থমকে দাঁড়াল ৬২৪ বছরের অমলিন ইতিহাস……

ইতিহাসের পাতা ঘাটলে গল্পগাথার মতন বেরিয়ে আসে রথযাত্রা নিয়ে অসংখ্য স্মৃতি| প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার পরবর্তী সময় থেকে তোড়জোড় শুরু হয় রথযাত্রার | এবছর আগে ভাগেই দড়িতে পড়েছে টান, রাস টেনেছে ‘করোনা’, যার আতঙ্কে জড়োসড়ো এখন গোটা জগত-সংসার | তাই ভগবানের দেখা পাওয়াও অনিশ্চিত| করোনার কারণে লকডাউনে এমনিতেই গৃহবন্ধি মানুষ আর মন্দিরের দরজার ওপারে বন্ধি ভগবান| মন্দিরে যাওয়া নিষেধ, বন্ধ মন্দিরের দ্বার|

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণকে বাড়তে না দেওয়ায় বন্ধ ধর্মীয় জমায়েতও, অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় সব মন্দিরের দরজা | যেখানে প্রতি বছর রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গার রথ উৎসবে ঢল নামে লক্ষাধিক ভক্ত ও পূণ্যার্থীর, সেখানে ‘লক্ষাধিক’ শুন্যতা| ইতিমধ্যেই সর্ব প্রাচীন ঐতিহাসিক পুরীর রথ শোভাযাত্রা নিয়ে ওড়িশা সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় যে, এবার জুনে শোভাযাত্রা বেরোবে না, রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে পুরীর মন্দিরের ভেতরেই| কিন্তু এবছর ভারত তথা বাংলার দ্বিতীয় প্রাচীন রথ ৬২৪ বছরে পা দেওয়া শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা হবে কিনা এই নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো অবধি গ্রহণ করেননি মন্দির কমিটি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার| গতবছর এই রথযাত্রার শুভ সূচনা হয় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে | এবছরের চিত্র সম্পূর্ণ বিরূপ হতে চলেছে কারণ হুগলি জেলার শ্রীরামপুর শহরকে ইতিমধ্যে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে এবছরের রথযাত্রা উপলক্ষে উৎসব বুঝি এবার স্তব্ধ হতে চলেছে|

পুরীর পর অন্যতম আকর্ষণীয় ও প্রাচীন রথযাত্রা হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা, দূর-দূরান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে এই উৎসবে| এবছরের প্রতিচ্ছবি যেন উল্টো| জগন্নাথদেবের গন্তব্য মাসির বাড়ির রাস্তা এখন ফাঁকা, শুনশান| ঘরের ছেলে জগন্নাথ ঘরেই থাকবেন আর তার পাড়ি দেওয়া হবে না মাসির বাড়ি অর্থাৎ শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দির | ৬২৪ বছরের অমলিন ইতিহাস কাঁধে নিয়ে আর মাহেশের পুণ্য রাস্তায় নামবেনা জগন্নাথদেবের রথ| প্রভু চৈতন্য দেব এই মাহেশ স্থানকেই ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন| মাহেশের রথ কে ঘিরে হয় এক মাসব্যাপী রথের মেলার যার বর্ণনা পাওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসেও | পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম বৃহত্তম রথ এই মাহেশের রথ