পুরো ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে বারবার ধ্বনিত হল করোনা মোকাবিলায় গোটা দেশ কিভাবে একজোটে লড়াই করছে তারই প্রতিচ্ছবি। প্রধানমন্ত্রী যেন ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি জনতার কণ্ঠ হয়ে উঠলেন আজ।
শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন সময়টা কঠিন, লড়াই চলছে চলবে। এই লড়াইকে তিনি এই বিশাল উপমহাদেশের ১৩০কোটি মানুষের লড়াই বলে সম্বোধন করেন। তিনি বলেন এই লড়াই।
জনগণ পরিচালিত। তাই ভবিষ্যতে যতবার সারা বিশ্বে করোনার ইতিহাস চর্চা হবে, বারবার ভারতের এই লড়াইকে কুর্নিশ করবে সবাই। তিনি বলেন এই দেশ গরিবির সঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটাই একমাত্র উপায় করোনা মোকাবিলা করার। তিনি বলেন ভারতবর্ষের প্রতিটি গলি, মহল্লা, গ্রাম যেখানেই দেখা যাক মানুষ একজোট হয়েছে। গরিব মানুষকে খাবার দেয়া থেকে শুরু করে রেশন বন্টন কিংবা লকডাউন মেনে চলা সবক্ষেত্রেই গোটা দেশ আজ এক মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে ডাক্তারদের সম্মান জানানো হোক বা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন আজ সহস্র কোটি ভারতবাসীর প্রাণ এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে।
কৃষকদের আকুণ্ঠ প্রশংসা করে তিনি বলেন আজ এই মহামারীতে কৃষকভাইরা দিনরাত পরিশ্রম করছে ফসল ফলাচ্ছে যাতে ভারতবর্ষের কোনো একটা কোনাতেও যেন কেউ খিদে পেটে না থাকে। নানান জায়গা থেকে পিএম ফান্ডে টাকা আসছে। কেউ গরিবদের খাওয়াচ্ছে, কেউ মাস্ক বানাচ্ছে। তিনি বলেন এই এতকোটি মানুষের লড়াই আমাদের সাফল্য এনে দেবে। তিনি বলেন বিগত কিছু বছর যাবৎ দেশ বদলাচ্ছে। নানান পরিস্থিতিতে মানুষ মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের এই লড়াইকে তিনি বিনম্র শ্রদ্ধাপূর্বক কুর্নিশ জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য হলো তিনি আজ ঘোষণা করেন করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার থেকে একটি নতুন ডিজিটাল পোর্টাল চালু হতে চলেছে। কোভিডওয়ারিয়ার্স নামে covidwarriors.gov.in নামে এই পোর্টালের মাধ্যমে গোটা দেশবাসী, সামাজিক মাধ্যম এবং প্রশাসন একজোটে কাজ করতে পারবে। বহু ডাক্তার, নার্স, আশাকর্মী, এনএসএস ইত্যাদি বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত লোক যোগদান করেছেন এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে।
তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান এই পোর্টালের মাধ্যমে সবাইকে যুক্ত হয়ে করোনা লড়াইয়ে সৈনিক হতে।
তিনি জানান ডাক্তার, নার্স, প্রশাসন, রেল দপ্তর, বিমান পরিষেবা, ব্যাংক পরিষেবা এবং আরও সব দপ্তরগুলি একযোগে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে যাতে লকডাউনের মানুষকে কম সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি ‘লাইফলাইন উড়ান’ এর উল্লেখ করে বলেন আজ সমগ্র বিশ্বে পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ।
দেশের সবকটি ক্ষেত্র যেমন মেডিক্যাল সার্ভিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান , শিল্পক্ষেত্র সবকটি ক্ষেত্র এগিয়ে এসে একযোগে পায়ে পা মিলিয়ে চলছে। তিনি এই সমবেত লড়াই এই টিম স্পিরিটকে অভিবাদন জানিয়েছেন। তিনি আজ ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মী সহ পুলিশদের উপর ঘটে চলা ঘটনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন দেশকে করোনা মুক্ত করার জন্যে এনাদের সুরক্ষা প্রদানের ব্যাপারে দেশবাসীকে বিশেষ অনুরোধ করেন।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, যত্রতত্র থুতু না ফেলা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং দেশবাসীকে এগুলি যথাযথ পালন করতে অনুরোধ করেন। এছাড়া আয়ুশ মন্ত্রক দ্বারা যে গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে করোনা নিয়ন্ত্রণে তার উল্লেখ ও করেন। তিনি দেশবাসীকে অক্ষয় তৃতীয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন আমাদের মানবিক বোধ জাগ্রত হোক, অক্ষয় হোক। আমাদের পরিবেশ, নদী, জল, বাতাস অক্ষয় হোক। অক্ষয় হোক পৃথিবী।
