‘ওঁর চাকরি যাক চাই না,মেট্রো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অবাক হয়েছি,’ মন্তব্য অভিযোগকারী তরুণীর।

কলকাতা: বৃহস্পতিবার সকাল। রোজাকার মতো তিনিও যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। টালিগঞ্জ থেকে ময়দান যাবেন তিনি। প্রতিদিন মেট্রো করেই যাতায়াত তাঁর। কিন্তু এদিন গোল বাঁধল। ময়দান নেমেই পড়লেন মহাবিপদে। বেরোনোর গেটে টোকেন দিলেও গেট খুলছে না! পুলিশের সাহায্য চাইতেই উঠে এল ‘পেনাল্টি’ দেওয়ার নিদান। কারণ, তিনি নাকি ১৫ টাকা ভাড়ার টোকেন না নিয়ে, নিয়েছেন ৫ টাকার টোকেন।

শুরু হয় তর্কাতর্কি। মহিলা যাত্রী প্রতিবাদ করতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, তাঁর তরফে সঠিক ভাড়া দিলেও, টিকিট কাউন্টারের এক কর্মী এই কাজ করেছেন ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবে। কেন?

এখানেই কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ! ওই মহিলা যাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী জানা যায়, টালিগঞ্জ মেট্রোর টিকিট কাউন্টারের এক পুরুষকর্মী নাকি নিয়মিত অশালীন ইঙ্গিত করেন তাঁকে। শুধু তাঁকে নয়, অনেক মহিলা যাত্রীর সঙ্গেই নাকি এমন করেন তিনি। এদিনও টোকেন দেওয়ার নামে হতে হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ, ওই কর্মী ইচ্ছা করেই তাঁকে কম টাকার টোকেন দিয়েছেন। খোঁজ নেওয়া হয় টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে। ওই মহিলা যাত্রীর দাবি, তারপর নাকি জানা যায়, ১০ টাকা অতিরিক্ত আছে ওই কাউন্টারে। অর্থাৎ তিনি ১৫ টাকা দিলেও তাঁকে টোকেন দেওয়া হয় ৫ টাকার!

প্রতিবাদ করেন ওই যাত্রী। পাশে দাঁড়ান তাঁর পরিচিত সহকর্মীর কয়েকজন। টালিগঞ্জ স্টেমশনের মাস্টারের সাহায্যে, অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখানে কোনওরকম ‘শারিরীক হেনস্থা’র কথা উল্লেখ করেননি তিনি। অভিযোগকারিণীর দাবি, রেলের ‘রুলবুক’ অনুযায়ী, তিনি এইরকম লিখলে ওই কর্মীর চাকরি যেতে পারে, একটা সুযোগ দেওয়া হল, ‘ওর চাকরি যাক চাই না।’ তবে এর পাশাপাশি, মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। ‘খবরওয়ালা’কে বলেন, ‘আমি সমস্যায় পড়ার পর আধিকারিকদের ফোন করি, জনসংযোগ বিভাগের আধিকারিককেও ফোন করি, কিন্তু বলা হয় আপনি ডিসপ্লে বোর্ড দেখে নেননি কেন? তারপর এতকিছু ঘটলেও, এখনও একটা ফোন বা মেসেজ করেও কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি, এত উদাসীন কর্তৃপক্ষ দেখে অবাক হচ্ছি।’

যদিও এই ঘটনার পর কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রানী ভট্টাচার্যকে প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাদের তরফে ফোন, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও, বহু ঘণ্টার পরেও, এই বিষয়ে তাঁর কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।।

এদিকে, এই ঘটনার পর, ফের মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে কলকাতা মেট্রোর পরিষেবা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। একজন যাত্রীর এহেন ‘হেনস্তা’ হওয়ার অভিযোগ, খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না কলকাতা মেট্রোকে। মেট্রোর ঊর্ধ্বতন কতৃর্প‌ক্ষের তরফে যে উদাসীনতার কথা ওই অভিযোগকারিণী করছেন, তা যদি সঠিক হয় তাহলে তা বেশ চিন্তার বলেই, মনে করছেন নিত্যযাত্রীদের একাংশ। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, ‘টোকেন ভুল দেওয়া আর ইচ্ছা করে সেই কাজ করা, সঙ্গে মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিকর কিছু করা গর্হিত অপরাধ, কর্তৃপক্ষের ওই মহিলার ফোন পেয়েই সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, তাহলে মেট্রোর প্রতি মানুষের ভরসা এবং ভাবমূর্তি বাড়তে পারত আরও।’ আবার কেউ বলছেন, ‘টোকেন ভুল হতেই পারে, তিনিই বলছেন ওই কর্মী ক্ষমা চেয়েছেন কিন্তু যদি এতবড় হেনস্থার অভিযোগ তিনি মৌখিকভাবে আনেন তাহলে সেটা লিখিত অভিযোগপত্রে নেই কেন?’

এই বিষয়ে অভিযোগকারিণী বলছেন, ওই কর্মীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই শারীরিক হেনস্থার কথা লিখিনি, অভিযোগপত্রে। তবে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্ট, তাতে ৪ টি ভিডিওর মধ্যেও কিন্তু ওই অভিযুক্ত মেট্রোকর্মীর ছবি এবং নাম জ্বলজ্বল করছে।

ওই মহিলা যাত্রী পেশায় সংবাদমাধ্যমের কর্মী বলে জানা গিয়েছে। এখন দেখার, একজন মহিলা যাত্রীর সঙ্গেই এহেন আচর এবং এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয় কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

১৩.০৩.২০২০

কলকাতা