বিট্টু রায়চৌধুরী
সাংবাদিক
মুখে গ্যাস-মাস্ক! টাইমস স্কোয়্যারে ব্যালে নাচ দেখিয়ে মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন এক নটী। সংক্রমণের কারণে বিধ্বস্ত আমার শহরটাও আজ ব্যালে নাচের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। জৈবসন্ত্রাস আমাদের নাচাচ্ছে, আমরা বাইজির মতো নাচছি। শূন্য নগরের অধকাটা গাছগুলো শুধু হাত-তালি দিচ্ছে। নেই কোনও ভাইরাস প্রতিষেধক মুখোশ, নেই সংক্রমণ প্রতিরোধের শক্তি। তবুও, জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে পিঁচুটি চোখে পাগলের একটি দল আর কিছু কুকুর খাবারের খোঁজে জৈবসন্ত্রাসের গন্ধ নাকে মেখে নিচ্ছে। আমরা দেখছি। রাষ্ট্র মারছে, আমরা দেখছি। মানুষ মরছে, আমরা দেখছি। অসভ্যতার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সভ্যতা ধ্বংস হচ্ছে, আমরা দেখছি। জৈবসন্ত্রাস
করোনা আজ গোটা বিশ্বের কাছে জৈবসন্ত্রাসের অপর নাম কোভিড-১৯। এই ঘটনার নেপথ্যে কোন দেশ জড়িত, তা-অবিলম্বে খতিয়ে দেখা হোক। অনেকেই দাবি করছেন, চিনে’র খাদ্যাভ্যাসের জেরেই করোনা’র জন্ম। চিনে’র সংবাদমাধ্যমের একটা অংশের যুক্তি, উহানে’র একটি বাজারে, যেখানে সামুদ্রিক প্রাণীর মাংস বিক্রি হয়, সেখান থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমার যুক্তি- পোকা, কাঁচা মাছ, গরু’র মগজ, সাপে’র মাথা-এই সমস্ত খাবারের চল চিনে বহুযুগ আগে থেকেই রয়েছে। একই সঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীর মাংস বিক্রি হয়, এমন বাজারের সংখ্যাও প্রচুর। খাদ্যাভ্যাসের কারণেই যদি করোনা’র জন্ম হয়, তবে এই মারণ ভাইরাস অনেক আগেই গোটা চিন’কে গ্রাস করে ফেলত। আমার বিশ্বাস, মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করার একটা ট্রায়াল এই করোনা তাণ্ডব।
ঘটনার নেপথ্যে কোন দেশ জড়িত? সন্দেহের তালিকা জায়গা করে নিয়েছে চিন, উত্তর কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দেশ। ইসরাইলের সামরিক বিভাগের প্রাক্তন এক কর্তা’র দাবি, উহান ইনস্টিটিউটের বায়োসেফটি ল্যাবের জৈব রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য, এই তথ্য এখনও প্রমাণিত হয়নি। অনেকে আবার দাবি করছেন, কোভিড-১৯ কানাডায় তৈরি হচ্ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চিনে’র এজেন্টরা। তাঁরা ভাইরাসটি চিনে নিয়ে এলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে গবেষণায় হাত দিয়েছেন। একাংশ প্রতিষেধক তৈরি করছেন, আরেক অংশ করোনা’র নেপথ্যে থাকা সত্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। জৈবসন্ত্রাসবাদ কি?
ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও দেশ শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য যখন বিষাক্ত জৈব পদার্থ যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক ব্যবহার করে, তখন তাকে জৈবসন্ত্রাসবাদ বলে।
গো-মূত্র বনাম কোভিড-১৯
আরেকটা বিষয় উল্লেখ না-করে উপায় নেই। বিজেপি-সহ গেরুয়া শিবির গোটা ভারতে করোনা প্রতিরোধের জন্য সাধারণ মানুষকে গো-মূত্র পান করাচ্ছে। গোবরও গায়ে মাখার পরামর্শ দিচ্ছে তারা। এর সঙ্গে নব-সংযোজন গঙ্গার জল গায়ে ঢেলে ভাইরাস-মুক্ত হওয়া!
এতে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে কি-না, তা আমার জানা নেই। তবে, আম জনতা যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজ্ঞান আর কুসংস্কারের পার্থক্যটা মানুষ বুঝুন। মানবাধিকারের স্বার্থে সত্যটা বিশ্বের মানুষের সামনে উঠে আসুক।
চিত্র সূত্র – লেখক, গুগল