ওয়াশিংটন: বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকহাজার। মহামারী করোনা ভাইরাসে রোজই প্রাণ যাচ্ছে কারওর। কিন্তু এই গল্প মনে জোর আনার। এই অভিজ্ঞতা মনের বল বাড়িয়ে দেওয়ার। এই কাহিনী জীবনের সব লড়াইয়ের দিশা দেখানোর। হ্যাঁ! এলিজাবেথ স্নেইডার। সেইরকমই এক গল্প শোনালেন। নজিরবহীনভাবে তুলে ধরলেন নিজের লড়াইয়ের চিত্র। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা এলিজাবেথ। ওয়াশিংটনেই তাঁর কাজ-বাস। তিনিই কিছুদিন আগে আক্রান্ত হন ভয়াবহ এই ভাইরাসে। শরীর খারাপের কিছুদিন পর জানতে পারেন তিনি এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত। সব আশা শেষ হয়ে যাবে। আর বাঁচবেন তো? একাধিক মানুষের মতো তাঁরও মৃত্যু হবে হয়তো?
এইরকমটা ভাবতে ভাবতেই চিকিৎসায় সাড়া দেন তিনি। সচেতন হিসেবেই, সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। শুধু সুস্থই না, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন এলিজাবেথ। বন্ধুদের অনুরোধে, নিজের লড়াইয়ের কাহিনী শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তা প্রকাশের পরই, বিশ্বজুড়ে প্রশংসার ঝড় ওঠে, এলিজাবেথের ভূমিকা নিয়ে।
এলিজাবেথ জানিয়েছেন, “আমার কোভিদ-১৯ এবং এই আমার কাহিনী। …আমি এই পোষ্টটি দিচ্ছি কারণ, একাধিক মানুষ, আমার বন্ধুরা অনুরোধ করেছেন। আমি আশা করি, এটা আপনাদের ভালকিছু তথ্য এবং মানসিক শান্তি দেবে।…
প্রথমত, আমি কীভাবে আক্রান্ত হলাম। আমি বিশ্বাস করি আমি একটি ছোট বাড়ির অনুষ্ঠান (পার্টি)-এ অংশ নিই, যেখানে কারওর কাশি, হাঁচি কিছুই উপসর্গ ছিল না।… আপনাদের বলছে, সব উপসর্গ এড়িয়ে যেতে, হাত ভালো করে ধুতে। আমি করেছি। আসলে, কোনও পথ নেই এই ভাইরাস মানব শরীরে না আসার। (ওই অনুষ্ঠানের) ৪০ শতাংশ গত তিনদিন যাবৎ জ্বর সর্দির মতো উপসর্গ নিয়ে ছিলেন।…
দ্বিতীয়ত, এই উপসর্গ আপনার বয়সের উপরও নির্ভর করে। আমার অনেক বন্ধু, যাঁদের ৪০ থেকে ৫০ বয়স তাঁদের এটা দেখা দিয়েছে। আমি আমার মধ্য তিরিশে আছি। …মাথা যন্ত্রণা, ৩ দিন ধরে জ্বর, জয়েন্ট পেন, ঝিমুনি, এগুলো ছিল। আমি জ্বরে ভুগছিলাম, আগের রাতে আমার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল, এবং এটা কমে ১০০ এবং ৯৯.৫ ডিগ্রিতে আসছিল। কারওর কারওর ডায়ারিয়া শুরু হয়। আমি বমিবমি ভাব অনুভব করি। জ্বর গিয়ে, নাক বন্ধ, গলা আটকে যাওয়া হাজির হয়। খুব কম সংখ্যক মানুষের খুশখুশে কাশি হতে থাকে। কারওর বুকে সমস্যা হতে থাকে। ১০-১৬ দিনের মোট অসুস্থতার পর্যায়। অনেকেই উপসর্গের কথা লুকিয়ে পরীক্ষা এড়িয়ে যান। আমি ফ্লু পরীক্ষা করায়। এটা একটা গবেষণা কার্যের মতো তাঁরা এই পরীক্ষা করান অনেকের। কয়েক সপ্তাহ আগে, এই কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষা সবার শুরু হয়। তাঁরা আমার নমুনা কিং কান্ট্রি হেলথ দফতরে পাঠান, তারপর তাঁদের রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়া যায়।…৯ মার্চ সোমবার, এই রোগের উপসর্গের ১৩ দিন পূর্ণ হয়। ৭২ ঘণ্টার বেশি জ্বর দিয়ে যা শুরু হয়। পাবলিক হেলথ দফতরের তরফে আইনসলেশনে রাখা হয় ৭ দিন। ….আমি কিন্তু ঘরেই ছিলাম, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। সব দেশে সবার এই রোগের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার চিন্তা নেই।… সিজন ফ্লু ভাক্সিন আর নিজের সতর্কতা ছিল আমার।… আমি বিশ্বাস করি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে না দেওয়ার ইচ্ছা, মানুষের মধ্যে এই রোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। উপসর্গ নিয়ে পার্টি বা ভিড়ে গিয়ে এই রোগ বাড়ছে। …আমি ভালো আছি, চাইব না কারওর এটা হোক। … আমার বিশ্বাস আমি নির্দিষ্টভাবে নাকের স্প্রে ব্যবহার করেছি, যার দরুন আমার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়নি। সাইনাস পরিস্কার করতে সুবিধা হয়েছে। …হাত ধোয়া নিশ্চিতভাবে আপনার এই রোগ প্রতিরোধ করে না । অনেকসময় কোনও উপসর্গ না থাকা ব্যক্তি আপনার সামনে থাকলেও বুঝতে সমস্যা হবে। … আপনি মারা যাবেন না। কিন্তু ৬০ বছরের বা কোনও প্রিয়জনকে এটা ছড়িয়ে দিতে চান? সুস্থ থাকুন সবাই!”
এলিজাবেথের এই বার্তার পর, তাজ্জব বনে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। যে ভাইরাস আতংকে তটস্থ বিশ্বের বহু দেশ। সেই ভাইরাস থেকে ফিরে আসার এই কাহিনী উদ্বুদ্ধ করছে প্রায় সকলকেই।
১৩.০৩.২০২০
ছবি: এলিজাবেথের ফেসবুক পেজ থেকে।