‘বাজার করে আনা মানে করোনা ভাইরাসের গৃহপ্রবেশ!’ গুজব না সত্যি? উত্তর দিচ্ছেন চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস।

ভারতে করোনা আক্রান্ত একধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৯৩৫২ ! দেশে ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত। রাজ্যেও আক্রান্ত ক্রমশ বেড়েছে। চালু হয়েছে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার অথবা মুখ ঢেকে বাইরে বেরতে হবে। সচেতনতার প্রসার চলছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলছে নিয়ম ভাঙার খেলা। বাজারে ভিড় জমছে, পাড়ায় আড্ডার বহরও বাড়ছে। অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই। যে অভিযোগের পর, স্বাভাবিকভাবেই হতবাক চিকিৎসকরা। মানুষের একটা বিরাট অংশের এই ‘অজ্ঞানতা’ নিয়ে অবাক তাঁরা। প্রতিদিন ভিড় বাজার দেখে শঙ্কিত তাঁদের অনেকেই। কিন্তু এই বাজার যাওয়া এবং ভিড় করা, মাছ, মাংস, সবজি খাওয়া নিয়েও বিতর্ক উঠছে। রয়েছে বিভিন্ন গুজব। একটা অংশের মানুষের মধ্যে তীব্র অসহযোগিতার বাতাবরণ থাকলেও, অনেকেই সুযোগ বুঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন গুজব! ছড়াচ্ছে মিথ্যে খবর।

কিন্তু কী করে বুঝবেন কোনটা সত্যি? আদেও বাজারে গেলেই হবে করোনা? নাকি মাছ, মাংস, সবজি বাড়িতে আনলেও তাতে লুকিয়ে বিপদ? খেলেই বা কী হতে পারে?

সব উত্তর দিলেন, কলকাতার আরএন টেগোর হাসপাতালের সিনিওর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস।

খবর‌ওয়ালা: বাজারে বহু মানুষের ভিড়, স্যোশাল ডিস্ট্যান্সিং, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

পুলিশের ভূমিকায় সাময়িক ভিড় কমলেও, পরবর্তী সময়ে ফের ভিড় বাড়ছে, এই অসচেতনতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?

চিকিৎসক: দেখুন, প্রতিদিন ভয়ঙ্কর চিত্র দেখছি দেশজুড়ে! দেখতে পারছি দিনে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই মুহুর্তে সচেতনতা আমাদের দিক থেকেই আসতে হবে। আমরা যদি পুলিশ নির্ভরশীল হয়ে যাই, এতে হিতে-বিপরীত হবে।আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সচেতনতা প্রমাণিত হচ্ছে না! আমরাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখব, অন্যকেও বোঝানোর চেষ্টা করব। নাহলেই বিষয়টা পুলিশের হাতে চলে যাবে। এখানে মানুষের যা জনসংখ্যা তা পুলিশ আয়ত্বে আনতে পারবে না। সুতরাং আমাদের জন্য যে নির্দেশিকা তৈরি করা আছে সেটা আমাদের ভালোর জন্য, আমরা যেন কোনভাবেই সেটাকে মনে না করি যে একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসলে, এটা আমাদের লাভের জন্য সরকারের একটা প্রচেষ্টা। এটা সাধারণ মানুষকেই বুঝতে হবে!

খবর‌ওয়ালা: কিন্তু তবুও তো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের অভিযোগ আসছে! সরকার বলছেন বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরতে।

চিকিৎসক: একদম। মাস্ক জরুরি। বাইরে বেরোলে। ভিড়ে গেলে। আর, না মানলে, এখানেই সমস্যাটা ভয়াবহ হতেই পারে! আচ্ছা, আমাদের সকলের তো একটাই চেষ্টা যে, সমূলে এই ভাইরাসকে উৎপাটন করতে হবে। কাজেই আমাদেরকেই বুঝতে হবে আমাদের ঘরে থাকা বা বাইরে মাস্ক পরিহিত থাকাটা কতটা জরুরি। কাজেই চাপের মুখে পড়ে কিছু না করে, প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে আমাদেরই।

খবরওয়ালা: রাস্তা, দোকান, বিভিন্ন জায়গায় অযথা ভিড়। এ তো মারাত্মক বিপদ আনতে পারে?

