করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। যে ভাইরাস, চিনের হুবেইন থেকে বিস্তারলাভ করেছিল। তা আজ বিশ্বের ১৫০-র বেশি দেশকে আক্রান্ত করেছে। থাবা বসিয়েছে ভারতেও। এদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে কমপক্ষে ১১৪। রাজ্যে রাজ্যে পর্যবেক্ষণে কয়েকহাজার মানুষ। যদিও, এখনও পর্যন্ত খানিকটা স্বস্তির জায়গায় পশ্চিমবঙ্গ। কঠোর ব্যবস্থায়, কিছুটা আটকেছে এই ভাইরাস। কিন্তু গৃহবন্দি মানুষ, বাড়িতেই পড়ুয়ারা। বাড়ি বসেই দিনযাপন করছেন একটা বিরাট অংশ। তাই, ডাটা পেতে ডাটার ব্যবহার বাড়ছে তরতরিয়ে। ইন্টারনেটের কবলে পড়ে অবসর সময়ে মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন এই মারণ ভাইরাস সম্পর্কিত বিষয়। কখনও তা তুলসী পাতা খাওয়ার গুজব, কখনও কিছু ভালো। আদতে, ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি সার্চ হচ্ছে, করোনা ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে সেলিব্রিটি এখন তিনি-ই।
কিন্তু আপনি তো সিনেমা দেখেন? বিভিন্ন মাধ্যমে আপনার প্রিয় সিনেমা, ওয়েবসিরিজ দেখে সময় কাটান। কিন্তু জানেন কী! করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে এইমুহুর্তে সবচেয়ে বেশিবার দেখা হচ্ছে একটি সিনেমা। ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া, ব্লকবাস্টার হিট ওই সিনেমাটিই এইমুহুর্তে হারিয়ে দিচ্ছে সকলকে!
হ্যাঁ! স্টিভেন সোদার্ব্গ এঁর ‘কন্ট্যাজিয়ন’ সিনেমার কথা বলছি। যা এইসময়ে ‘টপসার্চ’। একটি ইংরেজি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, সমীক্ষা মোতাবেক; স্টিভেন পরিচালিত- ম্যাট ডেমন, মারিয়াম কোটিল্যার্ড, জুডি ল, জ্ঞানেথ প্যালট্রো, লরেন্স ফিসবুর্নে, কেট উইন্সলেট, জেনিফার এইলি অভিনীত এই ছবিই দেখার লিস্টে একেবারে প্রথম। যদিও ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া অন্যতম এই মেডিক্যাল থ্রিলার, ১৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যবসা করেছিল তখনও। ৬০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল এই মার্কিন এই ছবি তৈরিতে। যার প্রিমিয়ার হয়েছিল, ভেনিসের বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবে।
কেন এই ক্রেজ? হঠাৎ ৮ বছর পর এই ছবির এইভাবে ফিরে আসা? তার কারণ হিসেবে কেউ কেউ জানাচ্ছেন: মূলত, সমসাময়িক পরিস্থিতি। বিশেষত, মহামারীর এই সময়। যা একটি ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। মানুষ আতঙ্কে, বিশ্বের অবস্থা, ওই ভাইরাসের দরুণ অনেকটা সমস্যাগ্রস্থ। ‘কন্ট্যাজিওন’ ছবির প্লটেও এইরমভাবেই একটি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। যেখানে, ২০০৩-র ‘সার্স মহামারী,’ ২০০৯-র ‘ফ্লু মহামারী’-কে আধার করে পরিচালক তুলে ধরেন। একটি রোগ, তার ছড়িয়ে পড়া এবং তার প্রভাবে মানবীয় মানসিক অবস্থানের পরিবর্তনশীলতার হেরফের। একটি ভাইরাস কীভাবে সমাজকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে, কীভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে, তা দেখানোর পাশাপাশি একটি অসাধারণ টানটান রহস্যের কথা, এই সম্পূর্ণ সিনেমাতে দেখান পরিচালক।
মূলত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মত বিনিময়, বহুদিনের রিসার্চ ওয়ার্কের পর স্টিভেন এই সিনেমাটি বানান। যেখানে ‘এমইভি’ বা ‘মেভ’ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া এবং তাঁকে রোধ করার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মূলত প্লট হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বের বিরল এই মেডিক্যাল থ্রিলারটি শুরু হয় একটি কাহিনী থেকে যেখানে বেথ এমহফ নামে এক মহিলা বানিজ্যিক ভ্রমণ সেরে হংকং থেকে ফিরছেন। শিকাগো বিমানবন্দরে অপেক্ষার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তাঁর পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে যৌনমিলন হয়। মহিলা ফিরে যান। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর তিনি অসুস্থ হন। দু’দিন পর, হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। পরে বেথের সৎপুত্র ক্লার্ক মারা যায় একই ভাবে। তাঁর স্বামী মিচ আইসোলেশনে থাকার পর সুস্থভাবে বাড়ি ফেরেন, তাঁর মেয়ে জেরিকে নিয়ে।
এভাবেই সূত্রপাত এই সিনেমার। তারপর, ক্রমশ একে একে মরতে থাকে মানুষ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায় শিকাগো থেকে। এই জায়গাকে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করা হয়। একে একে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেও কীভাবে এটি হচ্ছে উদ্ধার করতে অপারগ হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। অবশেষে, অ্যালে হেক্সটাল নমে এক চিকিৎসক এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। মেভ-১ নামে এই ভাইরাস উদ্ভুত হয়। মূলত, শুকর ও বাঁদুর থেকে ছড়ায় এবং যে কোনও সংস্পর্শে এই ভাইরাস আক্রান্ত করতে পারে। এভাবে ভাইরাস এবং তাকে আটকানোর চেষ্টা। টিকা আবিষ্কার….। টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এই ছবিতে। পরিচালক, জনমানসে প্রত্যক্ষ বিস্তার লাভ করা একটি বিষয়কে, তুলে ধরেন অভিনব কৌশলে। যা, বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে।
অনেকেই বলছেন, ওই সিনেমার মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ আঁকড়ে নিতে চাইছেন যা পাচ্ছেন সেটাকেই। নিজেদের বিপর্যয়কে অনুভব করতে সক্ষম হচ্ছেন তাঁরা। তাই, নিজেদের ভাবনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়ের প্রতিফলনের স্বরূপ হিসেবে, আপন করছেন এই সিনেমাকে। আর এই কারণেই, ৮ বছর আগের তৈরি ছবি, ‘করোনা’র দৌলতে আবার চলে আসছে মানুষের সামনে। বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ লাভ করা ছবিটিকে, এই পরিস্থিতি ফের সবার সামনে তুলে ধরছে। যা এককথায় করোনা আতঙ্কের মধ্যেও, অভিনব বলেই মনে করছেন সিনেমা-প্রেমীরা।
১৭.০৩.২০২০
কলকাতা