পাশাপাশি তিনি পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংযম, সদ্ভাবনা, সংবেদনশীলতা এবং সেবার মানসিকতা তৈরির কথা বলেন।
?মূলত, আজকের এই ‘মন কি বাতে’ তিনি যা বলেন, (পিআইবি, PIB দ্বারা বাংলা তর্জমা, হুবহু তুলে দেওয়া)::
“আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার।
আপনারা সবাই লকডাউনের মধ্যে ‘মন কি বাত’ শুনছেন। এই মন কি বাতে মনের কথার জন্য আসা পরামর্শ, ফোন কলের সংখ্যা, সাধারণভাবেই অনেক গুণ বেশি। অনেক বিষয়কে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে আপনাদের এই মনের কথা, আমার কাছে পৌঁছেছে। আমি চেষ্টা করেছি যে, এগুলিকে যতবেশি পড়তে পারি, শুনতে পারি। আপনাদের বক্তব্য থেকে অনেক এমন বিষয় জানতে পেরেছি, যেগুলি, এই দৌড়ঝাঁপের মধ্যে আমরা লক্ষ্যই করি না। আমারও মন বলে যে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই মন কি বাতে তেমনই কিছু বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরি।
বন্ধুগণ, ভারতের করোনা প্রতিরোধী লড়াই সঠিক অর্থে পিপল ড্রিভেন, জনগণ পরিচালিত |ভারতে করোনা-র বিরুদ্ধে লড়াই জনগণ লড়ছেন, আপনারা লড়ছেন, জনগণের সঙ্গে মিলে সরকার, প্রশাসন লড়াই করছে, ভারতের মতো বিশাল দেশ, যা উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট, দারিদ্রের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক লড়াই লড়ছে। তার কাছে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার এবং জেতার এই একটাই পদ্ধতি রয়েছে। আর, আমরা ভাগ্যবান যে আজ, গোটা দেশ, দেশের প্রত্যেক নাগরিক, প্রতিটি মানুষ, এই লড়াইয়ের সিপাই , লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনারা যেদিকেই তাকান, আপনারা অনুভব করবেন যে, ভারতের লড়াইয়ের চালিকা শক্তি হল জনগণ।
যখন সারা পৃথিবী এই মহামারীর সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়ছে, ভবিষ্যতে যখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে, এর রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে, আমার বিশ্বাস যে, ভারতের এই পিপল ড্রিভেনলড়াই-এর আলোচনা অবশ্যই হবে। গোটা দেশে, পাড়ায় পাড়ায়, জায়গায় জায়গায় আজ মানুষ পরস্পরের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দরিদ্রদের জন্য আহার থেকে শুরু করে রেশনের ব্যবস্থা করা,লকডাউন পালন করা, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা,মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, চিকিৎসা সরঞ্জামগুলি দেশের মধ্যেই তৈরি করা – আজ গোটা দেশ এক লক্ষ্য, এক দিশা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। হাততালি, থালা, প্রদীপ, মোমবাতি – এই সমস্ত বিষয় যেসব ভাবনার জন্ম দিয়েছে, যে উদ্দীপনা থেকে দেশবাসী কিছু না কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে – এই বিষয়গুলি প্রত্যেককে প্রেরণা জুগিয়েছে। শহর হোক কিংবা গ্রাম, এমন মনে হচ্ছে, যেন দেশে একটি অনেক বড় মহাযজ্ঞ চলছে, যাতে প্রত্যেকে নিজের অবদান রাখতে আগ্রহী। আমাদের কৃষক ভাইবোনদেরই দেখুন – একদিকে তাঁরা – এই মহামারীর মধ্যেই নিজেদের ক্ষেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, আর এটাও ভাবছেন, দেশে কেউ যেন খালিপেটে না ঘুমায়। প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এই লড়াই লড়ছেন। কেউ ভাড়া মকুব করে দিচ্ছেন, আবার কেউ নিজের সম্পূর্ণ পেনশন কিংবা পুরস্কারের অর্থ পি.এম. কেয়ারসতহবিলে জমা করছেন। কেউ ক্ষেতের সমস্ত সবজি দান করে দিচ্ছেন, আবার কেউ প্রতিদিন কয়েকশো গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়াচ্ছেন। কেউ মাস্ক বানাচ্ছেন, আবার আমাদের মজুর ভাইবোনেরা কোয়ারেনটাইনে থেকে যে স্কুলে থাকেন, সেটির মেরামতি এবং দেওয়াল রঙ করছেন।
বন্ধুগণ, অন্যদের সাহায্যের জন্য আপনাদের মনে, হৃদয়ের কোনও প্রান্তে , কিছু করার যে আকুতি আছে না! এটাই, এটাই করোনার বিরুদ্ধে ভারতের এই লড়াইকে শক্তি যোগাচ্ছে। এটাই এই লড়াইকে সঠিক অর্থে পিপল ড্রিভেন করে তুলছে। আর আমরা দেখেছি, বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশে এই মেজাজ তৈরি হয়েছে, নিরন্তর শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তা সে, কোটি কোটি মানুষের গ্যাসসাবসিডি বা ভর্তুকি ত্যাগ করা হোক, লক্ষ লক্ষ প্রবীন নাগরিকের রেলওয়ে সাবসিডি বা ভর্তুকি ত্যাগ করা হোক, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নেতৃত্ব প্রদান হোক,শৌচালয় নির্মাণ হোক – এরকম অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। এই সব বিষয় থেকে বোঝা যায়, আমাদের সবাইকে এক মন, এক শক্তিশালী সুতোয় মালা গাঁথছে। এক হয়ে দেশের জন্য কিছু করার প্রেরণা যোগাচ্ছে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে, আন্তরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে, আজ ১৩০ কোটি দেশবাসীর এই ভাবনাকে মাথা নত করে প্রণাম জানাই। আপনারা নিজেদের ভাবনা অনুসারে দেশের জন্য, নিজেদের রুচি অনুসারে, নিজস্ব সময়ে যাতে কিছু করতে পারেন, সেজন্য সরকার একটি ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম-ও গড়ে তুলেছে। এই প্ল্যাটফর্মহল –CovidWarrirors.gov.in. আমি আরেকবার বলছি— CovidWarrirors.gov.in. সরকার এই প্ল্যাটফর্ম-এর মাধ্যমে সমস্ত সামাজিক সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, আর স্থানীয় প্রশাসনকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। অত্যন্ত কম সময়ে এই পোর্টাল-এর সঙ্গে সোয়া কোটি মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডাক্তার, নার্সেস থেকে শুরু করে আসা,এএনএমবোনেরা, আমাদের এনসিসি,এনএসএসএর বন্ধুরা, ভিন্ন ভিন্ন ফিল্ডের সব পেশাজীবী, তাঁরা এই প্লাটফর্মকে নিজেদের প্লাটফরমকরে তুলেছেন। এই মানুষেরা স্থানীয় স্তরে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্লান রচনাকারীদেরও সেটি রূপায়নে অনেক সাহায্য করছে। আপনারাও covidwarriors.gov.inএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের সেবা করতে পারবেন,কবিদ যোদ্ধাহতে পারবেন।
বন্ধুগণ প্রত্যেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, প্রত্যেক লড়াই কিছু না কিছু শিক্ষা দেয়, কিছু না কিছু শিখিয়ে যায়, শিক্ষা দেয়। কিছু সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে আর নতুন গন্তব্যেরও দিশা দেয়। এই পরিস্থিতিতে আপনারা, সমস্ত দেশবাসী যে সংকল্প শক্তি দেখিয়েছেন, তা থেকে ভারতে একটি নতুন পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আমাদের দফতর, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমাদের মেডিক্যাল সেক্টর , প্রত্যেকে দ্রুতগতিতে নতুন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। প্রযুক্তিরফ্রন্টকে তো সত্যি সত্যি এমন মনে হচ্ছে, যে দেশের প্রত্যেক ইনোভেটর বা উদ্ভাবক নতুন পরিস্থিতি অনুসারে নতুন কিছু বানাচ্ছেন।
