করোনারোধে প্রতিষেধক আসতে পারে শীঘ্রই! সুখবর দিলেন অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি গবেষক।

কোভিড-১৯ রোধে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগোল এক মার্কিন সংস্থা। তবে এইকাজে আমেরিকা একা নয়, সঙ্গ দিল নরওয়েও। নরওয়ের ‘অসলো ইউনিভার্সিটি’র মেডিসিন বিভাগের বাঙালি গবেষক দীপঙ্কর মান্না , কথা বললেন আমাদের সঙ্গে। জানালেন বিস্তারিত। কীভাবে তৈরী হচ্ছে এই ভ্যাকসিন, কোনও আলোর দিশা দেখাতে পারবে কী মানবজাতিকে, সবিস্তারে জানালেন খবরওয়ালা টিভি.কম-কে।

প্রসঙ্গত, আরও একটি করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি শুরু করলো মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র। ‘ইনোভায়ো ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামক একটি সংস্থা, তাদের তৈরি এই করোনা ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছে ‘আইএনও –৪৮০০’। এটি একটি ডিএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন। জানুয়ারী মাসে চিন করোনা ভাইরাসের জিনগত তথ্য প্রকাশ করার পর থেকেই তারা এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করে। গত ৬ এপ্রিল ভ্যাকসিনটির প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয় ফিলাদেলফিয়ার, ‘পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিন’ এবং কানসাসের, ‘সেন্টার ফর ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ’ নামক দুটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। এখন পর্যন্ত এটি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ভ্যাকসিন যা মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত মার্চমাসে প্রথম পরীক্ষাটি শুরু করেছিল ‘মডার্না থেরাপিউটিকস’ নামক অপর একটি মার্কিন সংস্থা।

প্রাথমিক পর্যায়ে দুটি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোট ৪০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। এই প্রতিষেধক পরীক্ষা পদ্ধতিতে, প্রত্যেকটি, স্বেচ্ছাসেবকে চার সপ্তাহের ব্যাবধানে দুটি করে ‘ডোজ’ দেওয়া হবে। তারপর তাঁদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রত্যাশিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করে দেখা হবে। প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সংস্থাটি দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করবে, যেখানে একহাজার

বা তারও বেশি সংখ্যক মানুষের দেহে ‘ভ্যাকসিনটি’ প্রয়োগ করে দেখা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসন বা এফডিএ সম্প্রতি, প্রথম পর্যায়ে মানব পরীক্ষার জন্য ইনোভায়োর আবেদন অনুমোদন করেছে। এফডিএকে দেওয়া আবেদনপত্রে, সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে ইঁদুরের দেহে করা সমস্থ পরীক্ষামূলক তথ্য সরবরাহ করেছিল, যা রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াগুলি “প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” মনে করা হয়েছে।

ছোট্ট এই সংস্থাটি প্রায় এক ডজন ভ্যাকসিন সংস্থাগুলির মধ্যে একটি অন্যতম, যা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। ইনোভায়োর তৈরি ভ্যাকসিনটি একটি আদর্শ ডিএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন যা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। অপরদিকে মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনে করে, ‘ঢ্য আরএনএ’-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

নোভায়ো ফার্মাসিউটিক্যালস, করোনা ভ্যাকসিন ছাড়াও আরও কমপক্ষে ১৫ টি ভিন্ন ধরনের ডিএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি’ সিন্ড্রোম বা এসএআরএস এবং ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম’ বা এমইআরএস। তবে করোনা ভ্যাকসিন ছাড়া অন্যান্য কোনটাই এখনও পরীক্ষার জন্য ছাড়পত্র পায়নি।

দীপঙ্কর মান্না।

ভ্যাকসিনটির প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হলেও এখনই তা বাজারে আসা সম্ভভ নয়। বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করে ভ্যাকসিনটি বাজারে আসতে অন্ততপক্ষে আরও ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে।

করোনা ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নরওয়ের একটি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ‘কোয়ালিশান ফর এপিডেমিক এন্ড ইনোভেসান ইনোভিও’কে ৯০ লক্ষ মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। এমনকি সংস্থাটি ‘বিল’ এবং ‘মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ থেকেও ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার সাহায্য পেয়েছে।

গত ১০ সপ্তাহের মধ্যে, সংস্থাটি প্রথম পর্যায় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য কয়েকহাজার ভ্যাকসিন ডোজ তৈরি করে ফেলেছে। পরবর্তী পর্যায়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা ও জরুরি ব্যবহারের জন্য বছরের শেষের দিকে আরও ১০ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

১৩.০৪.২০২০

দীপঙ্কর মান্না, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়