ভূতে ধরেছে গুজবেই হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছল অসুস্থ নাবালিকা! মৃত্যুর পরেও, সৎকার নিয়েও তৈরি গুজব।

করোনা মোকাবিলায় ত্রস্ত বিশ্ব! সকলেই চাইছেন নিজেদের বাঁচাতে। কিন্তু এই দুশ্চিন্তার মধ্যেও একের পর এক বিস্ময়কর খবর আসে! এবার সেইরকমই এক খবর এল খোদ এই রাজ্যের মালদহ থেকে। স্রেফ ভূতের গুজবই, একটি মেয়ের মৃত্যুকেও করে দিল, খানিকটা এলোমেলো!

নাবালিকার দেহ।

জানা গিয়েছে, বাড়ির নাবালিকা মেয়েকে নাকি ভূতে ধরেছে । আর তার থেকেই বাসা বেধেছে জ্বর । অসুস্থ ওই নাবালিকাকে ভর্তি করানো হয় মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। চিকিৎসার ছয় দিনের মাথায় শনিবার, মেডিকেল কলেজেই মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার। এরপর ওই নাবালিকার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।  আর সেই মৃতদেহ মালদা শহরের মহানন্দা নদীর পারে কবর দিতে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় গোলমাল। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নাবালিকার মৃত্যুতে জটিলতা সন্দেহ করেই মৃতদেহ কবর দিতে বাধা দেয়। অবশেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিবারের লোকেরা ওই মৃতদেহ নিয়ে সৎকারের জন্য সাদুলাপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যান।

সেই কবরের গর্ত।

প্রসঙ্গত, মেডিকেল কলেজ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে,  মৃত ওই নাবালিকার নাম মিলি মন্ডল, তার বয়স আনুমানিক ১১ বছর। বাড়ি মালদা শহরের নরসিংহকুপা এলাকায়। সূত্রের খবর, গত ১২ এপ্রিল জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল ওই নাবালিকা।  ১৮ এপ্রিল, শনিবার ভোর সাড়েচারটে নাগাদ মেডিকেল কলেজেই মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার। এরপরই ওই নাবালিকার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃতদেহ।

তারপর, মালদা শহরের মহানন্দা পল্লী এলাকার নদীর ধারে ওই নাবালিকার মৃতদেহ কবর দিতে যান পরিবারের লোকেরা। বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেন চুপিসারে মৃতদেহটি কবর দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও প্রতিবাদে সোচ্চার হোন এলাকার বাসিন্দারা। নিমিষেই অনেকাংশেই ছড়াতে থাকে করোনা গুজব! মৃতদেহ কবর দেওয়ার নিয়ে শুরু হয় গোলমাল। তড়িঘড়ি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই প্রসঙ্গে, সংবাদমাধ্যমে, মৃতের আত্মীয় ছেদন মন্ডল জানিয়েছেন , ”১১ এপ্রিল ভাইজি মিলি মন্ডল বাড়ির বাইরে খেলা করছিল। এরপর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় সে। হাত, পা কাঁপতে থাকে।  আমরা ভেবেছিলাম ওকে ভূতে ধরেছে । নানারকমভাবে চেষ্টা করেও অসুখ সারানো যায়নি। এরপর জ্বর হতে থাকে। তারপরে ১২ এপ্রিল ভাইজিকে ভর্তি করানো হয় মেডিকেল কলেজে। ছয়দিন চিকিৎসার পর মিলি মন্ডলের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।আমরা বুঝতে পারছি না, কি কারনে মৃত্যু হল!”

মিলির বাবা, সঞ্জিত মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা চম্পা রানী মন্ডল গৃহবধূ। পরিবারে তাঁদের এক ছেলে তিন মেয়ে। মিলি মন্ডল ছিল মেজো মেয়ে। সঞ্জিত বাবু বলেন, ”মেয়েকে অশুভ কোন আত্মা ধরেছিল বলেই আমরা মনে করেছিলাম। ঝাড়ফুঁক করি। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখেই পরে ওকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করি।  ছ’দিন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু মেয়েকে আর বাঁচানো গেল না!”

সঞ্জিতবাবু আরও জানান, ”ছোটমেয়েকে দাহ না করেই মহানন্দা নদীর তীরে কবর দিতে এসেছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসীরা আমাদের কবর দিতে বাধা দিয়েছে। ওরা নানানরকম কথা বলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলো।” তাই, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কবর থেকে দেহ উদ্ধারের পর দাহ করার জন্য সদুল্লাপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

যদিও এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের তরফে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, মৃতদেহ কবর দেওয়া নিয়ে সাময়িক একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে পরিবারের লোকেরা দেহটি সৎকাজের জন্য শ্মশানে নিয়ে যায়।

একবিংশ শতাব্দীর এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সভ্যতায় দাঁড়িয়েও প্রশ্ন উঠছে এখানেই। স্রেফ গুজব তো দূর, কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে একটি প্রাণ চলে গেল নিমেষেই! এই প্রশ্নও তুলছেন অনেকেই। ভূতে ধরেছে, এই কুসংস্কারের জন্য ঝাড়ফুঁক করে সময় নষ্ট না করে, যদি সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তাহলে হয়তো বেঁচে যেত ওই নাবালিকা, মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশও।

____________________________________

১৯.০৪.২০২০

মালদহ

PB

Edited