তাঁদের জন্য উৎসারিত হোক আলো! কিন্তু ‘আওয়াজে’র মতো ‘আলো’তেও ‘মজা’ই হবে কি?

একবার প্রধানমন্ত্রী শব্দ করতে বলেছিলেন। থালা, বাসন থেকে ঢাক ঢোল, শব্দের আতিশয্যে নিমেষেই উবে গিয়েছিল, সমস্ত বিধিনিষেধ! সামাজিক দূরত্ব তো বটেই, কয়েকমিনিট এর শব্দ তৈরির অতি উৎসব আশঙ্কা সৃষ্টি করেছিল চিকিৎসক মহলে। সত্যিই সংক্রমণ বাড়বে না তো? বেড়েছে কিনা আমরা জানি না! তবে, ওই শব্দের তরঙ্গ সত্যিই মনের জোর বাড়িয়েছে। এই যুদ্ধের সেনাদের সম্মান জানিয়েছে অনেকটা।

আজকের হট টপিক, আলো জ্বালানো! তার কারণ, এতক্ষনে আমরা সকলেই জানি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আগামী ৫ এপ্রিল রবিবার, রাত ৯ টায়, ৯ মিনিটের জন্য, ঘরের সমস্ত আলো বন্ধ রেখে, প্রদীপ, মোমবাতি অথবা চলভাষের ফ্ল্যাশ আলো জ্বালিয়ে, আমরা যে এক, ১৩০ কোটি মিলেমিশে লড়ছে, সেই শক্তির প্রকাশ করতে।

উদ্যোগটি খারাপ নয়! অত্যন্ত ভালো একটি ভাবনা! কিন্তু সেই ভাবনার রূপায়ণে গো মূত্রের মতো চোণা ছিটবে কিনা, প্রশ্ন সেখানেই। শান্ত স্নিগ্ধ আলোর মালা তৈরিতে দিপালবলির বাকি উৎসব হবে কিনা, প্রশ্ন সেখানেই। আবার রাস্তায় বেরিয়ে, ভিড় করে, ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা হবে কিনা, আশঙ্কা সেখানেই!

যদিও, এই ঘোষণার পর থেকেই দেখছি আমরা সবাই বড্ড ‘লাইট কন্সাস’ হয়ে গিয়েছি, কারণ অনেকেই এই রাতের বেলায় মোমবাতির, অথবা ফ্ল্যাশের আলোর ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিতে পারেননি। এটাই স্বাভাবিক। না পারারই কথা। আওয়াজ কাণ্ডের পরে, প্রশ্ন উঠবেই, এটা কি মজা করার সময় ? এই ক্রাইসিসে ঢাক-ঢোল, থালা-বাসন পেটানো হচ্ছে, এবার মোমবাতি জ্বালাতে বলা হচ্ছে? একদমই উচিত নয় এইসব বলা! যতই হোক, বাড়িতে বসে, সরকারের সাথে সহযোগিতা করে আমরা দেশ গড়তে সাহায্য করছি। এই রকম একটা ব্যস্ততার মুহূর্তে যেন মস্করা হচ্ছে দেশবাসীর সাথে!

কিন্তু একটু ভেবে দেখলে ক্ষতি কী? –আপনাদের মনে আছে, ছোটবেলায় আমরা বন্ধুর বাড়িতে জন্মদিনের নিমন্ত্রণ খেতে যেতাম? কেক কাটা হতো। লুচি খাওয়া হতো। কিংবা, আপনাদের মনে আছে, স্কুলে-কলেজে প্রথমবার যেদিন আপনি আপনার কোনো কৃতিত্বের জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন। মনে থাকারই কথা। যতই হোক বিশেষ মুহুর্ত তো!

আচ্ছা, এবার চোখটা বন্ধ করে ওই দিনটার কথা ভেবে ফেলুন তো দেখি! কি ? কিছু শব্দ শুনতে পাচ্ছেন ? ঠিক ধরেছেন ! “হাততালির শব্দ ” । আবার ধরুন, সবাই ওই জন্মদিন বাড়িতে “হ্যাপি বার্থডে” গান গাইছে, যে কেকটা কাটা হলো, কিংবা মাথার উপর লজেন্স ভর্তি বেলুনটা যেই ফাটলো, অমনি আপনি কিছু একটা করলেন? কি করলেন বলুন তো? “হাততালি দিলেন”। বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে! তাইনা ? আচ্ছা, একটু ভালো করে ভাবুন তো, যেদিন আপনি মঞ্চে উঠেছিলেন, ওইদিন ওই হাততালির শব্দটা না পেলে আপনার কেমন লাগতো? কিংবা, আপনারা যদি কেউ আপনার বন্ধুর জন্মদিনে হাততালি না দিতেন, আপনার

বন্ধুর কেমন লাগতো? বন্ধুই আমাদের অনেক কাছের, তাই এইমুহুর্তে বন্ধুর উদাহরণই তুলে ধরা!

আসলে কি বলুন তো? আমরা না অনেককিছু জানি, অনেককিছু বুঝি, কিন্তু সবসময় প্রকাশ করতে পারিনা, “সময়” এবং “পরিস্থিতি”র জন্য । অথচ কিছু সময় আছে, কিছু কাজ না করলেই নয়। এই যেমন দুটো উদাহরণ দিলাম। হয়তো আপনার এই হাততালি দেওয়ার ফলে মারণরোগ সেরে যায়নি, হয়তো মানুষের এই কাসর-ঘন্টা বাজানোর ফলে, পৃথিবীতে কোনো অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি । তবুও আমি জানি এবং নিশ্চিত, মেডিক্যাল কলেজের লড়তে থাকা ওই ডাক্তারের বুকটা গর্বে ফুলে উঠেছে, তাঁর মনে হয়েছে যে, তাঁর লড়াই এখনও অনেকটা বাকি, তাঁর কানে প্রতিনিয়ত বাজবে এই হাততালির আওয়াজ, আর এই যুদ্ধে এই আওয়াজই যেনো তার “পাঞ্চজন্য”। সে যতই বলুক ” হাততালি না দিলেও হবে, সম্মান টাই যথেষ্ট”, অভিমান সব মানুষেরই হয়। আমরাও ওঁদের উপর কম অত্যাচার করিনি। তাইনা ?

আর বাকি রইল, মোমবাতির আলো? পঞ্চাশ হাজার মানুষ প্রাণ হারালো। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে না হয় কিছু সময় তাদের উৎসর্গ করলেন। কিছু ক্ষতি হবে কি ? না, এতে কোনো ভাইরাস মরবে না , অক্সিজেন লেভেল বাড়বে না, শুধু কোথাও গিয়ে হয়তো কোন মানুষের সাহস বাড়বে। মানুষ হয়তো আবার নতুন ভাবে কোথাও গিয়ে মানুষকে চিনবে! তার মৃত্য সজ্জাতেও হয়তো মনে পড়বে, ওই রাতটার কথা। হয়তো সেটাই তাকে কিছুক্ষন বাঁচিয়ে রাখার সাহস যোগাবে। কি, আপনি সাহস পাবেন না?

#ঐক্যবদ্ধ

লেখা: হৃতভাষ সাহা

০৩.০৪.২০২০

কলকাতা

উত্তর সম্পাদকীয়

Edited by www.khoborwalatv.com

©️All rights reserved