‘কেউ যেন অনাহারে মারা না যান,’ খাবারের ব্যবস্থা করতেই হবে, কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।

কলকাতা: নবান্নে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে, একটি কথায় বারবার বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিকবার তিনি বললেন, ”দেখবেন কেউ যেন না খেতে পেয়ে মারা না যান, বাইরের শ্রমিকরা, গরিব মানুষরা যেন খাবারের অভাবে না থাকেন, ব্যবস্থা করতেই হবে।” এদিনের এই বৈঠকে আধিকারিকদের এই কড়া বার্তা দেন তিনি। জোর দেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ, বাইরে থেকে লোক না ঢোকার ক্ষেত্রেও। তিনি আরও বলেন, “কেউ যেন বাইরে থেকে ঢুকে আসতে না পারে। যাঁরা আছেন, কেউ যেন অনাহারে মারা না যান, মাথায় রাখতেই হবে।” মুখ্যমন্ত্রী জোর দেন জেলার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার আরও বেশি করে তৈরির ক্ষেত্রেও। আরও ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি, রাজ্যের পুলিশকেও আরও মানবিক হতে নির্দেশ দেন তিনি।

সোমবার বিকেলে নবান্নে, সব জেলার জেলাশাসক, এসপি সহ,স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জেলা ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। সমস্যা শোনেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাইরের লোকদের রাজ্যে প্রবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা যায় তাঁকে। সমগ্র বৈঠকে মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ নেন, জেলায় জেলায় করোনা মোকাবিলায়, কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর কী সমস্যা রয়েছে এখনও!

তিনি উল্লেখযোগ্য ভাবে বলেন, ”গরিব হলেই তাঁকে রেশন দিতে হবে, কার্ড থাকলেই দেওয়া হবে এমন না।” স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াত এবং থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, সঠিকভাবে করতেও আধিকারিকদের আরও তৎপর হতে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিটের সমস্যার দ্রুত সমাধানের নির্দেশও দেন তিনি। এদিন জেলাওয়ারি বিভিন্ন কেন্দ্র, বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালের বিবরণ নেন তিনি। কোন অঞ্চলে কী কী করা হয়েছে, এবং কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও পরামর্শও দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ”অনাহারে কোনও মৃত্যু তিনি বরদাস্ত করবেন না” বলেও এদিন জানান। লক ডাউনের সময়, বাইরে থেকে কেউ যাতে না আসতে পারেন, সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করার দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলা হয় তাঁর তরফে।

প্রসঙ্গত, সোমবার ফের তিনি ধন্যবাদ জানান রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত সকলকে। এমনকি, অ্যাম্বুলেন্স চালক থেকে পুলিশ, কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীরা যাতে, আগামী তিনমাসের জন্য, রাজ্যের তরফে বিমার অধীনে আসতে পারেন, সেই বিষয়েও নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি বিমার অর্থ বাড়িয়ে ১০ লক্ষ করার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত সাফাই কর্মীদের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী তিনমাসের জন্য বেশি বেতন দেওয়ার কথাও বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, চা বাগানের শ্রমিক,বাইরের রাজ্যের শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দিতেও বলা হয় আধিকারিকদের। পুলিশকে মানবিক হয়ে, মানুষকে বোঝানোর নির্দেশ‌ও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এমনকি, বারাসাতের অ্যাডামস ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস এর মতো বহু সংস্থা যে, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে, তাও এদিন জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই এরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২১! মৃত ২ জন। দেশে আক্রান্ত কমপক্ষে ১১০০ অতিক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২০ জনের। এদিকে করোনা নিয়ে তৈরি প্রধামন্ত্রীর এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে, প্রতিদিন সাহায্য আসছে কোটি কোটি টাকা। আজও অভিনেতা কার্তিক আরিয়ান ১ কোটি সাহায্য করেছেন, প্রধামন্ত্রীর ত্রান তহবিলে। গতকাল, ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে ৫০ লক্ষ টাকা দান করেন। সোমবারই একটি ভিডিওর মাধ্যমে, ইউটিউব স্টার কিরণ দত্ত, ১ লক্ষ টাকা দানের কথা জানান।

কলকাতা

৩০.০৩.২০২০