বন্ধুগণ, দেশ যখন একটি টিম হিসেবে কাজ করে , তখন কতকিছু হয়ে যায়––সেটা আমরা টের পাচ্ছি | আজ কেন্দ্রীয় সরকার হোক , রাজ্য সরকার হোক, তাদের প্রত্যেক বিভাগ এবং প্রতিষ্ঠান ত্রান প্রক্রিয়ার জন্য মিলেমিশে পুরো গতিতে কাজ করছে| আমাদের এভিয়েশন সেক্টরে যুক্ত লোক হোন, রেলওয়ের কর্মচারী হোন, তারা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন, যাতে দেশবাসীর যতদূর কম সম্ভব সমস্যার মুখে পড়তে হয় | আপনাদের মধ্যে হয়ত অনেকেরই জানা আছে যে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে ঔষধ পৌঁছে দিতে ‘লাইফলাইন উড়ান’ নামে এক বিশেষ অভিযান চলছে | আমাদের এই বন্ধুরা এতটা কম সময়ে দেশের ভেতরেই তিন লক্ষ কিলোমিটার আকাশ পথে অতিক্রম করেছেন এবং ৫০০ টনের বেশি মেডিক্যাল সামগ্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন| এভাবে রেলওয়ের কর্মী বন্ধুরা লকডাউনের মধ্যেও টানা পরিশ্রম করে চলেছেন, যাতে দেশের সাধারণ মানুষ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রীর অভাবে না পরেন | এজন্য ভারতীয় রেলওয়ে প্রায় ৬০টিরও বেশি রেল পথে ১০০-রও বেশি পার্সেল ট্রেন চালাচ্ছে | এভাবেই ঔষধের চাহিদা পূরণে আমাদের ডাক বিভাগের লোকেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন | আমাদের এই সমস্ত বন্ধু , প্রকৃত অর্থেই করোনা যোদ্ধা |
বন্ধুগণ,’প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজের আওতায় গরিবদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পয়সা ট্রান্সফার করা হচ্ছে | বার্ধক্য পেনশন জারি রাখা হয়েছে | গরিবদের জন্য বিনা খরচে তিন মাসের গ্যাস সিলিন্ডার, রেশনের মত সুবিধাও যোগানো হচ্ছে | এই সমস্ত কাজে সরকারের পৃথক পৃথক ক্ষেত্রের লোক, ব্যাংকিং ক্ষেত্রের লোক একটি টিমের মত দিনরাত কাজ করে চলেছেন | আর আমি আমাদের দেশের রাজ্য সরকারগুলিরও এই বিষয়ের জন্য প্রশংসা করবো যে তারা এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে |স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য সরকারগুলি যে দায়িত্ব পালন করে চলেছে, তা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে বিশাল ভূমিকা নিচ্ছে | তাদের এই পরিশ্রমও খুবই প্রশংসনীয় |
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, গোটা দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকেরা এই সম্প্রতি যে অধ্যাদেশ আনা হয়েছে, তাতে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন | এই অধ্যাদেশে করোনা ওয়ারিয়রদের ওপর হিংসা, উৎপীড়ন এবং তাঁদের কোনভাবে আহত করায় জড়িত লোকদের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে|আমাদের ডাক্তার, নার্সগণ, প্যারামেডিক্যাল স্টাফ, কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার এবং এরকম সমস্ত লোক , যারা দেশকে ‘করোনা মুক্ত’ করার জন্য দিনরাত এক করে লেগে আছেন , তাঁদের সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ খুব জরুরি ছিলো |
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমরা সবাই এটা উপলব্ধি করছি যে, মহামারির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের মধ্যে আমাদের নিজেদের জীবনকে, সমাজকে, আমাদের আশেপাশে সংঘটিত বিষয়কে এক তরতাজা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগও পেয়েছি আমরা | সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও ব্যাপক বদল এসেছে | আজ নিজেদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির গুরুত্বের বিষয়টি অনুভব করতে পারছি | আমাদের ঘরের কাজের জন্য যারা আছেন, আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাজে নিয়োজিত সাধারণ শ্রমিক হোন, পাড়ার দোকানের কর্মচারী হোন, তাঁদের কতবড় ভূমিকা, সেটা আমরা বুঝতে পারছি | একইভাবে জরুরি পরিষেবা প্রদানের সঙ্গে যুক্ত লোক , মান্ডিতে কর্মরত শ্রমিক ভাই-বোনেরা, আমাদের আশেপাশে সক্রিয় অটো চালক, রিকশা চালক––আজ আমরা বুঝতে পারছি এই সমস্ত মানুষকে ছাড়া আমাদের জীবন কতদূর সমস্যাসংকুল !
