বাড়িতেই চাল-আলু আইসিডিএস পড়ুয়াদের, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ স্কুল-কলেজ: মুখ্যমন্ত্রী

‘কেরল যা পারছে এ রাজ্য পারবে না কেন?’ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নোটিশের পর এরকম বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। তিনি এসএফআই সমর্থক। আসলে, কেরলে ছোট ছোট পড়ুয়াদের স্কুলে আসা বন্ধ হলেও, পিনারাই বিজয়ন সরকারের তরফে, তাদের জন্য চল, ডাল, সবজি, ডিম, সাপ্তাহিক দুধ পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে বাড়িতেই। এই উদ্যোগ বেশ অবাক করেছিল দেশকে। এবার অনেকটা সেইরকমই সিদ্ধান্তের কথা জানালেন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌ও। সোমবার বিকেলে নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকের পর তিনি জানান, এরাজ্যের আইসিডিএস পড়ুয়ারা স্কুলে না এলেও, তাদের বাড়িতে ২ কেজি চাল আর ২ কেজি আলুর প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হবে।

এর পাশাপাশি রাজ্যের তরফে নেওয়া হয় এক নজিরবিহীন উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবিমার কথা। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য একটুও দেরি করা হয়নি রাজ্যের তরফে। কেন্দ্রের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে সরকার। বারাসাত, রাজারহাটে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে শুরু করে, বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয় তৎক্ষণাৎ। রাজ্যজুড়ে প্রতিটি হাসপাতালকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। করোনা মোকাবিলায় যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, শুধু বোর্ডের পরীক্ষা বাদে, বাকি সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ফের বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের অর্থাৎ সোমবারের এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিন বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য সাথী, পশ্চিমবঙ্গ হেলথ স্কিমের পরেও, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবায় যুক্ত কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত বীমা ঘোষণা নিয়ে, স্বাভাবিভাবেই খুশি স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ। তাঁদের একজনের দাবি, এরফলে কাজের ক্ষেত্রে আরও আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

এদিকে ইতিমধ্যেই, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের জন্য, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সন্দেহজনকদের পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোগের উপসর্গ এবং তাঁর বা তাঁদের তথ্যানুযায়ী; এ-বি-সি-ডি, এই চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রাখা হবে। এদিকে রাজ্যেও প্রয়োগ করা হয়েছে ‘করোনা মহামারী’র বিষয়টি। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে প্রায় ৫ হাজার লোককে রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। সঙ্গে ৩ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের তরফে ২০০ কোটি টাকার তহবিল এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই সমগ্র ভারতজুড়ে কমপক্ষে ১১৪ জন আক্রান্ত এই মারণ ভাইরাসে। মৃত্যু ২ জনের হলেও, এখনও আশঙ্কাজনক একাধিক। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন অনেকেই। এদিকে বিশ্বের প্রায় ১৫০ এর বেশি দেশ করোনার থাবায় জর্জরিত। ইতালির পর, শুধু স্পেনেই মৃত্যু হয়েছে ৩০০ এর বেশি মানুষের। বিজ্ঞানীরা গবেষণারত হওয়ার পরেও, এখনও এই ভাইরাসকে নাগালে পাওয়া যায়নি। একে আটকাতে কোনো পন্থার হদিস দিতে পারেননি তাঁরা। এখানেই চিন্তিত সব মহল। কীভাবে আটকাবে এই ভাইরাস? তা নিয়েই জল্পনা চলছে গোটা বিশ্বেই।

কলকাতা

ছবি সৌজন্যে: টুইটার