বাঁচার তাগিদে প্রশ্ন উঠলে, অপরাধ করবে কে?–নয়াদিল্লি থেকে লিখছেন, আইনজীবী সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায়।

আজ আমার হাতে হঠাৎ অনেক সময়। রোজ সকালে উঠে, কালো কোট পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পেয়েছি। সারাদিন এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্ট, চরকির মত ঘুরে বেড়ানো। মাঝে মাঝে, খাওয়াটাও ভালো করে হতো না! ব্যক্তিগত জীবনের এত ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেয়েছি খানিকটা। তার ওপর আবার ঘন ঘন মক্কেলদের ফোন!  ভাগ্যি ভালো, কানে মোবাইল লাগিয়ে কথা বলতে হয় না। আগের গাড়িতে সে ব্যবস্থা ছিল না, বেশ কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে বচসাও হয়ে গেছে এই নিয়ে।  দিল্লীতে ধরলেই ফাইন!  তবে এখানে আইনজীবীদের পুলিশ একটু সমীহ করে চলে। রাতে ফেরার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না।  কবে, কে, কখন, কোথাথেকে ডাক দেবে আর তখনই আবার বেরোনো।  মাঝরাত পার খুব একটা না হলেও, লোকসভা নির্বাচনের সময় রাতে বাড়ি ফেরার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না।

আজ আমি গৃহবন্দি! শুধু আমি নই , সমগ্র দেশ। এমনি আগে কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট –  সব জজেরা বাড়িতে আটক। সিনিয়র অ্যাডভোকেট, জুনিয়র অ্যাডভোকেট – কোনো তফাৎ নেই আর। এদিকে, দিল্লি বার কাউন্সিল, ইতিমধ্যে একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে আইনজীবীরা রোজকার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল এবং আদালতে যেতে পারছেন না, তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এদিকে, বর্তমানে, বন্দিদের জেলে ঢোকানো কম, বাইরে বের করা হচ্ছে বেশি।

তবে, বিভিন্ন জায়গায় নানান আলোচনার মধ্যেও একটা প্রশ্ন উঠছে, দিনে দিনে অপরাধ কি বাড়ছে না কমছে ? সবাই তো বাড়িতে বন্দি। এই দশ দিনে কি কোনো নতুন মামলা তৈরি হয়নি, দেশের কোনও আদালতে ? হয়েছে তার সংখ্যা অনেক কম। এই নিঃশব্দতা কমিয়েছে অপরাধের প্রাচুর্য। শান্তি দিয়েছে হিংস্রতায়। এমনিতেই কোটি কোটি মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে, আদালতে নিষ্পত্তির আশায় দিন গুনছে। তবুও তো তৈরি হচ্ছে মামলা। ঘটনার ঘনঘটা ঘটছে, প্রতিনিয়ত।

এদিকে, বাড়িতে থেকে কাজ করা যায়, তবে মহামান্য বিচারক কোথায় ? কেস নম্বর কোন নোটিশ বোর্ডে দেখব ? আমার সহকারীদের কি করে পাব? সবমিলিয়ে দেশের আইন ব্যবস্থা, তথা আমরাও এক ভীষণ কঠিন সময়ের মধ্যে রয়েছি! প্রতিটি মুহূর্তে এই কঠিনতর পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। আইনের কাজ প্রায় বন্ধ। আদালতের দরজা বন্ধ, কিন্তু এইমুহুর্তে এই বন্ধ প্রভাব ফেলছে না সমাজে, কারণ, সকলেই ব্যস্ত জীবন বাঁচাতে! জীবনের তাগিদেই যদি প্রশ ওঠে, তাহলে আইন ভাঙবে কে?

নিজেকে বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে ঘোষিত লক্ ডাউন পালন করুক সবাই। করোনা পরাস্ত হোক জনতার কাছে। আজ আইনের ধারক রাও বন্দি বাড়িতে। সকলের জন্যই, এই বন্দি থাকাটাই এখন সর্বাধিক শ্রেয়। তাই, সবার আগে, নিজেকে সুস্থ রাখাটা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। আশাকরি,

এই নিস্তব্ধতা কাটিয়ে উঠে নতুন আলোয় ভরে উঠবে সবার জীবন। আবার খুলবে আদালত, আইনজ্ঞদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে চারিদিক। সব অপরাধ নির্মূল হয়ে যাবে এখনের মতো! আবারও হয়তো, দ্রুত ফিরে আসবে আদালতে ফেরার দিন!

#করোনা_কথা

লেখা:সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায়

আইনজীবী, নয়াদিল্লি

©️www.khoborwalatv.com

০৪.০৪.২০২০