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত দেখে চলেছি যে, লকডাউনের মধ্যে মানুষ নিজেদের এই বন্ধুদের কথা শুধু স্মরণই করছেন না, তাঁদের কি প্রয়োজন সে বিষয়টিও খেয়াল রাখছেন, এমনকি তাঁদের বিষয়ে খুব সম্মানের সঙ্গে লেখালিখি করছেন | আজ দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে এমন ছবি বেরিয়ে আসছে যে, মানুষ সাফাই কর্মীদের ওপর পুষ্পবৃষ্টি করছেন|আগে তাঁদের কাজকে সম্ভবতঃ আপনি নিজেও কখনো খেয়াল করতেন না| ডাক্তার হোন , সাফাই কর্মী হোন, অন্য পরিষেবা প্রদানকারী, আর শুধু কি তাই, আমাদের পুলিশী ব্যবস্থা নিয়েও সাধারণ মানুষের ভাবনায় আজ ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে | আগে পুলিশের ব্যাপারে ভাবতে বসলেই নেতিবাচকতা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ত না |আমাদের পুলিশ কর্মী আজ গরিব , দুস্থদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন | যেভাবে প্রতিটি কাজে সাহায্যের জন্য পুলিশ এগিয়ে আসছে এতে পুলিশী ব্যবস্থার মানবিক এবং সংবেদনশীল ভূমিকা আমাদের সামনে উঠে আসছে |তাতে আমাদের মন নাড়িয়ে দিচ্ছে, আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করছে | এটা এমন এক অবকাশ যাতে সাধারণ মানুষ পুলিশের সঙ্গে আবেগের সম্পর্কে জুড়ে যাচ্ছেন |আমাদের পুলিশকর্মীরা একে জনগণকে সেবা করার এক অবকাশ হিসেবে নিয়েছেন এবং আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনা প্রবাহ আগামী দিনে প্রকৃত অর্থে, খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে |আর আমাদের সবাইকে এই ইতিবাচক বিষয়কে কখনই নেতিবাচকতার রঙ্গে রাঙানো চলবে না |
বন্ধুগণ, আমরা প্রায়ই শুনে থাকি , প্রকৃতি, বিকৃতি ও সংস্কৃতি এই শব্দগুলিকে যদি আমরা একসঙ্গে দেখি এবং এর পেছনে মূল ভাবটা যাচাই করি তো নিজেদের জীবনকে উপলব্ধির ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচনের বিষয় টের পাবো|যদি মানুষের স্বভাবের আলোচনা করি তো ‘এটা আমার’, ‘আমি এটা ব্যবহার করি’ এই ধরনের ভাবনা খুব স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয় | এতে কারও কোন আপত্তি থাকে না |একে আমরা প্রকৃতি বলতে পারি | কিন্তু ‘যা আমার নয়’, ‘যাতে আমার কোন অধিকার নেই’, তা আমি অন্যের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিই , তাকে ছিনিয়ে নিজের ব্যবহারে লাগাই, তখন আমরা একে বিকৃতি বলতে পারি | এই দুয়ের থেকে আলাদা , প্রকৃতি ও বিকৃতির ওপরে যখন কোন সংস্কারযুক্ত মন যদি ভাবে বা কোন কাজ করে তো সেখানে আমাদের সংস্কৃতির বিষয়টি চোখে পড়ে | যখন কেউ নিজের অধিকারের জিনিস, নিজের পরিশ্রমে অর্জিত জিনিস, নিজের প্রয়োজনের জিনিস, কম বা বেশি তার হিসেব না করে কোন ব্যক্তির প্রয়োজনে লাগবে দেখে, নিজের চিন্তা ছেড়ে নিজের ভাগের অংশ বিলিয়ে দিয়ে অন্যের প্রয়োজন পূরণ করেন ––সেটাই তো ‘সংস্কৃতি’ |
বন্ধুগণ, যখন সময়টা সমস্যাসংকুল , তখনি এই সমস্ত গুনের পরীক্ষা হয়ে যায় |
আপনারা দেখেছেন, কিছুদিন আগে ভারত নিজের সংস্কারের অনুরূপ, আমাদের চিন্তা-চেতনার অনুরূপ, আমাদের সংস্কৃতি পালন করে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে| এই সংকটের সময়ে, বিশ্বের নানা দেশে, সমৃদ্ধ দেশগুলোতেও ওষুধের সংকট অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে| এটা এমন এক সময় যে, যদি ভারত অন্য দেশকে ওষুধ না-ও দেয়, তবু ভারতকে কেউ দোষী করবে না| প্রতিটি দেশ বুঝতে পারছে যে, ভারতের কাছেও তার প্রাথমিকতা হচ্ছে নিজের নাগরিকদের জীবন রক্ষা করা| কিন্তু বন্ধুগণ, ভারত প্রকৃতি বিকৃতির চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে| ভারত নিজের