শীঘ্রই ফিরবেন পড়ুয়ারা, এবার কোটার বাঙালি পড়ুয়াদের পাশে মমতা। আগেও সাহায্যের আশ্বাস দেয় সরকার।

”আমি ব্যক্তিগতভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সবাই যে কোনও সম্ভাব্য সহায়তা পাবে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কোনও প্রকারের খামতি করব না। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং কোটাতে আটকে থাকা বাংলার সমস্ত শিক্ষার্থী শীঘ্রই তাদের যাত্রা শুরু করবে।” আগেও সাহায্যের হাত সরকারের তরফে বাড়ানো হলেও, এবার কোটায় আটকে থাকা পড়ুয়াদের জন্য নিজেই উদ্যোগ নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই পড়ুয়াদের বাংলায় ফেরানো নিয়ে প্রথমে জটিলতা তৈরি হলেও, রাজ্যের তরফে সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হলেও, পড়ুয়াদের করুন আর্তি আর ফেরাতে পারলেন না মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে তিনি নিজেই উদ্যোগ নিলেন। এবং বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস সহ যাতে তাঁরা ফিরতে পারেন, সেটাও বিবেচনার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু ঘটনার যবনিকা পতন ঘটেনি এখনও, কিন্তু এর সূত্রপাতের মুহুর্ত থেকে আমরাও অগ্রসর হই বারবার। এই বিষয়ে, অর্থাৎ পড়ুয়াদের আটকে থাকা এবং তাঁদের ফেরানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিই আমরাও। খবরওয়ালাটিভি.কমে’র পক্ষ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যোগাযোগ করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। প্রত্যেকেই মৌখিকভাবে আশ্বস্থ করেন, এই বিষয়টি বিবেচনার। আমরা যোগাযোগ করি, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও। এই বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনিও। সোমবার ট্যুইট করে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী জানান, তিনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু তিনি পড়ুয়া ফেরাতে রাজ্যের অফিসিয়াল অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছেন। এর পাশাপাশি তিনি জানান, দেশের রেলমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন, যাতে বিনামূল্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো যায়।

এই উদ্যোগ গ্রহণের আগেও আমরা যোগাযোগ করি আটকে থাকা পড়ুয়াদের সঙ্গে। কো আটকে থাকা বহু সংখ্যক বাংলার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলি আমরা। সব সুবিধা, যতটা পাওয়া যায়, সেখানে বসে এই মুহূর্তে খানিকটা পেলেও, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোহিনীর মতো সকলেরই কাতর আর্তি ছিল, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই।

খবরওয়ালাটিভি.কমে’র পক্ষে যোগাযোগ করা হলে সোহিনী বলেন; এখানে সবাই চলে যাচ্ছে আমার হোস্টেলে বাংলা থেকে আমি একা, সবাই চলে গেলে একা হয়ে যাব, থাকব কীভাবে! ভয় পাচ্ছি, দয়া করে বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করুন, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই, সোহিনী মিশ্র এই আর্জি যখন করছিলেন, আতঙ্কে গলা কাঁপছিল তাঁর। যদিও, অনেকেই বলছেন যতটা পারিপার্শ্বিক সমস্যা, তার তুলনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছে এই পড়ুয়ারা। তবুও এই আর্জির পর ফের আমরা সচেষ্ট হই।

কিন্তু খানিকটা অনুসন্ধানের পর দেখা যায়, বাংলার একটি নিউজ পোর্টাল ‘দ্যা ওয়াল’, ২১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে উদ্ধৃত করে বলছে, “যে সাড়ে তিনহাজার-চার হাজার বাংলার ছাত্রছাত্রী রাজস্থানের কোটায় আটকে পড়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এটা বিশাল বড় একটা কাজ। অনেক জটিলতা রয়েছে। এতটা রাস্তা এতজনকে আনা সম্ভব নয়। আমরা অনুরোধ করব, এতদিন কষ্ট করেছেন। আর ক’টা দিন কষ্ট করুন।…এই ছাত্রছাত্রীদের আনতে অন্তত ৩০০ বাস প্রয়োজন। এতটা রাস্তা সেই বাসগুলি যাবে এবং আসবে সেটা সম্ভব নয়। অনেকগুলি রাজ্য পেরিয়ে তাঁদের আনতে হবে। সব রাজ্য অনুমতি দিচ্ছে না। যেমন বিহার স্পষ্ট বলে দিয়েছে তারা তাদের রাজ্য দিয়ে আসার অনুমতি দেবে না।” ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী আরও জানা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা যদি ওখানে অন্য কোনও সাহায্য চান তাহলে সেটা রাজ্যসরকার বিবেচনা করে দেখবে বলেও জানাচ্ছেন মুখ্যসচিব। আরও বলা হচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি রাজস্থানের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাজস্থানের নোডাল অফিসার শ্রেয়া গুহর সঙ্গে রাজ্যের নোডাল অফিসার পিবি সলীলও কথা বলেছেন।

অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের তরফে একপ্রকার নিশ্চিত করা হয় কোটায় আটকে থাকা বাংলার পড়ুয়াদের এই মুহূর্তে ফেরানো সম্ভব না। কিন্তু তাঁদের যাবতীয় সাহায্য সরকারের তরফে করা হবে।

