হ্যাঁ। সত্যি হাসতে বা হাসানোর লোক আজ যেন বিরল, চোখে জলের পাহাড় সামিল করতে করতেই যেন দিনযাপন। কাঁদতে বা কাঁদাতে তো সবাই পারে। তবে হাসানোর কান্ডারি কই?
চোখের জলে ভিজে থাকা উঠোনে এককণা হাসির আভা এনে দেয় হয়ত এই বিশেষ দিনগুলো! সোশ্যাল মিডিয়ার বেড়াজালে, ফেসবুকের নিউজ-ফিডে অসংখ্য পোস্ট, খুশি থাকার চেষ্টা! নাকি সত্যিই খুশি থাকা? প্রশ্ন ওঠে বারবার। আসলে, আমাদের এই
চোখের জলেই লুকিয়ে থাকা, রোজ যে মেয়েটা ছুটে যাচ্ছে নিজের গন্তব্যে, সেও হয়তো দিনের শেষে জীবন-সংগ্রামের জন্য কোনও কবির পাতায় স্থান করে নিয়েছে, কবির মুখের ক্ষণিক হাসির কারণ হতে পেরেছে!হয়তো অভাগা কোনও পুরুষ, কোনও বিষয়ে হাসির কারণ হতে পেরেছে! মিথ্যে হোক আর সত্যিই হোক, কিছু খারাপের ভালো থাকাও যেন খুশির কাজ করেই! তবে সত্যিই কি মানুষজন এত্তটা খুশি!
যে ছেলেটা রোজ হার-ভাঙা পরিশ্রম করছে, মেয়ের হাতে একটা ছোট্টপুতুল এনে দিচ্ছে! মেয়ের মুখের সেই তীব্র হাসি, তাঁর খুশির মাত্রাকে দ্বিগুণ করে দিয়ে থাকে! সত্যিই, তাই আজ যেন, মিথ্যের তীব্র মায়াজালে, আজ হাসির আর দুঃখের তীব্র সংগ্রাম ঘটে চলেছে নিরন্তর ! দু’টোর পার্থক্য করতে করতেই যেন, কিঞ্চিত ভুল করে ফেলেছি আমরাও! ছোট ছোট ভালথাকাকে এড়িয়ে খারাপ থাকাকেই প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করছি বারবার।
এই আবহের মধ্যেই, একটি দিনকে উদযাপন করা হয়। একটি দিনকে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সুখ দিবস’। যা, প্রতিবছর ২০ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। মূলত, এই ধারণাটি তৈরি করা হয়েছিল, বিশের দশকের প্রথমপর্বে। জাতিসংঘের ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডা’র প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী, জেম ইলিয়েন, সকল মানুষের মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ‘সুখ’কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সূচনা করেছিলেন। যা মূলত, নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, তত্ত্ব এবং দর্শন হিসেবে মানুষ এবং ক্যাপিটালিজম, যা জাতিসংঘের বিশ্ব লক্ষ্যঅর্জন করে। বলা হয়, পৃথিবীতে সমস্ত জীবনের সুখ, মঙ্গল ও স্বাধীনতা অর্জন করে!
২০২০ সালের আন্তর্জাতিক ‘সুখ দিবস’ প্রচার দিবসের, থিমটি হল ‘সবার জন্য সুখ’! একসঙ্গে উদযাপনের জন্য, আন্তর্জাতিক সুখ দিবসের জন্য, জাতিসংঘের সচিবালয়, একটি প্রকল্পের অধীনে, 8.৮ বিলিয়ন মানুষ এবং ২০৬ টি দেশ ও অঞ্চলকে “গ্লোবাল হ্যাপিনেসের দশ পদক্ষেপ” গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বসুখের দশটি পদক্ষেপ হল “যে কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশ, আন্তর্জাতিক সুখের দিনটি এবং পুরো সুখের সপ্তাহ জুড়ে আন্তর্জাতিক সুখের দিনটি উদযাপন করতে পারে, পাশাপাশি সুখ, মঙ্গল ও অগ্রগতির জন্য দশটি সহজ পদক্ষেপ নিতে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে সমস্ত জীবনের স্বাধীনতা, যখন জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে!
আচ্ছা এই যে এত প্রয়াস সত্যিই কি খুশির প্রতিধ্বনি নাকি এর মধ্যেও কণ্ঠরোধ, এর মধ্যেও লুকিয়ে থাকবে চিরাচরিত অবসাদ। রোগভোগের যন্ত্রণা। ভালো না থাকার উপজীব্য! সবটাই বলবে সময়।
লেখা: শিল্পা চ্যাটার্জী
ছবি সৌজন্যে টুইটার