বিজ্ঞান-ই উপায়, ‘ধর্ম’ কি তাহলে ভারে মা ভবানী?

রুমকি সরকার: আতঙ্কের সমার্থক শব্দ এখন ‘করোনা’(কোবিড-১৯)। তিন অক্ষরের হলেও এই শব্দটা দিনদিন গ্রাস করছে সকলকে! গোটা বিশ্বের কাছে এখন যুদ্ধের স্বরূপ এই করোনা, যার জেরে হেরে গেছে ধর্ম-মন্দির, মসজিদ, গির্জা। দরজা খুলে দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। সমগ্র বিশ্বে তথা ইতালি, আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেন সহ সব দেশেই করোনার থাবায় মৃত্যুর পারদটা বেড়েই চলেছে, পরবর্তী রাস্তায় হাঁটছি আমরা, কোথায় থামবে কেউ জানে না। রোজ রোজ একটু একটু করে আশায় দিন গুনছেন বিজ্ঞানীরা, কিভাবে এই মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করতে তৈরি হবে সেই অস্ত্র, সঠিক ভ্যাকসিন। বলা হচ্ছে, এই মারণ ভাইরাসকে রুখতে প্রয়োজন টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট। যা দাবি করেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বা WHO, তবু হাহাকার পর্যাপ্ত মাস্কের, টেস্ট কীটের, পিপিই-র, দেশজুড়ে চলছে এই হাহাকার। আজ যাঁদের আমরা ভগবান বলে বুঝছি, তবে তাঁদেরই কি জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে? কিন্তু ভেবে দেখুন এই ভারতবর্ষেই বহু ঘটনা সাক্ষী যেখানে আমরাই চিকিৎসদের নিগ্রহ করতে পিছপা হইনা। আমরা ভাবি ভগবানের থেকে ভুল হয়না তবে কেন এই মানুষরূপী ভগবানের প্রয়োজন সর্বত্র?

করোনার জেরে ‘লকডাউন’ টার্মটাই একমাত্র প্রাণে বাঁচার রাস্তা হয়ে দাঁড়ালেও পেটের টান কি সত্যি মানুষদের বাঁচতে দিচ্ছে? ১৩০ কোটির দেশে এই কথাটি তথাকথিত বড়ো সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আমোদ-প্রমোদ, বিশ্রামের সুযোগ হলেও সমাজের নিম্ন আয়ভুক্ত মানুষদের পক্ষে হয়ে উঠেছে দুর্ভিক্ষের কারণ। ভাবতে অবাক লাগে বেশকিছু মাস আগেও দেশের মানুষ মেতে উঠেছিল রামমন্দির নিয়ে, মেতে উঠেছিল এনআরসি নিয়ে, যার পক্ষে-বিপক্ষে, সওয়াল-জবাবে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ তবু মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, ধর্মের প্রতিযোগিতা বুঝি শেষ করলো এই ‘করোনা’ নামক ভাইরাসটি। ভারতবর্ষের মতন জনবহুল দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষার আগেও গুরুত্ব ধর্মের, এই ধর্মের ধ্বজা উড়িয়েই মানবিকতার পরিচয়টা মাপা হয় সকলের। তবু এই দেশ আজও বিবেকানন্দের দেশ, ডক্টর এপিজে আব্দুল কালামের দেশ, তাই ধর্মের মাদুলিটা আজও বহু মানুষ হাতে না পরে সেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশ সেবার কাজে। এইমুহূর্তে কোবিড-১৯-র চিকিৎসার জন্য ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টে’র অভাব দেখা দিয়েছে গোটা দেশে। প্রসঙ্গত, এই রাজ্যে পিপিই-র অভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। রাজ্যসরকারের তরফে করোনা মোকাবিলায় বহু দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া সত্বেও কি থেকে যাচ্ছে সুরক্ষার নামে গলদ?

সবচেয়ে হতাশার বিষয় ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই-র বদলে মিলছে রেনকোট। খবর, এ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে ১ লক্ষ ৮০ হাজার পিপিই দেওয়া হয়েছে, অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। প্রশ্ন একটাই আদৌ কি মিলেছে সঠিক পোশাক? লকডাউনের জেরে রাজ্যে সর্বত্র বন্ধ উৎপাদন, ফলে কলকাতার বড়বাজার থেকে আমদানি করা চিনা ও কোরিয়ান পলি প্রিমিয়ার দিয়েই তৈরি হচ্ছে রেনকোট নামক ‘পিপিই’। এই ক্ষুদ্র অস্ত্র পড়েই যুদ্ধের ময়দানে নামছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাদের নিজেদের অনিশ্চিত জীবন তবুও মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ জারি দিনের পর দিন। তারা জানে না আদৌ তাদের পরিবারের কাছে কখনো ফিরতে পারবে কিনা।

বর্তমান পরিস্থিতি আজ এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, গোটা দেশবাসীর ভাবনার বিষয় যদি মানবিকতা হতো তাহলেই ধর্ম মানবিকতায় এভাবে রাস টানতে পারতো না।

তবুও একটা ক্ষীণ আলো, বাঁচার রসদ যোগায়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আজ বিজ্ঞান, সেখানে হয়তো “ধর্ম” সত্যিই বেমানান।

কলকাতা

০৭.০৪.২০