সংস্কৃতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে| ভারতের প্রয়োজনে আমাদের যা করার ছিল, সেই প্রয়াস আমরা বৃদ্ধি করেছি| কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানবতাকে রক্ষা করার আহ্বানেও, সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছি | আমরা বিশ্বের সমস্ত জায়গায় যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার গ্রহন করেছি এবং মানবতার এই কাজ করে দেখিয়েছি| আজ যখন অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়, তখন তারা ভারতের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা অবশ্যই প্রকাশ করেন| যখন তারা বলেন, “থ্যাংক ইউ ইন্ডিয়া, থ্যাংক ইউ পিপল অফ ইন্ডিয়া”, তখন দেশের জন্য গর্ব আরও বেশি বৃদ্ধি পায়| এভাবেই এই সময়ে বিশ্ব জুড়ে ভারতের আয়ুর্বেদ ও যোগ-এর মাহাত্মকেও মানুষ বিশেষভাবে দেখছেন| সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখুন, সবদিকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, কীভাবে ভারতের আয়ুর্বেদ ও যোগ-এর আলোচনা হচ্ছে| করোনার ক্ষেত্রে আয়ুষ মন্ত্রণালয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যেসব প্রটোকল দিয়েছিল, আমার বিশ্বাস যে, আপনারা সেগুলোর প্রয়োগ অবশ্যই করছেন| গরম জল, বিভিন্ন ভেষজ মিশ্রনের পানীয় আর যাকিছু দিশা-নির্দেশ আয়ুষ মন্ত্রণালয় জারি করেছিল, সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে যুক্ত করে নিলে অনেক ভালো হবে|
বন্ধুগণ, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, অনেক সময় আমরা নিজেদের শক্তি ও সমৃদ্ধ পরম্পরাকে অস্বীকার করি| কিন্তু যখন বিশ্বের অন্য কোনো দেশ যখন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গবেষণার মাধ্যমে সেই কথাই আমাদেরকে বলে, আমাদের ফর্মুলাকে আমাদেরই শেখায়, তখন আমরা সেটাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহন করে নিই| সম্ভবত এর পেছনে একটা অনেক বড় কারণ—আমাদের কয়েকশ’ বছরের পরাধীনতার সময়ের বিষয়টি রয়েছে| এর জন্য কখনও কখনও আমাদের নিজেদের শক্তির উপরেই বিশ্বাস হয় না| আমাদের আত্ম-বিশ্বাস কম দেখতে পাই আমরা| এর জন্য আমাদের দেশের ভালো কথাকে, আমাদের পরম্পরাগত চিন্তাকে, প্রমাণ ভিত্তিক গবেষনার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আমরা সেটাকে বাদ দিয়ে দিই, সেটাকে খারাপ মনে করতে থাকি| ভারতের যুব সমাজকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে| বিশ্ব যেভাবে যোগ-কে আনন্দের সঙ্গে স্বীকার করেছেন, সেভাবেই হাজার হাজার বছরের পুরানো আমাদের আয়ুর্বেদের তত্ত্বকেও বিশ্ব অবশ্যই গ্রহণ করবে|হ্যাঁ, এর জন্য যুব সমাজকে সংকল্প গ্রহন করতে হবে এবং বিশ্ব যে ভাষাতে বুঝতে পারে, সেই বৈজ্ঞানিক ভাষাতে আমাদেরকে বোঝাতে হবে, কিছু করে দেখাতে হবে|
বন্ধুগণ, কোভিড-নাইন্টিনের জন্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন, আমাদের কাজ করার পদ্ধতিতে, আমাদের জীবন-শৈলী আর আমাদের অভ্যাসের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়ে যাচ্ছে| আপনারা সবাই অনুভব করতে পারছেন যে, এই সংকট কীভাবে আলাদা আলাদা বিষয়ে আমাদের জ্ঞান ও আমাদের চেতনাকে জাগরিত করেছে| যে প্রভাব আমরা আমাদের আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি, এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মুখে মাস্ক লাগানো আর চেহারাকে ঢেকে রাখা| করোনার জন্য এই পরিবর্তিত অবস্থায়, মাস্ক-ও আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যাচ্ছে| আমাদের চারপাশের অনেক মানুষকে মাস্ক লাগানো অবস্থায় দেখা আমাদের কখনও অভ্যাস ছিল না, এখন