কোভিড-19 অসুখটি নতুন হলেও এই অসুখের জন্যে দায়ী ভাইরাসটি বহু আগেই আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছিল। আর এই কাজটি যিনি সম্ভবপর করেছিলেন তিনি হলেন ডঃ জুন আলমেইডা। কালের নিয়মে তিনি ইতিহাসবিশ্রুত হলেও তাঁর এই আবিষ্কার সাম্প্রতিক কালের ক্রমবর্ধমান মহামারিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। আবার তাঁকে নিয়ে এসেছে প্রচারের আলোয়।
জন্মগত সূত্রে স্কটিশ এই বিজ্ঞানীর বাবা ছিলেন একজন বাসচালক। টাকা পয়সার অভাবে বাধ্য হয়েছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে পড়াশুনা ছেড়ে দিতে। যদিও প্রথাগত বিদ্যা বেশিদূর না থাকলেও তিনি গ্লাসগো শহরে একটি ল্যাবে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এর কাজ পেয়ে যান।
পরবর্তীকালে তিনি লন্ডন যান এবং সেখান থেকে পাড়ি জমান কানাডা। কানাডার অন্টারিও ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এ ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় বিশেষ মুন্সিয়ানার ছাপ রাখেন তিনি।
ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে আবিস্কার করেন এন্টিবডি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ভাইরাসের সনাক্তকরণ। যা বর্তমানেও বহুল ব্যবহৃত।
জর্জ উইন্টার নামক একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রাবন্ধিক বিবিসি স্কটল্যান্ড রেডিওকে জানান ডঃ আলমেইডার কাজ ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা পায় এবং তিনি লন্ডনে ফিরে গিয়ে ‘ সেন্ট থমাস হসপিটাল & মেডিক্যাল স্কুলে’ যোগদান করেন এবং গবেষণা শুরু করেন সাধারণ ভাইরাসঘটিত ফ্লু নিয়ে। এটি সেই হসপিটাল যেখানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা নিয়ে ভর্তি ছিলেন।
এমনই গবেষণা করতে করতে বি৮১৪ নামে একটি নমুনা তাঁর ল্যাবে আসে। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে নমুনাটি পরীক্ষা করে তিনি জানান এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মত হলেও এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কোনো মতেই নয়। বরং এর সাথে কিছুটা মিল রয়েছে মুরগির সংক্রামনকারী ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাসের। তাঁর এই অবিস্কারকেই প্রথম করোনা সনাক্তকরণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি এই ভাইরাসের নমুনার ছবি একটি মেডিক্যাল জার্নালে পাঠালে তারা এটিকে বাতিল করে দিয়ে জানান ‘ এটি অস্পষ্ট ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেরই ছবি! কোনো ত্রুটির কারণে এরকম ছবি এসেছে’
পরবর্তীতে প্রায় ২বছর পরে ব্রিটেনের একটি মেডিক্যাল জার্নালে এই ভাইরাসের ছবি সহ প্রতিবেদন বের হয়। ডাঃ আলমেইডা এবং তাঁর সহকর্মীগণ এটিকে করোনা ভাইরাস নামকরণ করেন। প্রসঙ্গত এই ভাইরাসের বাইরে একটি উজ্জ্বল বর্ণের আলোক বলয় দেখা যায়। আর সেই জন্যেই এই ভাইরাসের নাম করোনা ভাইরাস।
ডঃ আলমেইডার সাফল্যের গল্প এখানেই শেষ নয়। এইডস ভাইরাসের ছবি চিহ্নিতকরণের ফলে তাঁর সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হয়।
২০১৩ সালে ৭৭ বছর বয়েসে মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার ১৩ বছর পরেও আজ তিনি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। এই মারণ ভাইরাসের আবিস্কর্তা হিসেবে আপামর বিশ্বের চিকিৎসক মহল এবং নাগরিক সমাজ কুর্নিশ জানাচ্ছে তাঁকে।
_______________________________
স্বাতী সেনাপতি