নারীদিবসেই ব্রহ্মা জানবেন ‘গোপন কম্মটি’, এখন থেকেই প্রস্তুত ‘শবরী’ ঋতাভরীও।

২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করার পর এখনও পর্যন্ত প্রায় এক ডজনেরও বেশি ছবি তৈরির সাফল্যের পর, উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউজে’র পরবর্তী ছবির নাম ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। ইতিমধ্যে গতবছর মহালয়ার দিনেই প্রকাশ পেয়েছিল ছবির ফার্স্ট লুক। তাতে আমরা দেখতে পেয়েছি মেগা ধারাবাহিকের বহুল প্রচলিত মুখ, ‘ললিতা’ ঋতাভরী চক্রবর্তীকে। যেখানে একা হাতে দশদিক সামলাচ্ছেন তিনি। মা দশভূজার প্রতিভূ হয়ে উঠেছেন তিনি। ফার্স্ট লুকে আমরা তাঁকে দেখছি তিনি দশহাতে নিয়ে রয়েছেন যথাক্রমে একটি শঙ্খ, একটি ঘন্টা, একটি পঞ্চ প্রদীপ, দুটি পদ্ম, একটি ক্যালেন্ডার, একটি হটব্যাগ, একটি পঞ্জিকা, আবার একটি স্যানিটারী ন্যাপকিন। খাপ খাচ্ছে না তো! এইরকম ছবিটি জনসমক্ষে আসার পরেই দর্শকের মনে উত্তেজনা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। তখন জানা যায়, পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা সেনের পরবর্তী ছবিতে তিনিই কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন।

মা দুর্গাকে এইরূপে এর আগে দেখেছেন কখনও? – এবার দেখতে চলেছেন বাংলার সিনেমাপ্রেমীরা। কিন্তু আজকের আমাদের সমাজকে শোধরানোর জন্য এরকমই মা দরকার, মনে করেন সমাজের অধিকাংশ। প্রসঙ্গত, এই ছবিটি একটি নারীকেন্দ্রিক ছবি। মুক্তি পাবে নারীদিবসের সময়েই। আসলে, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে আজও একটা অংশের মধ্যে একটি খারাপ ধারণা ঘোরে। মাসিক যে একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা, সেটি সেই অংশের মানুষ বুঝেও বুঝতে চান না। অনেক খারাপ কথা বলেন। এবার সেই ধারণা থেকে বের করে আনার একটি প্রয়াস চালিয়েছেন বাঙালী পরিচালক। এর আগেও আমরা অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘প্যাডম্যান’ ছবিতে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্পর্কে ওয়াকিবয়াল করেছিলেন পরিচালক। কিন্তু সেই ছবি থেকে এই ছবি কতটা আলাদা তা মুক্তির পরেই বোঝা যাবে। বর্তমানে চারিদিক অশুভ, এদিকে নোংরা চিন্তা ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে। মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়েই চলেছে। এই জগৎ যারা সৃষ্টি করল তাঁদের কি এটাই প্রাপ্য? এই ভাবনাটা মাথায় এনেছে কখনও আজকের সমাজ। প্রতিটা জীবের জন্মই হয় একজন মেয়ের গর্ভ থেকে। মেয়েরা যদি না থাকত এই জগৎ সংসার অচল হয়ে যেত। সুতরাং মেয়েদের কি একটু সম্মান দেওয়া যায় না? সেই ভাবনাটাই তুলে ধরেছেন পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায়, উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউজের মধ্য দিয়ে। তাই ফার্স্ট লুক রিলিজের দিন প্রোডাকশন হাউসের তরফে পোস্টারের ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, ‘পুজো মানে কি কেবল নতুন জামা? নতুন ভাবনা নয়? আসুন না, এই পুজোয়, লিঙ্গবৈষম্যের রাজনীতিতে মেয়েদের জন্য যা কিছু নিষিদ্ধ তাকে ভাঙি? কারণ, মাও তো একজন নারী!’ ছবি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ঋতাভরী জানান, শিবপ্রসাদদা এবং নন্দিতাদির সাথে তাঁর এটাই প্রথম ছবি, সেই তিনিও ভীষণ রকম উত্তেজিত, ছবিতে তিনি একজন মহিলা পুরোহিতের চরিত্রে পাঠ করছেন। আজকাল মেয়েদের গমনাগমন সর্বত্রই। সবাই জানেন যে বিমানচালক থেকে বাস ড্রাইভার সবকিছুতেই মেয়েরা পারদর্শী। সুতরাং পুরুত হলেই বা সমস্যা কোথায়? পুরুত মশাই তো অন্নপ্রাশন, বিয়ে, পূজার্চনা থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধ সব কাজেই লাগে। তবে এবার পুরুত মশাই আর বলা যাবে না এইটুকুই যা খেয়ালে রাখতে হবে! ছবির কাহিনীটা অনেকটা এরকম হবে বলে শোনা যাচ্ছে, যেখানে ঋতাভরী বিয়ে দেওয়া, গৃহপ্রবেশের পুজো করা সবই করেন। তাঁর চরিত্রের নাম ‘শবরী’। ছবিতে ঋতাভরী মন্ত্র পাঠ করে বিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সেই মন্ত্র শুধু সংস্কৃতে নয়। বলা বাহুল্য অনেক সময় পুরোহিতের খটমট সংস্কৃতে বলা মন্ত্র বুঝতে অসুবিধা হয়, তাই ওসব পাঠ চুকিয়ে এবার পরিষ্কার বাংলায় মন্ত্র পাঠ করে এবং আরো ভালো বোঝার সুবিধার্থে জায়গা বিশেষে আবার ইংরেজি টার্মও ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই বিয়েতে কোন বাবা কন্যাদান করেন না। মেয়েও শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার সময় কনেকে করে মায়ের আঁচলে চাল উল্টে বলে না ‘মা আজ তোমার সব ঋণ শোধ করে দিয়ে গেলাম।’ বরং সবার সামনে বরের হাত ধরে নাচতে নাচতে সে শ্বশুরবাড়ী যায়। বিয়েবাড়ীতে সানাইয়ের কোন নামগন্ধ নেই, তার বদলে চলছে ডিজে আর রবীন্দ্র সঙ্গীত। অর্থাৎ পরিচালক বাঙালী বিয়ের রীতিতে আমুল পরিবর্তন এনেছেন। এই ছবিতে ঋতাভরীর বিপরীতে রয়েছেন কবীর সিং এবং দৃষ্টিকোণ এর বিখ্যাত অভিনেতা সোহম মজুমদার। এই প্রথম তাঁকে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে। তাঁর চরিত্রের নাম ‘বিক্রমাদিত্য’। চিত্রনাট্য লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ‘মুখারজীদার বউ’ ছবিতে চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন তিনি। সঙ্গীতে রয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ছবির মাধ্যমে সমাজ কতটা সচেতন হবে তা জানার জন্য ৬ই মার্চ অবশ্যই হলে গিয়ে দেখতে হবে।

Written by Joysurya Ghosh

Edited by Ramen Das

Khoborwala Tv

29