কলকাতা: দেখলে মনে হতে পারে, কোনও বনধ! অথবা ছুটির দিনের কোনও রাস্তা। প্রায় ফাঁকা রাস্তা ঘাট। লোকজন বেশ কম। যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সেটাও অনেক কম। হ্যাঁ! কলকাতা শুধু নয়, কলকাতার পার্শ্ব বর্তি জেলাগুলো থেকে শুরু করে অধিকাংশ জায়গাতেই একই অবস্থা। প্রায় অঘোষিত বনধের চেহারা নিয়ে নিয়েছে গোটা এলাকা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মধ্যেই যেন একপ্রকার আশঙ্কা অথবা সচেতনতা গ্রাস করেছে বাংলার বড় অংশের জনতাকে। কাজ না থাকলে কম বাইরে যান, সরকারের এই নির্দেশকেই যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন তাঁরা।
বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ অনেক কোম্পানি এখনও দে য় নি। সংবাদমাধ্যম এর বহুকর্মী থেকে জরুরি পরিষেবা, এমনকি যাঁরা দিনমজুরের কাজ করেন তাঁদের যেতে হচ্ছে রোজ। ট্রেনে-বাসে একটু ভিড় থাকলেও, সেটাও তুলনায় কম। রাস্তাতেও লোকের আনাগোনা হঠাৎ খুব কম। ‘করোনা’র দৌলতে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং তো দূর, কোনও আলোচনাও নেই পথেঘাটে।
সমগ্র কলকাতা, সল্টলেক অফিসপাড়া ঘুরে এমনই চিত্র চোখে পড়ছে। যা দেখে তাজ্জব কেউ কেউ।
সল্টলেক সেক্টর ওয়ানের ব্যস্ততম এলাকা পিএনবি। সেখানেই চাকরি করেন সুরজিৎ মণ্ডল। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে জানালেন, “আর বলবেন না, বড্ড চাপে আছি। কোম্পানির কাজ। আসতে হবে। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা অটো বাস কম। লোকজন কম। এক করোনা সবাইকে এভাবে ঘরে ঢুকিয়ে দিল ভাবিনি। তবে ভালো লাগছে, মানুষ বুঝছে।” আরেকজন বেরিয়েছিলেন কিছু জিনিস কিনবেন বলে, তিনি বললেন, “দেখুন, নুন ভাত খেতে পেলেও বাঁচা যায়, কিন্তু এই রোগ হলে বা ছড়ালে, বাঁচতেই সমস্যা হবে, তার থেকে একটু সচেতন থাকলে ক্ষতি কী!”
বিশেষজ্ঞদের একাংশও বলছেন এমনই। তাঁরাও বলছেন, সরকারের সচেতনতামূলক প্রচার মানুষের মধ্যে ভালো কাজ করছে। মানুষ বুঝছেন, তাই তাঁদের বাইরে বেরোতে অনীহা।
আদতে, দেশজুড়ে এক বন্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের পর রাজ্যে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। আক্রান্তের সংখ্যা ভারতে ছাড়িয়েছে ১৫৫ এর বেশি। বাংলায় এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ১। আশংকা করা হচ্ছে আরও বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যা। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, প্রায় সবদেশ থেকেই আক্রান্তের খবর আসছে দ্রুত। চিনের পর, ইউরোপে এক ধাক্কায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। স্পেনের পর কানাডার মতো দেশেও লকডাউন করা হয়েছে। অর্থনীতির অবস্থা করুন। কবে এই ক্ষতিপূরণ হবে, তা নিয়েও দ্বিধায় প্রত্যেকেই।
কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার পাশাপাশি একটা আশঙ্কা যে তৈরি হয়েছে, তা কলকাতার অথবা কলকাতার আশেপাশের এলাকার রাস্তার চিত্র দেখলেই অনুধাবন করা যায়।
১৯.০৩.২০২০
কলকাতা