প্রসঙ্গত, ওই পড়ুয়ার দাবি, কখনও সংবাদমাধ্যম, কখনও নবান্ন, বিভিন্ন জায়গায় দরবারের চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু এখনও কিছু হয়নি, তাই তাঁর শুধু একটাই আর্জি, ‘দিদি, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই।’

উল্লেখ্য, মালদহের ইংলিশ বাজার থানার দক্ষিণ আবাসনের বাসিন্দা, সোহিনী মিশ্র শুধু নন, দাবি, রাজস্থানের কোটায় আটকে আছেন বাংলার বহু সংখ্যক পড়ুয়া। যাঁরা ফিরতে চাইছেন বাড়িতে অর্থাৎ এই বাংলায়। কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, ‘আমাদের এই এলাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত, কিছু জায়গায় হোস্টেলের ১০০ মিটারের মধ্যেও রয়েছে সংক্রমণ, ভয় লাগছে তাই বাড়ি ফিরতে চাই।’ সাম্প্রতিক পারিপার্শ্বিক সমস্যার তুলনায়, তাঁদের আগ্রহ শুধু বাড়ি ফেরাতেই কেন? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এই বিষয়ে একাংশ বলছেন, ওই পড়ুয়ারা অনেকেই বয়সে চট, তাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওঁরা। তাই এই অবস্থা তৈরি হতে পারে।

এদিকে, এখানেই ওই ছাত্রীর প্রশ্ন, আসাম বাংলার উপর থেকে পড়ুয়া ফেরাতে পারলেও, বাংলা কেন নয়? প্রশ্ন এবং সুরাহার অনিশ্চিয়তার মধ্যেই বর্তমানে কোটায় দিন কাটাচ্ছেন বহুসংখ্যক পড়ুয়া। যদিও, প্রথমে পানীয় জল, খাবারের যোগানে খানিকটা সমস্যা থাকলেও, এখন খুব একটা সমস্যা নেই বলেই জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে খাবার পৌঁছনো হচ্ছে ওই সমস্ত হোস্টেলে। ওই পড়ুয়া নিজেও জানাচ্ছেন, খাবার আসে, কিন্তু কোথা থেকে আসছে জানি না, তাই সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় পাচ্ছি। এদিকে রোজ হোস্টেল পরিষ্কারের জন্য লোক এলেও কার্যত আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা। যার দরুন, ওই সাফাই কর্মীদের চিন্তার কথা বলছেন তাঁরা। এমনকি, সংক্রমিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তে হোস্টেলের সাফাই কর্মীদের আনাগোনা তে ও এক প্রকার ভয় রয়েছে পড়ুয়াদের। তাঁদের আরও দাবি, যাঁরা আসছেন পরিষ্কার করতে তাদের থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অর্থাৎ রাজ্যের পদক্ষেপের পর পারুয়াদের খানিকটা সুরাহা হলেও, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাঁরা। সরকারের আশ্বাসবাণী সত্ত্বেও, তাঁরা এখনও দূরদেশে থাকতে প্রায় নারাজ। কারণ, তাঁদের কাছে বাংলা অর্থাৎ নিজেদের বাড়িই বেশি নিরাপদ, এমনটাই বলছেন তাঁরা। ওই পড়ুয়াদের আশঙ্কা, বাকি রাজ্যের সবাই ফিরে যাওয়ার পর কার্যত তাদের একা থাকতে হবে, যা সব সমস্যার সুরাহা করলেও, মানসিক শান্তি দিচ্ছে না। তাই, কোটায় থাকা সত্ত্বেও, সবকিছুর সমাধান রাজ্য করলেও, তাদের কাতর আর্তি, আমরা বাড়িতেই ফিরতে চাই। এই বিষয়ে একাংশের মনোবিদরা বলছেন, ওঁরা অত্যন্ত ছোট বয়েসের। অনেকদিন এই পরিস্থিতিতে রয়েছেন। অসুবিধা মারাত্মক হচ্ছে, কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যার তুলনায়, একটা মানসিক অস্থিরতা কাজ করতে পারে এই ক্ষেত্রে।

প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর স্ত্রী অর্থাৎ সোহিনী মিশ্রের মা আমাদের জানান, ”আইনি কোনও পদক্ষেপ নিতে চাই না, অধীর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, তিনি ওম বিড়লার (লোকসভার অধ্যক্ষ) সঙ্গে কথা বলেছেন বলে শুনেছি, রাজস্থানের , মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, হোস্টেলে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেটা দেখবেন, যতদিন না ফেরে।” তাহলে সমস্যা? তিনি আরও বলেন, ”আসলে সবাই সব রাজ্যের, তাঁরা চলে যাচ্ছে, আমার মেয়ের মত অনেকেই একা হয়ে যাবে।” তিনি আরও জানান, ”মৌসম বেনজির নূরকে (রাজ্যসভার সাংসদ) জানিয়েছি, শঙ্কর মালাকারের (বিধায়ক) সঙ্গে কথা বলেছি। জেলাশাসকের দফতরে যাব। ওদের খাবার পাঠাচ্ছে খুব নিম্নমানের, কিন্তু পরে কি হবে ভাবতে পারছি না।”

অবশেষে, অধীর চৌধুরী এবং বিশেষত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এই প্রতিক্রিয়া, খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস দিচ্ছে সোহিনীর মতো বহু আটকে থাকা পড়ুয়াদের পরিবারে।

২৭.০৪.২০২০