব পালন করছি শুধু। আর এই বাচ্চাদের হাসি মুখটা আমার পরম প্রাপ্তি।”
বারাসাত
রিপোর্ট: অর্পিতা বসু