Updated: Mar 10
ভারত চিন্তিত। চিন্তায় সমগ্র বিশ্বও। সম্প্রতি ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)’ তাদের একটি রিপোর্টে বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ নিশ্চিতভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তার মধ্যে ৮১ হাজার শুধু চিনেই! আশার বিষয় একটা, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে শিশুদের শতাংশ তুলনামূলক অনেক কম। কিন্তু চিনে কত মানুষ মারা গিয়েছেন এবং এখনও এটা চলছে, সেটা আমরা সকলেই জানি। ইরান, ইতালি সহ বহু দেশও উঠে আসছে শিরোনামে।
১) Picture Courtesy: AFP, (Ahmed Gharabli)
কিন্তু ভারত কেন হঠাৎ এতটা আতঙ্কিত? কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, দক্ষিণ-এশিয়ার বহু দেশে যেহেতু এর প্রভাব। আর এই অংশে জলবায়ুগত অনুকূল পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত বেশি হয়। তাই উহানের থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত। এদিকে, সামাজিক আধুনিকতায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষের যাতায়াত বেশি, তাই এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত। খুব কম হলেও, ভারতেও সেটা হচ্ছে! এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে মাত্র ৬ জন আক্রান্ত! হ্যাঁ, মাত্র ৬ জন! এত কোটির দেশে এটা খুব বেশি কি? এছাড়া এই ভাইরাসে এখনও কেউ আক্রান্ত বলে জানা যায়নি।
২) ছবি: সচেতনতা প্রসারে প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির করা ট্যুইট।
আশঙ্কা ! আতঙ্ক ! নিছক এই আতঙ্কের বশেই, বন্ধ করা হয়েছে নয়ডার একটি স্কুল! প্রায়, ঘরে আটকে, এক প্রাপ্ত বয়স্ক ‘করোনা আক্রান্তে’র সঙ্গে জন্মদিন পালন করা শিশুরা! নিছকই আতঙ্ক সব! হ্যাঁ! প্রায় ১২১ কোটির বেশি মানুষের দেশে, রোজ কোটি কোটি মানুষের ভিড় ট্রেন-বাসে যাতায়াতের দেশে, মাত্র ৬ জনের আক্রান্তের খবরও দ্রুত আতঙ্কের সৃষ্টি করবেই। প্রশ্ন আসবেই, এই ৬ জনই ৬০…৬০০…৬০০০… হবে না তো?
৩) ছবি: ফেসবুক
নাহ্! হবে না। আমাদের দেশ চিনের পুতুল কেনা থেকে শুরু করে, চাইনা লাইট লাগিয়ে মাটির প্রদীপের দফারফা করলেও, চিনা খাবার খেলেও, এই ক্ষেত্রে অন্তত সচেতন। দোলের আবীর কেনাতেও সেইরকম ভূমিকায় বজায় রাখছে দেশবাসী। বেশ সচেতন তাঁরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরাও সচেতন। কিন্তু কেমন যেন একটু বেশি! হাত মেলানো, অথবা উত্তরপূর্বের কাউকে দেখলেই অতিরিক্ত এড়িয়ে যাওয়া, অথবা মুরগিতে করোনা ভাইরাস আছে, সর্দি হলেই ওই লোকটি বা মহিলাটি আক্রান্ত, -এই সমস্ত প্রকোপ আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই আসছে। এয়ারপোর্টে উপযুক্ত স্ক্রিনিং করে বিদেশিরা মায়াপুরে এলেও, প্রশ্ন আসছে ওই সুস্থ বিদেশির শরীরেও করোনা নেই তো! আদতে, করোনা ভাইরাস ভয়াবহ! অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ১০০ দিন নাকি মানব শরীরে সক্রিয় থাকতে পারে এই মারণ ভাইরাস! মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে শরীরে। নিমেষেই ছড়াতে পারে করোনা। এক থেকে একাধিকের মৃত্যু ঘটাতে এই ভাইরাস সিদ্ধহস্ত। তাই, আতঙ্ক সৃষ্টি হবেই। আপনার-আমার মনে একাধিক প্রশ্নের জন্ম নেবেই। সবক্ষেত্রেই সেটাই হয়। এক্ষেত্রে এটা হওয়ার কারণ অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত! কিন্তু এতটা প্রশ্ন আসত? যদি রোজ সকালে যেকোনো সংবাদপত্র খুলেই একটা সরকারি সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেখতেন? যদি রেডিওতে গান শোনা, টিভিতে খবর দেখা, সিরিয়াল দেখার মাঝেই শুনতে বা দেখতে পেতেন কী করবেন, কী করবেন না? কোথায় যাবেন, কীভাবে থাকবেন? চিকিৎসকরা কী বলছেন? বিস্তারিত! এতদিন তা কিন্তু প্রায় দেখেননি। এবার দেখবেন হয়তো। প্রধানমন্ত্রীর এতদিন পরে ‘ট্যুইট সক্রিয়তা’র পর, এইরকম দেখবেন আশা করি। এদিকে, বিভিন্ন দেশকে ভিসা দেওয়া নাকি বন্ধও করেছে সরকার। কিন্তু আগে? মারাত্মক জনবসতিপূর্ণ দেশে, স্বাভাবিভাবেই যেকোনও ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা করা হলেও, আগেভাগেই