রেলস্টেশন,মেট্রোতেও চালু হোক ‘স্ক্রিনিং’। স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েই, মত জনতার।

কলকাতা: কোভিড-১৯ভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের থাবা দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে বেশি দেখা দিলেও, এখন আর, উত্তর থেকে পূর্ব অথবা পশ্চিমে আসতে বাকি নেই। গুগলের কর্মীর মৃত্যু থেকে বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের অফিস খালি, করোনার আতঙ্কে সতর্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তটস্থ এদেশ। ভারতজুড়ে করোনা ভাইরাসে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন! ১৭ জন বিদেশি বাদে, প্রায় সকলেই ভারতীয়। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নজরে রাখা হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার জনকে। করোনায় ইতিমধ্যেই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত, এক বৃদ্ধ কর্নাটকের, আরেকজন বৃদ্ধা দিল্লির বাসিন্দা। যাঁকে সৎকারে গিয়ে শনিবার সমস্যায় পড়েন তাঁর পরিবারের লোকেরা।

এদিকে, এর প্রকোপে ঝাড়খণ্ড সহ ৬ রাজ্যে আগেই, প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়, স্কুল-কলেজ- সিনেমা হল-শপিং মল। স্থগিত হয়ে যায় ডার্বি, পিছিয়ে যায় আইপিএল। শুক্রবারই পশ্চিমবঙ্গের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, খড়গপুর আইআইটিতে আপাতত বন্ধ হয় শিক্ষামূলক সব কর্মসূচি। তারপর জানা যায়, কতৃর্প‌ক্ষ বিশ্বভারতীর দেশীয় পড়ুয়াদের হোস্টেল ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে। জল্পনা শুরু হয়। শুক্রবার বিকেলে, নবান্নের মিটিংয়ে একটা সময় ইচ্ছাপ্রকাশও করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই, আর ঝুঁকি নিল না রাজ্যেসরকার। আগামী ১৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি সব বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিসাবিদ্যালয়ে স্থগিত থাকবে পঠন-পাঠন। শুধু জরুরি কাজ এবং পরীক্ষা বাদে, এই নির্দেশ বহাল থাকবে। এমনই জানালো রাজ্যসরকার।

মুখ্যমন্ত্রীর তরফে প্রেসবিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ”কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে, হু-ইউএন-র কথা চিন্তা করে সরকার, রাজ্যের সব সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এসএসকে/এমএসকে, আগামী ১৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে। শুধু, পর্ষদের পরীক্ষা একই সূচিতে চলবে।” (বিবৃতি নম্বর: ৮৫- এস এস ই/২০, তারিখ: ১৪.০৩.২০২০)।

এরপরই দেখা যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ ‘ফেটসু’র পক্ষ থেকে আপাতত বাতিল করা হয়, বার্ষিক নবীনবরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ‘সংস্কৃতি’।

যদিও সরকারের তরফে এই সিদ্ধান্তকে ভালোচোখেই দেখছেন, জনতার একটা বড় অংশ। কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ার মা, স্কুলশিক্ষিকা মমতা রায়। তিনি বলছেন, ”দেখুন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ডিউটি করছি। অসুবিধা নেই। কিন্তু বাচ্চার মা হিসেবে বলব, খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার, এটাই উচিত ছিল।” একই কথা জানাচ্ছেন, আরেক শিক্ষিকা মালবিকা দেবীও। সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ তাঁর। এদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভিভাবকরাও এই সিদ্ধান্তে খুশি! বসিরহাটের ইটিন্ডার একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ার মা সোমা দেবী। তিনি জানালেন, ”অপেক্ষায় ছিলাম, ভয় লাগছিল, যতই মাস্ক-স্যানিটাইজার দিই, ওরা ছোট তো, যদি কিছু হয়। এই চিন্তাতে নিয়েই স্কুলে নিয়ে আসছিলাম। কী করব বলুন? কিন্তু, খুব ভালো করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তে একটু নিশ্চিত হলাম।” সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত একটি স্কুলের অষ্টমশ্রেণীর পড়ুয়া সৌভিকের বাবা। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা উত্তমবাবু বলেন, ”বাচ্চার জন্য দারুন ব্যাপার এটা। রোজ ভিড়ট্রেনে নিজের ক্ষতি হতেপারে ভেবেও, ওদের নিয়ে চিন্তায় থাকতে হত। এবার সরকারকে অনুরোধ করব, শিয়ালদহ, হাওড়া, দমদমের মতো ভিড় স্টেশনে, মেট্রোতে স্ক্রিনিং চালু হোক। তাহলে খুব ভালো হবে রাজ্যের মানুষের।” এমনই দাবি অনেকের।

শুক্রবার নবান্নে, মুখ্যমন্ত্রী জরুরি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফের গুজবে কান না দিয়ে, সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। সতর্ক থাকুন, গুজবে কান না দিয়ে, সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সরকারকে জানানোর ব্যবস্থা করুন, পাশে আছে সরকার, এমনই বার্তা এবং পরামর্শ এরাজ্যের সরকারেরও।

১৪.০৩.২০২০