সেটাই হচ্ছে| হ্যাঁ! এর মানে এই নয় যে, যারা মাস্ক লাগাবেন তারাই অসুস্থ| আর যখন আমি মাস্ক-এর কথা বলছি, তখন আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে| আপনাদের সবারও মনে থাকবে| একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশের নানা জায়গায়, কাউকে ফল কিনতে দেখলে তাকে অশেপাশের সবাই অবশ্যই জিজ্ঞেস করত যে, ঘরে কি কেউ অসুস্থ আছে| অর্থাৎ ‘ফল’- মানে হচ্ছে অসুস্থ অবস্থাতেই খাওয়ার—এমনই এক ধারণা ছিল| কিন্তু সময় বদলেছে, আর এই ধারণাও বদলে গেছে| সেভাবেই মাস্ক-কে নিয়েও এখন ধারণা বদলাবে| আপনারা দেখবেন, মাস্ক এখন সভ্য সমাজের প্রতীক হিসেবে তৈরি হবে| যদি রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়, অন্যকেও রক্ষা করতে হয়, তাহলে আপনাকে মাস্ক লাগাতে হবে, আর আমার তো সিম্পল, সরল পরামর্শ থাকে যে—গামছায় মুখ ঢাকতে হবে|
বন্ধুগণ, আমাদের সমাজে আরও একটি বড় সচেতনতা এসেছে যে, এখন সবাই বুঝতে পারছেন যে, সর্বজনব্যবহারের স্থানে থুথু ফেললে কী ক্ষতি হতে পারে| এখানে ওখানে, যেখানে খুশি থুথু ফেলে দেওয়া, খারাপ অভ্যাসের অংশ হয়ে ছিল| এটা স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যের উপর এক বিরাট চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিচ্ছিলো | যদিও একদিক দিয়ে দেখলে, আমরা সবসময়েই এই সমস্যাকে জানতাম, কিন্তু এই সমস্যা সমাজ থেকে যাওয়ার নামই নিচ্ছিল না—এখন সেই সময় এসে গেছে যে, এই খারাপ অভ্যাসকে সবসময়ের জন্য সমাপ্ত করে দিতে হবে| আর এটা বলে যে, “বেটার লেট দ্যান নেভার” অর্থাৎ একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো| তো, দেরী যদিও হয়ে গেছে, কিন্তু এখন এই থুথু ফেলার অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া উচিত| এই বিষয় যেখানে প্রাথমিক হাইজিনের স্তর বাড়বে, একই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করার ক্ষেত্রেও সহায়তা পাওয়া যাবে|
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, এটা খুবই খুশির সংযোগ যে, আজ যখন আমরা নিজেদের মধ্যে ‘মন কি বাত’ করছি, তো সেটা অক্ষয়-তৃতীয়ার পবিত্র সময়ে| বন্ধুগণ, ‘ক্ষয়’-এর অর্থ হচ্ছে বিনাশ, কিন্তু যা কখনও নষ্ট হয় না, যা কখনও শেষ হয় না, সেটা হচ্ছে ‘অক্ষয়’| আমাদের ঘরে আমরা সবাই এই পরবকে প্রতি বছর উদযাপন করি| কিন্তু এই বছর আমাদের জন্য এর বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে| বর্তমান কঠিন সময়ে এটা এমন এক দিন, যা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের আত্মা, আমাদের ভাবনা ‘অক্ষয়’| এই দিন আমাদের এটা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যতই কঠিন পরিস্থিতি আমাদের রাস্তা অবরোধ করুক না কেন, যতই বিপর্যয় আসুক, যতই অসুখের মুখোমুখি আমাদের হতে হয়—এগুলোর সঙ্গে লড়াই ও সংগ্রাম করার মানবিক ভাবনাগুলো অক্ষয়| মনে করা হয় যে, এটা সেই দিন, যেদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর ভগবান সূর্যদেবের আশির্বাদে পাণ্ডবরা অক্ষয়-পাত্র পেয়েছিলেন| অক্ষয়-পাত্র অর্থাৎ এমন এক বাসন, যেখানে খাবার কখনও শেষ হয় না| আমাদের অন্নদাতা কৃষক সমস্ত পরিস্থিতিতে দেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য, এই ভাবনা থেকেই পরিশ্রম করেন| তাঁদের পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা সবার জন্য, গরিবদের জন্য, দেশের কাছে অক্ষয় অন্ন-ভাণ্ডার আছে| এই অক্ষয়-তৃতীয়ায় আমাদেরকে নিজেদের পরিবেশ, জঙ্গল, নদী ও সমস্ত বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণের বিষয়েও চিন্তা করা উচিত| যা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়ে থাকে| যদি আমরা ‘অক্ষয়’ থাকতে চাই, তাহলে আমাদেরকে প্রথমে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের পৃথিবী যেন অক্ষয় থাকে|