চিকিৎসক: এই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেলে, সচেতন না হলে, কবে আমার বাড়ির চৌকাঠেই এসে হাজির হবে তা আমরা জানি না!

খবরওয়ালা: বিভিন্নভাবে রোজ বাজার করছেন, কিন্তু আশঙ্কা থাকছে, বাজারে যে মাছ, মাংস আসছে, যে শাকসবজি আসছে, তা আদেও কোথা থেকে আসছে, কতটা সুরক্ষিত ভাবে আসছে সেটা আমরা জানি না। যিনি বিক্রি করছেন, তিনি আক্রান্ত কিনা! আমরা জানি না, তাহলে এই বাজার করা কী কোনভাবেই বিপজ্জনক হতে পারে?

চিকিৎসক: অবশ্যই। কিন্তু আমরা যদি একটু সাবধান থাকি, তাহলে বাজার থেকে বিপদ আসার সম্ভাবনা একদম নেই। আমরা যদি মাছ, মাংস বা শাকসবজি ধুয়ে নিই, হাতটা সাবান জলে একটু ধুয়ে নিই, তাহলে বিপদ হবে না। জামাকাপড় ছেড়ে ঘরে আসি। মূলত একটু পরিচ্ছন্ন যদি থাকি। সুরক্ষিত থাকব। শুধু করোনা না, অপরিচ্ছন্নতার সুযোগে অন্য বিভিন্ন ভাইরাস আসতে পারে। বহুবছর আগে থেকেই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, এই ক্ষুদ্র জীবাণু, আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে চোখে নাকে মুখে হাত দেওয়ার মাধ্যমে। এবং সেটা আক্রমণ করছে মূলত শ্বাসনালী ও ফুসফুসে।

খবরওয়ালা: তাহলে সব মেনে চললে, বাজার থেকে আনা মাছ-মাংস, সবজি খাওয়া যাবে? ভয় নেই?

চিকিৎসক: নাহ্, কোনও ভয় নেই। কিন্তু, যদি সেটা আপনি অত্যন্ত পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে বাড়িতে এনে রান্না করেন তবে। সেটা না মানলে সমস্যা আসতেই পারে। কাজেই, এই নিয়ম মানলে, মাছ-মাংস খেলে কিছু হবে না।

খবরওয়ালা: অনেকেই সবজি, মাছ, মাংস, বাজার থেকে নিয়ে এসে গরম জলে ধুয়ে নিচ্ছেন!

চিকিৎসক: খুব ভালো করছেন। তবে গরম জ্বলে না ধুয়ে নিলেও হবে।আবার বলছি, একটু পরিচ্ছন্ন আর সতর্ক থাকলে কিছু লাগবে না। শুধুই, জমানো জলে না, রানিং ওয়াটার ব্যবহার করলেই হবে। এর কথাই বারংবার বলা হচ্ছে।

খবরওয়ালা: অর্থাৎ বাজার করে আনা মানেই নভেল করোনা ভাইরাসের গৃহপ্রবেশ নয়?

চিকিৎসক: না। আপনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে, মুখ ঢেকে, সামগ্রিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলেই, ভয়ের কোনও কারণ নেই। কিন্তু নিজের স্বার্থে, সকলের জন্য সচেতন হতেই হবে। করোনা আটকাতে এটাই হবে মূলপথ। তাই, মানতেই হবে নিয়ম। অযথা সঠিক নিয়ম পালন না করলে, মারাত্মক বিপদ আসতে পারে।

কলকাতা

১৩.০৪.২০২০

Cover Picture Courtesy: Facebook and Dr Arindam Biswas

Dr. Arindam Biswas, Medicine

RN Tagore Hospital, Kolkata

Edited