মার্কিনী আগ্রাসন রুখেছিল এই সে। আজ সেই ভয়াবহতা জয় করেও, করোনা রুখতে নতুন পথ দেখাচ্ছে ভিয়েতনাম।

আরও একটা যুদ্ধজয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভিয়েতনাম। অতীতে ভিয়েতনাম লড়েছে চিনের সাথে, ফ্রান্সের সাথে, আমেরিকার সাথে আর ২০২০ ভিয়েতনাম লড়েছে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে। দশ কোটি জনসংখ্যার ভিয়েতনামে আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোরও কম, মৃতের সংখ্যা শূন্য। মিলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা। ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোতে যখন আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তখন ভিয়েতনাম এখন রোজ এক বা দুইজন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি কিছু কিছু দিনে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যেতেও নামিয়ে আনতে পেরেছে ভিয়েতনাম। সাফল্যের কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে ভিয়েতনাম করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছিল জানুয়ারি মাসে।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয় ভিয়েতনাম সরকার। বিমানবন্দরগুলোকেই কোয়ারান্টাইন সেন্টার হিসাবে গড়ে তুলেছিল, অর্থাৎ বিদেশ থেকে ভাইরাসবহনকারী কেউ এলে সে চোদ্দোদিন পর শহরে ঢুকতে পারবে। একইসাথে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলেছে করোনা সম্পর্কিত সচেতনতার প্রচার। লকডাউন যথাযথভাবে পালন করতে বড় ভূমিকা নিয়েছে প্রশাসন ও দেশের সচেতন মানুষেরা। ভিয়েতনাম উন্নয়নশীল দেশ হলেও জাতীয় আয় থেকে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ থাকে যথেষ্ট পরিমাণ। সন্দেহজনক কেউই টেস্ট করানো থেকে বাদ যায়নি, হাসপাতালগুলির ডাক্তার ও নার্সদের জন্য রয়েছে দুদিন অন্তর টেস্টের ব্যবস্থা। একজন স্বাস্থ্যকর্মীর ও কিটের অভাব হয়নি।

করোনার দাপটে হিমশিম খাওয়া ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ডকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটা, ৫,৫৫০০০ অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল মাস্ক পাঠিয়েছে ইউরোপের ওই দেশগুলোতে। ৬০০০ টেস্ট টিউব দিয়েছে জার্মানিকে। এখানেই শেষ নয়, যে আমেরিকা ভিয়েতনামে ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল অর্থাৎ প্রায় পনেরো বছর ধরে সাড়ে চার কোটি লিটার বিষাক্ত রাসায়নিক বোমা ফেলে ভরিয়ে দিয়েছিল, মাইলের পর মাইল সবুজ ধ্বংস করেছি, ৩০লাখের বেশি মানুষ মেরেছিল সেই আমেরিকাকে ৪৫০০০০ পিপিই কিট পাঠিয়েছে। এখানে আরো একটা যুদ্ধজয় ভিয়েতনামের, হিংসার যুদ্ধ। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, স্বল্প শক্তিশালী এই দেশটির কাছে হেরে গিয়েছিল আমেরিকা। আমেরিকার সরকারের বিরুদ্ধে তাদের জনগণই ভিয়েতনাম নীতির প্রতিবাদে পথে নেমেছিল।

উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম যুক্ত হয়ে একক ভিয়েতনামে সমাজতন্ত্র চেয়েছিল ওরা, যুক্ত ভিয়েতনামে সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিল আমেরিকার সঙ্গে পনেরোটা বছর। অসম লড়াই করতে করতেই বড় হওয়া যে দেশ, ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাড়ানো যে দেশ, সে দেশকে কি করোনা সহজে হারাতে পারে? ভিয়েতনাম তো হারতে জানে না, হারতে শেখেনি কোনোদিন। আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তের দুর্বল মানুষগুলো বা দুর্বল জাতিগুলো নানারকম অসম লড়াইয়ে একটা ‘ভিয়েতনাম’ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। করোনার সাথেও তো এক অসম লড়াই চলছে পৃথিবীর। আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের মুখে সেই পুরোনো স্লোগানটা জোর গলায় ফিরে আসছে, ‘তোমার নাম আমার নাম/ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম’।

০৫.০৫.২০২০
লেখা: শুভময় মল্লিক