‘লকডাউন’, বন্দিদশা- সামগ্রিকভাবে গৃহবন্দিত্বের মধ্যেই, বিভিন্নভাবে অনিশ্চিয়তা বাসা বাঁধছে একাধিক ক্ষেত্রে। ব্যক্তি বা কোনও প্রতিষ্ঠানের দিনযাপনের মাঝেও এই স্তব্ধতার প্রভাব পড়েছে অনবরত। সেই সমস্ত ব্যতিক্রমী দিক বা বিষয়েই আলোকপাত করছি আমরা। আজ আমাদের বিশ্লেষণে ‘বাংলা পঞ্জিকা…!’
পর্ব ১
________________________________________
কথায় বলে ‘হাতে পাঁজি মঙ্গলবার’। আপামর বাঙালি বিয়ে হোক কিংবা কোনও শুভ কাজ, গৃহপ্রবেশ কিংবা উপনয়ন এই সবকিছুই যেটা ছাড়া অসম্পূর্ণ তা হল পঞ্জিকা। স্বাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত হন কিংবা পুরোহিত, সাধারণ গৃহস্থ কিংবা কোনও পূজা কমিটি পঞ্জিকার ব্যবহার সর্বজনবিদিত।
কিন্তু লকডাউনের জেরে এবার পঞ্জিকা ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। পেরিয়ে গিয়েছে বাংলার নববর্ষ। অক্ষয় তৃতীয়াও চলে গিয়েছে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দুটি বড় অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে করোনার জন্যে। গৃহবন্দি বাংলার মানুষ। বন্ধ দোকানপাট ব্যাবসা। হাতে আসেনি পাঁজি।
এ ব্যাপারে ‘গুপ্ত প্রেস’ পঞ্জিকার কর্ণধারকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে, খবরওয়ালার প্রতিনিধিকে তিনি জানান, ‘পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া কেটে গেলেও লকডাউনের জন্যে কোথাও পঞ্জিকা সরবরাহ করা সম্ভবপর হয়নি।’ কিন্তু মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তাঁরা পঞ্জিকার অনলাইন সংস্করণ বের করেছেন পিডিএফ আকারে। যাতে অন্তত কিছু মানুষের সুরাহা হয়। নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে যা সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি জানান মানুষের হাতে যাতে পঞ্জিকা পৌঁছায় তার ব্যাপারে প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, লকডাউন না মিটলে কোনও ভাবেই কিছু করা সম্ভব না। এছাড়া এই পঞ্জিকা শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের কাছে ঋণের আবেদন করলেও কোনওরকম মৌখিক বা লিখিত সাহায্যের আশ্বাস মেলেনি এখনও পর্যন্ত।
তিনি বলেন সমস্ত পঞ্জিকা বাঁধাই হয়ে তৈরি হয়ে রয়েছে কিন্তু কলেজ স্ট্রিট, বইয়ের দোকান সমস্ত বন্ধ থাকায় একটি কপিও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
বাকি সমস্ত পঞ্জিকার হাল কমবেশি একই।
ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষকে।
শুধু পঞ্জিকাই নয় পঞ্জিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ক্যালেন্ডার শিল্পও বেজায় ক্ষতির মুখ দেখেছে। এ ব্যাপারে শিয়ালদার একটি প্রিন্টিং হাউসের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লোকজন আগে অন্ন সংস্থান করবেন তারপর ভাববেন অন্য কিছু। কাজেই ক্যালেন্ডারের বিক্রিবাটা যে খুবই কম হবে সেটাই দস্তুর। তিনি বলেন কালেন্ডারগুলি ৩-৪ মাস ধরে তৈরি হতে থাকে। সবকিছু ছাপিয়ে তৈরি করে পড়ে আছে কিন্তু ডিলারদের দেওয়া সম্ভব হয়নি লকডাউনের জন্যে। আর ক্যালেন্ডার যেহেতু মরশুমি ব্যবসা তাই পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া চলে গেলে ক্যালেন্ডার বিক্রিতে ভাটা পড়ে। কাজেই লকডাউন মিটলেই সুরাহা হবে এমনটা নয়।
তিনি জানান লকডাউন মিটলে ‘বৈঠকখানা ব্যবসায়ী সমিতি, পেপার এন্ড প্রিন্টিং হাউস’ এর পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে ক্ষতির ব্যাপারে আবেদন করার চিন্তা ভাবনা করবেন।
কিন্তু আদেও কতটা সুরাহা হবে তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দিহান তাঁরা।
সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ। চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে।