একবার ২২ জানুয়ারি! তারপর ১ ফেব্রুয়ারি! অবশেষে ৩ মার্চ! তারপর ২০ মার্চ! এগুলো ৭ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির তারিখ। প্রথম তিনটি দিন, তারিখ পে তারিখের যাঁতাকলে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে দিন ধার্য হয়েছে ২০ মার্চ, সকাল ৫.৩০ মিনিট। তিহার জেলে এই ফাঁসির ঘটনা যখন প্রায় নিশ্চিত হতে চলেছে, তখন নতুন বাহানা খুঁজে বের করল এক অপরাধী মুকেশ সিং। দিল্লির আদালতে তার আইনজীবী এক আজব দাবি করে বসলেন।
তিনি বললেন, দিল্লির ওই ঘটনার সময় নাকি মুকেশ উপস্থিতই ছিলেন না। তিনি তখন ছিলেন রাজস্থানে। যদিও ‘ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়া’র এই নতুন অজুহাতে বেশ ‘অবাক’ আইন মহলের একাংশ!
যদিও, আদালতে ওই আইনজীবী তাঁর মক্কেলের
হয়ে এই দাবি করেন। এদিকে, রাজস্থানে থাকাকালীন মুকেশ সিং গ্রেফতার হয়। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয় রাজস্থান থেকে। আর দিল্লির ঘটনাটি ঘটে, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যদিও এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী। এমনই জানা গিয়েছে, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে।সামগ্রিকভাবে সব ঠিক থাকলে, ২০ মার্চ ভোরেই ফাঁসিতে ঝুলতে পারে ওই চার অপরাধী।
প্রসঙ্গত, চার আসামির তিনজন অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্তা এবং মুখেশ সিং, নিজেদের ফাঁসি স্থগিতের জন্য আগেও আবেদন করেন দিল্লির পাতিয়ালা আদালতে। সেই আবেদনই ৩ মার্চের ফাঁসির তারিখের আগে খারিজ করে আদালত। এদিকে আরেক আসামি পবন গুপ্তার করা, কিউরেটিভ পিটিশনও খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। যার ফলে, প্রথমত ৩ মার্চের ফাঁসির ক্ষেত্রে তেমন কোনও বাধা থাকে না। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলে ওই তারিখেই তিহার জেলে ফাঁসি হতে পারত ওই চারজনের। কিন্তু তারপর জানা যায়, রাষ্ট্রপতির কাছে রয়েছে একজন অপরাধীর প্রাণভিক্ষার আবেদন। সেই আবেদন সম্প্রতি
নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি।
যদিও এই ফাঁসির তারিখ বারবার পিছিয়ে যাওয়ার পর, স্বভাবতই অখুশি হয় নির্ভয়ার পরিবার। যদিও নির্ভয়ার মা আশা দেবী বারবার আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপর্ব ও শাস্তির এই দেরি নিয়ে। কিন্তু আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারপর ২০ মার্চ ফাঁসির দিনধার্য করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, চিকিৎসাশাস্ত্রে পাঠরত ছাত্রী, তাঁর বন্ধুর সঙ্গে ফিরছিলেন। দিল্লিতেই চলন্ত বাসে নৃশংস ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। অকথ্য অত্যাচারের ফলে, কিছুদিন পর, ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় ২৩ বছরের ওই নির্যাতিতার। এই ঘটনার পর, উত্তাল হয় গোটা দেশ। আইন সংশোধনে বাধ্য হয় সরকার। তারপর বদলে যায় সবালকত্বের সংজ্ঞা। গ্রেফতার
হয় ৬ অভিযুক্ত। দ্রুত বিচার শুরু হয়। একজন নাবালক হিসেবে গণ্য হয়ে ছাড়া পায়। রাম সিং নামে, আরেকজন জেলেই আত্মহত্যা করে। বাকি থাকা চারজনের বিচার চলতে থাকে। কিন্তু তা নিয়েও দেরির অভিযোগ ওঠে বারবার। বন্দীরা বারবার আবেদন করতে থাকে আদালতে, আবার কখনও রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু এক এক করে বারবার খারিজ করা হয় সব আবেদন। অবশেষে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে আদালত। ২০২০-র ২২ জানুয়ারি, ফাঁসির দিন ধার্য হলেও তা পিছিয়ে যায়। ফের দিন ধার্য হয় ১ মার্চ। আবার পিছিয়ে যায় দিন। তারপর, ৩ মার্চ ধার্য করা হয়। কিন্তু তাতেও বাঁধে আবেদনের গেরো। কিন্তু দেশবাসীর আশা, আর থাকবে না কোনও বাধা, আগামী ২০ মার্চই হতে পারে ফাঁসি।
১৭.০৩.২০২০