“লাল” ! এই রঙটি পৃথিবীর নানান জায়গায় নানান ভাবে পরিদর্শিত হয়েছে । এমনকি , মানবিক স্তরেও “লাল” রঙের ব্যবহারে রয়েছে অনেক বৈভদ্য । যেমন ধরুন , কোথাও বিপদ বোঝাতে গেলে আমরা কোন রঙের চিহ্ন ব্যবহার করি ? “লাল” । আবার ধরুন, ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবেও এই লাল রঙের ব্যবহার অনবদ্য । ভালবাসার আবার নানা রূপ। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, পোশাকের প্রতি ভালবাসা, আর বাঙালির তো জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার প্রতি ভালবাসা সর্বজনবিদিত। আর মানুষের সাথে “বিরিয়ানি” র সম্পর্ক ভালোবাসার কিংবা বিপদের কারণ হলেও, “বিরিয়ানির হাঁড়ির” সাথে এই “লাল” কাপড়ের সম্পর্ক একটু ঐতিহাসিকই বটে ।
আমরা সবাই জানি, এই ‘বিরিয়ানি” শব্দের উৎস হল পারসি শব্দ “বিরিয়ান” অর্থাৎ ভাজা থেকে । সোজা বাক্যে বলতে গেলে, যে খাবারকে রান্না করার আগে ভাজা হয় । ভারতবর্ষের দিল্লি এবং লখনউ থেকে হয় বিরিয়ানির উত্থান। বিরিয়ানি মোগলাই খাবার এবং তাই অতি আবশ্যিক ভাবেই এর সাথে মুঘল সাম্রাজ্যের এক নিরন্তর যোগাযোগ । মুঘল আমলের রীতি অনুযায়ী খাবার পরিবেশনের সময় ‘লাল’ কাপড় ব্যবহার করা হতো । একই ভাবে, বিরিয়ানির হাড়িতে লাল রঙের কাপড়ের ব্যবহারও হলো মুঘলদেরই রীতি। পরবর্তীকালে, খাবার পরিবেশনে এই প্রথা ও রঙের ব্যবহার লখনউ এর নবাবরাও অনুসরণ করে। সুতরাং , বলা যেতেই পারে আভিজাত্য বা ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই আজকের দিনেও বিরিয়ানির হাড়িতে লাল কাপড়ের ব্যবহার হয়ে আসছে ।
শুধু বিরিয়ানির হাড়ি নয়, লাল কাপড়ের ব্যবহার পৃথিবীর নানান জায়গায় নানান ভাবে হয়ে এসেছে । যেমন ধরুন, পানওয়ালারা লালসালু ব্যবহার করেন পান ঢাকা দেওয়ার সময়, আবার বিদেশে কোনো অতিথি আসলে তখন তাকে লাল গালিচায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় । সত্যি মশাই, কি বিচিত্র এই “লাল” রঙ ।
২৮/০৪/২০২০
ঋতভাষ সাহা
কলকাতা