আমাদের দেশ আরও ব্যবস্থা নিতে পারত না? মানে, সচেতনতামূলক প্রচার, বিজ্ঞাপন, মানুষকে জানতে বাধ্য করা! যাইহোক, অবশেষে সেটা হতে পারে। হবেও হয়তো। কারণ, ততদিনে হাত মেলানো বন্ধ হয়েছে, উত্তরপূর্বের লোক দেখলেই চিনের লোক ভাবা শুরু হয়েছে। মুরগি খাওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগাড় হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ডেঙ্গুর, ম্যালেরিয়ায়, সোয়াইন ফ্লু-র থেকেও বেশি জায়গা করে ফেলেছে ভয়ানক এই ‘করোনা’। কিন্তু কী করবেন? সত্যিই কি হাত মেলানো বন্ধ করে, সর্দি-কাশি-জ্বর কারওর হলেই সন্দেহের চোখে তাঁকে দেখবেন? নাহ্! এত বেশি সতর্কতার এখন দরকার নেই, বলছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা কী বলছেন? এই হাতেই নাকি লুকিয়ে অনেককিছু।
তাহলে কী কী আছে আপনার হাতে? চিকিৎসকরা বলছেন:
এক, হাত না মিলিয়ে আপাতত নমস্কার বিনিময় করতে পারেন। দুই, ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। সাবান দিয়ে বা হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করে হাত ধুয়ে নিন বারবার। তিন, চোখে-নাকে-মুখে বারবার, না ধুয়ে হাত স্পর্শ করবেন না। গলা জ্বালা, জ্বর, ঠাণ্ডা লাগলে, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি হলেই চিকিৎসকের ‘হাত’ ধরুন। চার, ট্রেনের হাতল, বাসের হাতল, অনেকের হাতের স্পর্শ লেগেছে এমন যায়গায় হাত লাগাতে হলে, এরপর সময় পেলেই হাত ধুয়ে নিন। পাঁচ, ধুলো ময়লা থেকে হাতকে, সম্ভব হলে নিজেকেই দূরে রাখার চেষ্টা করুন। ছয়, মুখে হাত দিয়ে হাঁচি, কাশি দিলে, রুমালে হাত মুছলে, সেগুলো পরে আবার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন। আর, সাত, অনেকবেশী জল খান। আট, সবজি খেতে অভ্যাস করুন। এবার আসি আর কী কী করতে পারেন?
চিকিৎসকরা আর কী বলছেন:
এক, শরীর খারাপ মানেই সেটা ‘করোনা’ না। সর্দি, কাশি, জ্বর যেকোনও কারণেই হতে পারে। তাই অযথা সবেতেই ‘করোনা’ বলে গুলোবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দুই, নিজে নিজে ডাক্তারি করবেন না। তিন, হাতুড়ে ডাক্তার এড়িয়ে চলুন। চার, খাদ্যের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। ভালো করে কাঁচা সবজি, খাবার তৈরির সরঞ্জাম ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। পাঁচ, বাইরের খাবারের ক্ষেত্রে, বিশেষত রাস্তার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ছয়, ভিড় জায়গায় সার্জিক্যাল টাইপ মাস্ক না, #এন_৯৫ ধরনের উপযুক্ত মাস্ক ব্যবহার করুন। সাত, কারওর সঙ্গে কথা বলার সময়, বিশেষত, এই ধরনের উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কথা বলতে হলে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন। আট, সবক্ষেত্রেই একটু দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলুন। নয়, থুথু-হাঁচি-কফের মতো জিনিসের সংস্পর্শে না আসা। আর, কারওর ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সচেতন হোন। দশ, সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। অন্যের কথা শুনে, যেখানে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না। এগারো, যে কোনও শারীরিক সমস্যাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাঁর কথামতো চলুন। বারো, আক্রান্ত ব্যক্তি বাইরে কম বেরোন। ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলুন। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। তেরো, অযথা আতঙ্কিত হয়ে, যেকোনও সর্দি-কাশি-জ্বর হলেই ভয় পাবেন না। চোদ্দো, আপাতত সংক্রমিত দেশগুলো ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। পনেরো, শিশুদের-প্রৌঢ়দের সাবধানে রাখুন। শিশু অসুস্থ হলে, বাড়িতে রাখুন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন তড়িঘড়ি। কিন্তু ওকে জোর করে স্কুলে পাঠাবেন না। সদা সতর্ক থাকুন, আতঙ্কিত হবেন না।
লেখা: রমেন দাস
04.03.2020
1) Picture Courtesy: Ahmad Gharabli, AFP.
তথ্যসূত্র: বাংলা ও হিন্দি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট, একাধিক চিকিৎসক।