আপনারা কি জানেন, অক্ষয়-তৃতীয়ার এই পরব, দান-এর শক্তি অর্থাৎ ‘পাওয়ার অফ গিভিং’-এরও এক সময়| আমরা হৃদয়ের ভাবনা থেকে যাকিছু দিয়ে থাকি, বাস্তবে গুরুত্ব সেটারই হয়ে থাকে| এটা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, আমরা কী দিই, আর কতটুকু দিই| সংকটের এই সময়ে আমাদের ছোটখাটো প্রচেষ্টা আমাদের অশেপাশের অনেক মানুষের জন্য অনেক বড় সম্বল হতে পারে| বন্ধুগণ, জৈন পরম্পরাতেও এই দিনটি অনেক পবিত্র দিন| কেননা, প্রথম তীর্থংকর ভগবান ঋষভদেবের জীবনের এটা এক গুরুত্বপূর্ণ দিন| জৈন সমাজ এটাকে একটা পার্বন হিসেবে পালন করে| আর সেজন্য এটা বুঝতে পারা সহজ হয়ে যায় যে, কেন মানুষ এই দিনকে কোনো শুভ কাজের সূচনা করার জন্য পছন্দ করেন| আর যেহেতু আজ নতুন কিছু শুরু করার দিন, তাহলে কি আমরা সবাই মিলে, আমাদের প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীকে অক্ষয় ও অবিনাশী করার সংকল্প নিতে পারি না ? বন্ধুগণ, আজ ভগবান বাসবেশ্বরজি-এরও জয়ন্তী| এটা আমার সৌভাগ্য যে, ভগবান বাসবেশ্বরের স্মৃতি আর তাঁর বার্তা-র সঙ্গে বারবার যুক্ত হওয়ার, কিছু শেখার সুযোগ আমি পেয়েছি| দেশ ও বিশ্বে ভবগান বাসবেশ্বরের সমস্ত অনুসারীদের তাঁর জয়ন্তীতে অনেক অনেক শুভকামনা|
বন্ধুগণ , রমজানেরও পবিত্র সময় শুরু হয়ে গেছে| আগেরবার যখন রমজান উদযাপন করা হয়েছিল, তখন কেউ ভাবতেও পারেনি যে এইবারের রমজানের সময় এতবড় সমস্যার মখোমুখি হতে হবে| কিন্তু এখন যখন গোটা বিশ্বে এই সমস্যা এসেই গেছে, তখন আমাদের সামনে সুযোগ হচ্ছে, এই রমজানকে আমরা যেন সংযম, সদ্ভাবনা, সংবেদনশীলতা আর সেবার মানসিকতার প্রতীক হিসেবে তৈরি করি| এবার আমরা আগের বারের চেয়েও বেশি ‘ইবাদত’ করবো, যাতে ঈদ আসার আগেই দুনিয়া করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়, আর আমরা আগের মতই উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারি| আমার বিশ্বাস যে, রমজানের এই দিনগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের দিশা-নির্দেশ পালন করে, করোনার বিরুদ্ধে চলা এই লড়াইকে আমরা আরও বেশি মজবুত করব| সড়কে, বাজারে, পাড়ায়, ফিজিক্যাল ডিসটেন্স-এর নিয়মের পালন করা এখন অনেক বেশি আবশ্যক| আমি আজ সেইসব কমিউনিটি-লিডারদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা দুই গজ দূরত্ব বজায় রাখা আর ঘরের বাইরে বের না হওয়ার বিষয় নিয়ে মানুষকে সচেতন করে চলেছেন| বাস্তবিকই করোনা ভাইরাস এইবার ভারত সহ গোটা দুনিয়া জুড়ে উৎসব উদযাপন করার প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে, রং-রূপ বদলে দিয়েছে| কিছুদিন আগেই আমাদের এখানেও বিহু, বৈশাখী, পুথন্ডু, বিশু, ওড়িশার নিউ ইয়ারের মতো অনেক উৎসব এসেছিল| আমরা দেখেছি যে, মানুষ কীভাবে এইসব উৎসবকে ঘরে থেকে, আর একেবারেই সাধারণভাবে, সমাজের প্রতি শুভচিন্তার সঙ্গে উদযাপন করেছেন| সাধারনত এইসব উৎসব বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে উত্সাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়| ঘরের বাইরে বেরিয়ে মানুষ নিজের খুশি প্রকাশ করেন| কিন্তু এইবার সবাই সংযমের বজায় রেখেছেন| লক-ডাউনের নিয়ম পালন করেছেন| আমরা দেখেছি, এইবার আমাদের খ্রিস্টান বন্ধুরা ‘ইস্টার’-ও ঘরে থেকেই উদযাপন করেছেন| নিজের সমাজ, নিজের দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করা…।”
__________________________________
২৬.০৪.২০২০
_________________________
রিপোর্ট: স্বাতী সেনাপতি
ছবি সৌজন্যে: টুইটার