কোথাও ছিল না তাঁর নাম! আক্ষেপের সুরেও, এবার অন্তত সাহায্যের ‘ইচ্ছাপ্রকাশ’ বাদশার।

আটের দশকেও রতনের মর্যাদা দেননি কেউ! স্বপ্না চক্রবর্তীর অ্যালবামেও তাঁর নাম থেকে গিয়েছিল উহ্য। তবুও বহুকাল ধরে কষ্টের জীবনযাপন করলেও, আক্ষেপের সুর ছিল না শিল্পী রতন কাঁহারের। শুধুমাত্র সঙ্গীতশিল্পী শিলাজিৎ তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, বাকি অনেকেই ফিরেও চাননি তাঁর দিকে। কিন্তু বাদশার গান প্রকাশের পরই বিশ্বজুড়ে ঝড় উঠেছে, একপ্রকার নিজের অজান্তেই লাইম লাইটে এসে গিয়েছেন রতন কাঁহার, বিশ্ব জেনেছে এই সৃষ্টি তাঁরই।

কিন্তু প্রমাণ? কোথাও যে তাঁর নাম নেই! তাহলে কীভাবে ক্রেডিটে তাঁর নাম দেওয়া হবে? এমন প্রশ্ন অবশেষে তুললেন, বাদশা। থুড়ি, সমালোচক বাঙালির মুখে ছুড়ে দিলেন একরাশ লজ্জার কথা! তিনি বললেন, বহু মানুষ ট্যুইট করে, বিভিন্নভাবে তাঁকে জানানোর পর, তিনি খোঁজ শুরু করেন, কিন্তু কোথাও এই গানের স্রষ্টা হিসেবে রতন কাঁহারের নাম নেই! যা দেখে তিনিও বিস্মিত। এমন শিল্পীর কদর নেই, ভেবে তিনিও দুঃখিত। বাদশার ওই লাইভ দেখে অনেকেই হতবাক!নাম না দিলেও, বাদশার কিছু কথা মন ছুঁয়েছে নেটিজেনদের।

বাদশা ওই লাইভ ভিডিওতে স্পষ্ট করেন, ‘লক্ ডাউন’ না চললে তিনি নিজে দেখা করতেন রতন কাহারের সঙ্গে। তিনি এও চান, এই শিল্পী তাঁর দ্বারা উপকৃত হন। পরিবারের জন্য সাহায্য করার কথাও ভাববেন বাদশা! এমনও বলতে শোনা যায় তাঁর মুখে। এরপর, আশায় দিন গুনছেন অনেকেই, তাহলে দিন ফিরবে রতন কাঁহারের, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে পাবেন যোগ্য সন্মান?

প্রসঙ্গত, বাদশার তৈরি মিউজিক ভিডিওটি ইতোমধ্যেই ৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছেন। ট্রোল, মিম মিলিয়েও কয়েক লক্ষ ভিউ। ইউটিউবে এখন ট্রেন্ড এই মিউজিক ভিডিও। আয় হবে বহু টাকা। অনেক সমালোচনার পর, বাংলা লোক সংগীতকে ক্রেডিট দিলেও রতনের নাম কেন নেই তাঁর ব্যাখ্যা দেন বাদশা।

এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, কে শিল্পী দিনের পর দিন ব্রাত্য থেকে গেলেন, বেশিভাগই দিলেন না সৌজন্য, তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে, বাদশার সমালোচনায় উদগ্রীবদের নিয়েও দ্বিধা বিভক্ত বহু!

বাদশার ‘গেন্দা ফুল’ গানটি প্রকাশ্যে আসার পর, এমনই বিতর্ক শুরু হয়। উল্লেখ্য, রতন কাঁহার। ১৯৭২ সালে সৃষ্টি করেন কিছু শব্দ। ১৯৭৬ সালের পর যা দিকে দিকে ছড়িয়ে যায় এক বিখ্যাত গান হিসেবেই। ”বড় লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুলে”র মোহে আচ্ছন্ন হয়ে যায় রাজ্য। এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী ছেলের সৃষ্টি মাতোয়ারা করে তোলে, বাংলা লোকসঙ্গীতের জগতকে। তবুও কালের সঙ্গে সঙ্গে, শহুরেদের আবহে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় রতন কাঁহারের নাম। অন্ধকারেই রয়ে যান, এই লোকশিল্পী। একববিংশ শতাব্দীতে এসেও, এবারও তার অন্যাথা হয় না।

০২.০৪.২০২০

ছবি সৌজন্যে: টুইটার