সারাদেশ জুড়ে করোনার প্রকোপ উর্ধমুখী, পিছিয়ে নেই বাংলাও, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুতগতিতে। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে পুল টেস্টিংয়ের পর এবার করোনা র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টও শুরু হতে চলেছে পচিমবঙ্গে| ইতিমধ্যেই, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে এই বিষয়ে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় যেখানে-যেখানে নিমিষেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে রেড লিস্টে রয়েছে যে সমস্ত জায়গার নাম, সেইসব জায়গায় করা হবে র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট| স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই টেস্ট করা হবে বিশেষ কিছু জেলাভিত্তিক হাসপাতালে | এই টেস্ট করার জন্য মোট ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ ব্যবহার করা হবে, যদিও টেস্টের ফলাফল তৎক্ষণাৎ জানা যাবে না। প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছাড়া এই র্যাপিড টেস্ট করা যাবে না, কারণ নির্দেশ না মেনে করলে টেস্ট কিটের অপচয় হবার সম্ভবনা রয়েছে| বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনা সংক্রমণ রুখতে একটাই উপায় টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট তাই সেই পথেই এবার হাঁটছে বাংলা| করোনার ফলে ডাকা লকডাউন অর্থহীন হয়ে যাবে যদি না বেশি সংখ্যায় টেস্ট করা হয়। অদ্ভুতবে, এ রাজ্যেই টেস্টের পরিমাণ সবচেয়ে কম বলেই অভিযোগ করছে বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের একাংশের তরফেও । হাওড়ার মতো জনবহুল জায়গায় মানুষ প্রবল আতঙ্কে ভুগছে, যদি করোনার প্রভাবে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয় তবে গোটা শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে| তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাই এবার র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানিয়েছেন, রাজ্যে ফের নতুন করে ১৬ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। অতএব, শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৮। অবশ্য নতুন আরও ৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছেন বরাহনগরের ৬৬ বছরের প্রবীণও, তিনি মার্চ মাসে প্রবল শ্বাসকষ্ট, জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন | রাজ্যে আরও দুই আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান মুখ্যসচিব। সেই অনুযায়ী রাজ্যের মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২। প্রসঙ্গত, করোনা-পজিটিভের সংখ্যা রাজ্যের জেলাগুলিতে কোথায় কম কোথায় বেশি, বা কোথায় একেবারেই নেই , কোথায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা জানতে এ বার ‘পুল টেস্টিং’য়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। শনিবারই এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। করোনা সংক্রমণের হার কম বা এখনও পর্যন্ত একজনও আক্রান্তের খবর মেলেনি, এমন এলাকায় উপসর্গবিহীন এমন পাঁচ ব্যক্তির শরীরের নমুনা এক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থান কোথায় তা বুঝতে বরাবরই বেশি টেস্টের পক্ষে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভারতের মতো জনবহুল দেশে প্রত্যেকের নমুনা পরীক্ষার যথাযথ পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা না থাকায় গত ১৪ এপ্রিল ‘পুল টেস্টিং’য়ের বিকল্প পথ দেখায় আইসিএমআর। দেশের সব রাজ্যকে বলা হয়, মাথাপিছু সোয়াব নমুনা আলাদা করে পরীক্ষা না করে একই কালচার-পটে অনেকের নমুনা মিলিয়ে সেই মিশ্র-নমুনা পরীক্ষা করা হোক। মিশ্র-নমুনার ফল নেগেটিভ এলে সে দলের কেউ যে সংক্রমিত নন, তা নিশ্চিত করা হবে| আর যদি সেই মিশ্র-নমুনার ফল পজিটিভ আসে, তখন ফের প্রত্যেকের নমুনা নিয়ে চিহ্নিত করতে হবে কে বা কারা আক্রান্ত। উল্লেখ্য, আইসিএমআর-এর ‘অ্যাডভাইজরি’ -র নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের যে সমস্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার কম, সেখানে ‘পুল-টেস্টিং’ শুরু করছে স্বাস্থ্য দফতর। কমিউনিটি সার্ভে এবং উপসর্গহীনদের মধ্যে টেস্ট করার সময় সময় সর্বোচ্চ ৫ জনের নমুনা একসঙ্গে সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায়|
১৯/০৪/২০২০
রিপোর্ট- রুমকি সরকার